এ যেন নববর্ষের উপহার। নতুন বছর থেকে ওঁরা আরও ১২টা ছুটি পাচ্ছেন। এবং এ ছুটি অনেকটাই ব্যতিক্রমী, বলা ভাল 'স্পেশাল'। প্রতি মাসে ওই দিনটা এলে ওঁরা এবার নিশ্চিন্তে অফিস থেকে ছুটি নিতে পারবেন। পিরিয়ডসের কষ্ট মুখ বুজে সয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ওঁদের আর অফিস ছুটতে হবে না কিংবা ঋতুকালে ছুটির দরবার করার জন্য বসের কাছে 'কিন্তু কিন্তু' করতেও হবে না। মাসের সেদিন নি:সঙ্কোচে ছুটি নিতে পারবেন ওঁরা। ঋতুমতী মহিলাদের জন্য এবার সেরকমই ছুটির ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্ত তৈরি করল কলকাতার একটি সংস্থা।
প্রতি মাসে একটি করে ঋতুকালীন ছুটি পাবেন মহিলা কর্মীরা। এমন অভিনব সিদ্ধান্তই নিয়েছে 'ফ্লাইমাইবিজ' নামে এ শহরের একটি ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি, যার বয়স মাত্র এক বছর। এ প্রসঙ্গে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সাম্য দত্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আমার কোম্পানিতে যেসব মহিলা কর্মী রয়েছেন, তাঁরা অন্য ছুটির পাশাপাশি ঋতুকালে প্রতি মাসে একটি করে বাড়তি ছুটি পাবেন। অর্থাৎ বছরে ১২টি করে ঋতুকালীন ছুটি পাবেন মহিলা কর্মীরা। আগামী জানুয়ারি থেকেই এই ছুটি চালু করছি।"
নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত। তবে সাম্য বলছেন, "অত ভেবে করি নি। আমার কর্মীদের ভাল রাখা আমার দায়িত্ব। আমার কর্মীরা ভাল থাকলে আমিও ভাল থাকব।" তাঁর দাবি, "এ রাজ্যে আমরাই প্রথম অফিসে এ ধরনের ছুটি চালু করছি। মুম্বইয়ে দুটি ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানিতে মহিলাদের জন্য এ ধরনের ছুটির চল রয়েছে। সেদিক থেকে আমরা দেশে তিন নম্বর কোম্পানি, যারা এমন উদ্যোগ নিল।"
আরও পড়ুন: দুর্গারও ঋতুস্রাব, অনিকেতের ছবির বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ
মহিলাকর্মীদের জন্য হঠাৎ এমন ভাবনা কেন? সংস্থার কর্ণধারের সাফ জবাব, "কাউকে দয়া করছি না। ওই তিনটে দিন ওঁদের যে মানসিক ও শারীরিক কষ্ট হয়, সেজন্য ওঁরা কোনওভাবে দায়ী নন। সকলেই জানেন এটা, খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাও কেউ এগিয়ে আসেন না। এটা এখনও সামাজিক ট্যাবু। তাছাড়া, এই সমাজে তো মেয়েদের সঙ্গে অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। সেখানে আমরা তো কিছুই করতে পারি না, শুধু ভাবতে পারি আর ফেসবুকে দুটো কথা বলতে পারি। তাই মেয়েদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করলাম মাত্র।"
বড়দিনের পরই কর্মীদের এই ছুটির ঘোষণা করেছেন সাম্য। এমন ছুটি নিয়ে কী বলছেন কর্মীরা? তিনি বললেন, "আমার সংস্থায় এই মুহূর্তে ১২ জন মহিলা কর্মী রয়েছেন। ওঁরা একথা শুনে খুব খুশি হয়েছেন। পুরুষকর্মীরাও খুব খুশি এই ছুটি নিয়ে। ওঁদের মধ্যে অনেকেই আগে বহু কোম্পানিতে কাজ করেছেন। কিন্তু এমন ছুটি মিলতে পারে, তা ওঁরা কখনও ভাবতে পারেন নি।"
ঋতুকালীন ছুটি পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত সংস্থার মহিলা কর্মীরা। ইরম মোনির নামে এক কর্মী বললেন, ‘‘খুব উপকার হয়েছে এই ছুটি পেয়ে। খুব দরকার ছিল এই ছুটির।’’ সংস্থার অ্যাডমিন হেড রিনা মল্লিক বললেন, ‘‘খুব গর্ববোধ করছি এমন সংস্থায় কাজ করতে পেরে। মহিলাদের জন্য এই ছুটি খুব দরকার। প্রথম আমাদের সংস্থায় এমন ছুটি দেওয়া হল। আমরা সকলে খুব খুশি।’’ অন্যদিকে, ঋতুকালে মহিলাকর্মীদের অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া নিয়ে মোটেও ‘ক্ষোভ’ নেই পুরুষকর্মীদের মধ্যে। অর্ঘ্য শী নামের এক কর্মী বললেন, ‘‘আমরা সকলেই খুশি। মহিলাদের জন্য এই ছুটির খুব প্রয়োজন ছিল। ওঁরা মানসিক শান্তি পেলেন। পুরুষদের মধ্যে এ নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই।’’
আরও পড়ুন: শবরীমালায় অশান্তি জারি, দুই মহিলাকে মন্দির চত্বরে প্রবেশে বাধা
মহিলাকর্মীদের জন্য একদিকে যেমন ঋতুকালীন ছুটি চালু হচ্ছে শহরের ওই সংস্থায়, তেমনি ওদিকে শবরীমালা ইস্যুতে উত্তাল হচ্ছে কেরালা। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পরও আয়াপ্পা দর্শনে ঋতুমতী মহিলাদের পথ আটকানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাম্যর প্রতিক্রিয়া, "ভগবানকে ঘরে বসে ডাকার অধিকার যদি সবার থাকে, তাহলে মন্দিরে যাওয়ারও অধিকার সকলের রয়েছে...ঋতুমতী মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার নিয়ম যাঁরা করেছেন, তাঁরা আসলে তাঁদের মায়েদের সঙ্গে অবিচার করছেন।"
শুধু ঋতুকালীন ছুটিই নয়, আগামী দিনে তাঁর অফিসে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনও বসানোর ভাবনা রয়েছে সাম্যর। এ প্রসঙ্গে 'ফ্লাইমাইবিজ'-এর প্রতিষ্ঠাতা জানালেন, "আগামী মাস থেকে আমার অফিসে ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখব। হয়তো ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন এখনই বসাব না। তবে ন্যাপকিনের ব্যবস্থা থাকবে। কারণ, অফিসে কফি মেশিন, জলের জার, এসির যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমন এটারও দরকার রয়েছে।"