Advertisment

মহালয়ার দিন কেন মনে আঘাত পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র?

"আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কিছুই জানান নি দাদুকে। আমরা কানোঘুষো শুনে জানতে পারি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আর বাজবে না। নতুনভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mahalaya 2019 birendra krishna মহিষাসুরমর্দিনী মহালয়া

রেকর্ডিং করছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ছবি সৌজন্য: আকাশবাণী কলকাতা

মহালয়ার ভোরে আমবাঙালির ঘুম ভাঙে শাঁখের ধ্বনি, তবলা, আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠে। আধো ঘুমে রেডিওতে কান পাতা বাঙালির এক শাশ্বত অধ্যায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। যে অনুষ্ঠান শুনে বাঙালির মনে আজও বেজে ওঠে আগমনীর সুর। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের স্তোত্রপাঠের গাম্ভীর্যে মুখরিত হয়ে ওঠেন তাঁরা। হাজারো লড়াই ছাপিয়ে এখানে বাঙালির কোনো বিভেদ নেই। এমনই এই বেতার অনুষ্ঠানের মাহাত্ম্য, যে আপামর বাঙালি চিরকালই রেডিওর ভোরের এই অনুষ্ঠানকে 'মহালয়া' বলে উল্লেখ করে থাকেন, যখন আমরা সকলেই জানি যে মহালয়া হলো তিথি। পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। আর এই দেবীপক্ষের আগমনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকেন যিনি, তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

Advertisment

আকাশবাণী কলকাতার এই প্রাণপুরুষের নাতি সায়ন ভদ্র দাদুর স্মৃতিচারণ করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে। ১৯৭২ সালের পর থেকে নিজেই নিজের রেকর্ড শুনতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। সায়ন বলেন, "স্তোত্রপাঠের সময় আবেগে যখন তাঁর গলা বুজে আসত, তখন দাদুর চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ত। শুনতে শুনতেই দাদু আবেগাচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন। দাদু বাঙালির কাছে যে ঠিক কী, তখন অনুভব করতে পারি নি। দাদু-নাতি সম্পর্ক যেমন হয়, আমাদেরও তাই ছিল। পরবর্তীকালে বুঝতে পারি, আপামর বাঙালির কাছে দাদুর পরিচয় কী। এককালে ভাবতাম, আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি। কিন্তু তা হয় নি। যত দিন গেছে, কদর বেড়েছে, কমে নি।"

আরও পড়ুন: Mahalaya 2019: মহালয়ার দিনক্ষণ, ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা 

প্রথম দিকে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না, তখন লাইভ অনুষ্ঠান হত। শুরুটা ১৯৩২-এর ষষ্ঠীর ভোরে। সায়ন বলেন, "অনেকেই মনে করেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যেহেতু স্তোত্রপাঠ করতেন, সেহেতু তিনি পুজো অর্চনা করেই দিন কাটাতেন। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। শুধু মহালয়ার দিন রেডিওতেই চন্ডীপাঠ করতেন তিনি। চিরকাল নতুনের পক্ষে ছিলেন। ১৯৭৬ সালে অভিনেতা উত্তম কুমার ‘দুর্গা দুর্গতিহারিনী’ করায় একটুও দুঃখ পাননি দাদু। কারণ দাদু মনে করতেন, সবাইকে জায়গা দেওয়া উচিত, নতুন প্রজন্মকে সুযোগ করে দেওয়া উচিত।"

আরও পড়ুন: রেডিও নেই? চিন্তা কীসের, অ্যাপেই শুনুন মহালয়া

সায়ন আরও বলেন, "সেবছর, মহালয়ার রাতে উত্তমকুমার হাতিবাগানের বাড়িতে দাদুর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে অনুমতি নিয়ে যান। দাদু এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিমত করেন নি। কিন্তু আঘাত পেয়েছিলেন আকাশবাণী কর্তৃপক্ষের ব্যবহারে। নায়কের চাহিদা তখন তুঙ্গে, অল ইন্ডিয়া রেডিও কর্তৃপক্ষ ভাবলেন এতে রেডিওর জনপ্রিয়তা বাড়বে। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কিছুই জানান নি দাদুকে। আমরা কানাঘুষো শুনে জানতে পারি, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আর বাজবে না। নতুনভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

"‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর বারবার ফোন আসতে থাকে ভদ্র পরিবারের কাছে। সবার প্রশ্ন ছিল, কেন অনুমতি দিলেন? দাদু একটাই কথা বলেন, সবাইকে জায়গা করে দেওয়া উচিত। একটা সময়ের পর ফোনের রিসিভার পাশে নামিয়ে রাখা হয়। শ্রোতাদের দাবি মেনে পুনরায় বাজানো হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পিসি, দিদা, দাদুর সঙ্গে বসে মহালয়ার দিন ভোরবেলা রেডিও চালিয়ে শুনতাম। দাদু বেঁচে থাকাকালীন আর পাঁচটা বাড়ির মত এ বাড়িতেও তরতাজা ছিল সেই রেওয়াজ। কিন্তু আজ আর তা নেই। গত বছরই যেমন রেডিওয় শোনা হয়ে ওঠে নি ‘মহিষাসুরমর্দিনী'। পরে ইউটিউবে চালিয়েছিলাম। তবে কাকভোরেই কানে এসেছে দাদুর স্তোত্রপাঠ আর রেডিওর ঘড়ঘড়ানি শব্দ, আধো ঘুমে-আধো জেগে থাকা পাড়া থেকে।"

kolkata news Durga Puja 2019
Advertisment