হালখাতা শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা লাল রঙের মোটা খাতা। সামনের পাতায় সিঁদুর দিয়ে বড় করে আঁকা স্বস্তিকা চিহ্ন। বছরের পর বছর পয়লা বৈশাখের দিন এই ছবি সব বাঙালিদের খুব চেনা। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালখাতা আজকাল হাল-ফ্যাশনের কার্ড হয়ে গেছে। সেই কার্ডের নেমন্তন্নে সাড়া দিয়ে খদ্দেররা আসেন তাঁদের বার্ষিক বকেয়া শোধ করতে। সামর্থ্য অনুযায়ী শোধ দেন। মিষ্টিমুখ করেন। এতে আরো মধুর হয়ে ওঠে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের রসায়ন। ঐতিহ্যের এই আয়োজন ধরে রাখতে ক্রেতার আগ্রহে প্রতিবছর সাড়া দিতে উন্মুখ থাকেন বিক্রেতারাও। পুরোন হিসাব নতুন করে হালনাগাদ করার আয়োজনই হল হালখাতা।
Advertisment
আকবরের সময়কাল থেকে এই খেরোর খাতা তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপরে ব্রিটিশ শাসনকালে জমিদারদের খাজনার হিসেব নিকেশ করার জন্যে এই খাতা ব্যবহার করা হত। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
সেই সময়ে মূলত এই খেরোর খাতা তৈরি করা হত বাংলাদেশে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই খেরোর খাতা তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা কলকাতায় এসে কাজ করতে শুরু করে। বৈশাখ মাস পড়ার ছ মাস আগেই তাঁরা কলকাতায় চলে আসতেন। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
হালখাতা শব্দটা তৈরি হয়েছে দুটো আরবি শব্দ মিলে তৈরি। ‘হাল’, মানে চলতি এবং ‘খাতা’, যার অর্থ হিসাবের বই। অবিভক্ত ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন আমলেই এই শব্দদ্বয় মিশে যায় বাঙালির জীবনে। হালখাতা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে। বছরের প্রথম দিন জমিদারদের খাজনা দেওয়ার রেওয়াজ করেছিল ব্রিটিশরা।
খেরোর খাতা কীভাবে বানাতে হয় কলকাতার শ্রমিকদের তা শেখাতেন তাঁরা। পয়লা বৈশাখের দিন সকালে স্বভূমে ফিরে যেতেন তাঁরা। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
এখন খেরোর খাতা তৈরি হয়না বললেই চলে, এখনও সে কাজ জানা শ্রমিক মেলে না শহর কলকাতায়। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
কলকাতা শহরে খেরোর খাতা তৈরির কাজ চলে মাত্র দেড় মাস।(EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
ব্রিটিশরা। সারা বছরের লেনদেনের হিসাব মেলানোর সাথে কৃষকদের মিষ্টিমুখ করানো হত। এই খাজনা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতাই পরিচিত হয়ে যায় হালখাতা নামে। এখন সময় বদলেছে। হালখাতারও বিবর্তন হয়েছে। কালের নিয়মে খাতার পরিবর্তন হতে হতে এখন কম্পিউটারে এসে থেমেছে।
সব শ্রমিকই চুক্তিবদ্ধভাবে কাজ করেন। প্রায় দেড় মাস কাজের জন্য তাঁরা পারিশ্রমিক পান ১৬ থেকে ২২ হাজার টাকা। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
এখন যে সব শ্রমিকরা খেরোর খাতার কাজ করেন তাঁরা কেউই সারা বছর ধরে এ কাজ করেন না। এঁদের কারও বাড়ি জয়নগর আবার কারও পাণ্ডুয়া। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
এই সব শ্রমিকরা কেউ দিনমজুর, কেউ আবার চাষি। পয়লা বৈশাখের আগে ৪৪ দিনের জন্যে একটু বেশি আয়ের আশায়, এঁরা কলকাতায় চলে আসেন। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
মহম্মদ রহিম এই খেরোর খাতার শ্রমিকদের জোগাড় করে আনেন এবং কলকাতায় নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ দেন। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং খেরোর খাতার চাহিদা কমে যাওয়াতে এই বছরই শেষ হচ্ছে খেরোর খাতা বানানোর কাজ। আগামী বছর থেকে শালু দিয়ে বানানো হবে হালখাতা। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
উত্তরপ্রদেশ থেকে এই খেরোর খাতার কাপড় নিয়ে আসা হত। প্রথম দিকে এই কাপড় তৈরি হত হাতে। পরবর্তীকালে এই কাপড় তৈরির জন্যে মেশিনের ব্যবহার শুরু হয়।(EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
খাতার উপর জল পড়লেও যাতে তা নষ্ট না হয় তার জন্যে বিশেষ এক পদ্ধতিতে এই খাতা তৈরি হয়। এর ফলে সহজে এ খাতা নষ্ট হয় না। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
আগে যখন এই খেরোর খাতার চাহিদা ছিল, সে সময় প্রায় আড়াই হাজার রিম কাগজ ব্যবহার করা হত। আর এখন ব্যবহার হয় ছশো থেকে সাতশো রিম কাগজ। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
খেরোর খাতা তৈরিতে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ার দরুন এখন সব দোকানদার শালু দিয়ে মোড়া হালখাতা ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করেন। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
. শালু দিয়ে মোড়া হালখাতার দাম অনেক কম এবং সহজে বানিয়েও ফেলা যায়। তবে এ ধরনের খাতা বেশিদিন টেঁকে না। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
খেরোর খাতার সময় ফুরোচ্ছে, বদলানো সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে পারছে না এ খাতা। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
এখন বাজারে শালুর খাতা পাওয়া যায়, পাওয়া যায় সাধারণ বাঁধানো লাল খাতাও, যার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
খেরোর খাতার সঙ্গে এই বছরই শেষ হচ্ছে বাঙালির পুরনো এক ঐতিহ্য। (EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
খেরোর খাতার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ১৪২৫ সালে কোনও উদ্যোগ তৈরি হবে কি?(EXPRESS PHOTO BY: Shashi Ghosh)
প্রথম দিকে হালখাতায় ব্যবহার হত ‘খেরোর খাতা’। এই খেরোর খাতা তৈরি হত মোটা লাল রঙের কাপড় দিয়ে। লাল রঙ যেহেতু শুভ হিসেবে মনে করা হয় তাতে এই খাতায় লাল রঙের ব্যবহার হত। পয়লা বৈশাখে পুজো দিয়ে এই খেরোর খাতার শুভারম্ভ হত।