Mangal Shobhayatra: A Cultural Procession Born from Protest Now Faces Identity Crisis in Independent Bangladesh: ফের নামবদলের জেরে বিতর্কের কেন্দ্রে বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলাদেশের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রথম আয়োজিত হয়েছিল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ওই শোভাযাত্রায় কাঠের পুতুলনাচ, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্র-সহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয়। সামরিক শাসনের শিকল ভাঙার ডাক দিয়ে ১৯৮৯ সালের ১লা বৈশাখ, ১৩৯৬ বঙ্গাব্দে প্রথমবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল চারুকলা অনুষদ। এর নাম প্রথমে ছিল, 'আনন্দ শোভাযাত্রা'। সংগীতশিল্পী ওয়াহিদুল হক ও ভাষা সৈনিক এমদাদুল হোসেনের প্রস্তাবে ১৯৯০ সালে এই শোভাযাত্রার নামকরণ করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে এই শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। যার জেরে এই শোভাযাত্রা বাংলাদেশের ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
প্রতিবার ১লা বৈশাখের সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ দিয়ে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ওই শোভাযাত্রা। যার জেরে শাহবাগ এলাকা ভিড়ে গিজগিজ করে। ঢাকের তালে শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে শোভাযাত্রা টিএসসিতে শেষ হয়। এবারের শোভাযাত্রার থিম, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। গত বছর জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে যে ‘ফ্যাসিবাদকে’ বিদায় জানানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থান রোখার বার্তা এবারের শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ। শোভাযাত্রার মোটিফ প্রায় ২০ ফুট উঁচু স্বৈরাচারের প্রতীক দৈত্য। সঙ্গে, ১৬ ফুট উঁচু ইলিশ মাছ, সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যশালী কাঠের বাঘ আর শান্তির দূত পায়রা, হাতি, বাঘ, পেঁচা, পশুপাখির মুখোশ শোভাযাত্রার আকর্ষণ। চারুকলার সীমানা প্রাচীর সেজেছে রাজশাহির ঐতিহ্যশালী হাঁড়ির নকশায়। ফুল-পাখি-লতাপাতায় সেজেছে দেওয়াল।
এবার শোভাযাত্রার নাম বদলে করা হয়েছে, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। কারণ, বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন জানিয়েছে, নামে ‘মঙ্গল’ থাকা চলবে না। শোভাযাত্রায় মঙ্গলের ধারণা, ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ। শোভাযাত্রায় মূর্তি-সহ অ-ইসলামিক সবই বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। ইসলামি সংগঠনগুলোর অভিযোগ, মঙ্গল শোভাযাত্রা আসলে হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধারণা থেকে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা করেন। সেই ধারণাই সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধী ইসলামিক সংগঠনগুলো।
আরও পড়ুন- পয়লা বৈশাখের সকালে করুন এই কাজগুলো, সারা বছর ঘরে সুখ সমৃদ্ধি উপচে পড়বে
তবে, ইসলামিক সংগঠনগুলোর এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। রবিবার সকালে চারুকলা অনুষদে এক সাংবাদিক বৈঠকে শোভাযাত্রার আয়োজক কমিটির প্রতি ওই শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চারুকলার শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই গৃহীত এই সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি নন। সিনেটের যে সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন।