ফিরোজ আহমেদ: অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত বর্ষার হাত ধরে মাস পয়লায় বাজারে আসছে এ মরশুমের প্রথম টাটকা ইলিশ। আবহাওয়া অনুকূল হতেই সারি সারি ট্রলার ইলিশের খোঁজে গভীর সুমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে।এমনই আশার কথা শুনিয়েছেন সুন্দরবন মৎস্যজীবী ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে। বর্ষার ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে পুবালি হাওয়ার ধাক্কায় দলে দলে ইলিশের ঝাঁক ফের সাগরে ফিরে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে সাগরের ইলিশ বাজারে আসতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। “
সামুদ্রিক মাছের প্রজননের জন্য গত ১৫ এপ্রিল থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। তা চলেছে একেবারে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। এর পর ১৬ জুন সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, কুলতলি থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু পাড়ি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খারাপ আবহাওয়া সতর্কবার্তা চলে আসে। অনেক ট্রলার সমুদ্রের গভীরে ঢুকেও পড়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে খালি হাতে উপকূলে ফিরতে হয়েছিল। ফিরে আসার কারণে লোকসানের মুখে পড়তে হয় ট্রলারগুলি। কারণ এই মুহূর্তে ট্রলারের জ্বালানি ডিজেলের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এছাড়া প্রতি ট্রিপে মাছ– সংরক্ষণের জন্য বরফ, মৎস্যজীবীদের জন্য খাবার মিলিয়ে খরচ প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ট্রলার ফিরে আসায় মরশুমের শুরুতেই লোকসানে পড়তে হয় ট্রলার মালিকদের। মৎস্যজীবীদেরও খালি হাতে ফিরতে হয়। তবে জুলাইয়ের শেষ থেকে আবহাওয়ার গতিক বদলাতে থাকে।
আরও পড়ুন, গ্রামবাংলার পরিবেশে বর্ষার এবং ইলিশের গন্ধে মেতে উঠুন
এখনো পর্যন্ত হাতে গোনা যা ইলিশ ধরা পড়েছে, তা গতবারের তুলনায় আকারে অনেকটা বড়। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ। পাইকারি বাজারে যার দাম এখন প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকা। তবে জোগান বাড়লে দাম আরও কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন মৎস্যজীবীরা। জেলার মেরিন আধিকারিক সুরজিৎ বাগ বলেন, “মাছ ধরা বন্ধ থাকার জন্য ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই কারণে সাতশো ও আটশো বেশি পাওয়া যাবে বলে ধারণা।“
ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্রবাজার আড়ৎমালিকরা আশা করছেন গত বছরের মতো এবারও প্রচুর ইলিশ হবে ।গত বছর ইলিশের পাইকারি দর ছিল ৪০০ -৫০০ টাকা প্রতি কেজি, খুচরো দাম ৭০০ টাকা। মৎস্যজীবীদের আশা,আবহওয়া ভালো হলে প্রচুর ইলিশের জোগান দিতে পারবেন তাঁরা, ফলে দামও কমবে। কাটবে ইলিশ খরা। ভাজা থেকে ভাপা ইলিশের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকা আমবাঙালির পাত ভরে উঠবে।