মঙ্গলবারই ছিল জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। সামনেই রথযাত্রা। গোটা দেশ ইতিমধ্যে এই উৎসবে মেতে ওঠার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। আর, জগন্নাথদেবের নাম আসলেই সবার প্রথমে মাথায় আসে শ্রীক্ষেত্র পুরীর কথা। রহস্যের অন্য নাম পুরীর এই মন্দির। যার প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে রহস্য। সেই রহস্য আজ অবধি ভেদ করতে পারেননি কৌতূহলীরা। এই রহস্যের অন্যতম হল, মন্দিরের চূড়ার সুদর্শন চক্র। পুরী শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকে এই চক্র দেখা যায়।
সাধারণত সবক্ষেত্রেই, পতাকা বাতাসের অনুকূলে ওড়ে। কিন্তু, পুরীর মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকা লাগানো আছে, তা হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে। ভৌগলিক নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্রের দিক থেকে তটের দিকে আসে। আর সন্ধের সময় তট থেকে সমুদ্রের দিকে ধেয়ে যায়। পুরীতে ব্যাপারটা উলটো। সকালে তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া বয়ে যায়। আর, সন্ধ্যার সময় সমুদ্রের দিক থেকে তটের দিকে আসে।
এখানকার বড় মন্দিরের ছায়া কখনও দিনের বেলায় দেখা যায় না। বলা হয়, কোনও পাখি বা বিমানও মন্দিরের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে পারে না। প্রতিদিন একজন সেবায়েত মন্দিরের গম্বুজে ওঠেন। এই গম্বুজ ৪৫ তলা বহুতলের সমান লম্বা। সেখানে ওই সেবায়েত পতাকা বদল করেন। কথিত আছে, গত ১,৮০০ বছর ধরে এই ধারা চলে আসছে। কোনও দিন পতাকা বদলানো না-হলে ১৮ বছর মন্দিরটি বন্ধ রাখতে হবে। এমনটাই পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের রীতি।
আরও পড়ুন- Snana Yatra 2022: কেন পালন হয় স্নানযাত্রা উৎসব, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আগে এর মাহাত্ম্য কী?
পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের ভোগ নিয়েও রয়েছে রহস্য। ভোগগুলো রান্না করা হয় একটির ওপর আরেকটি, এভাবে কয়েকটি মাটির পাত্রে রেখে। হিসেব মতো সবচেয়ে নীচের পাত্রের রান্না আগে হওয়ার কথা। কিন্তু, এখানে সবচেয়ে ওপরের পাত্রের রান্না আগে হয়ে যায়। সারা বছর এখানে সমান পরিমাণ ভোগ রান্না হয়। কিন্তু, ওই একই পরিমাণ ভোগ দিয়ে ২০ হাজার মানুষই হোক বা ২০ লক্ষ, সবাইকে খাওয়ানো হয়। মজার কথা হল, এই ভোগ কখনও কমও পড়ে না। আবার নষ্টও হয় না।
সাধারণত মন্দিরগুলোর বিগ্রহ মাটি, ফাইবার, ধাতু অথবা পাথর দিয়ে তৈরি। পুরীর জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার বিগ্রহ কিন্তু তৈরি নিম কাঠ দিয়ে। প্রতি ১২ বছর পর বিগ্রহের কাঠ বা শরীর বদল হয়। এই মন্দিরে সাতটি গোপন কক্ষ আছে। সেখানেই রয়েছে রত্ন। ৩৪ বছর আগে তার মধ্যে মাত্র তিনটি ঘর খোলা সম্ভব হয়েছে। যা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৮০ রকমের মণিমুক্ত খচিত স্বর্ণ অলঙ্কার। ১৪৬ রকমের রুপোর অলঙ্কার। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছে মুক্তো এবং প্রবালের মত দামি পাথর। বাকি ঘরগুলো আজও রহস্যে ঢাকা।