বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রথযাত্রা হলেও, তা আসলে পুরীর রথযাত্রাকে নকল করেই আয়োজিত হয়। আর পুরীর রথযাত্রার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। পুরীতে ২০৬টি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় জগন্নাথদেবের রথ। জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ বা কপিধ্বজ। এই রথের ১৬টি চাকা। এই ১৬ চাকার অর্থ দশ ইন্দ্রিয় আর ছয় রিপু। জগন্নাথদেবের রথের উচ্চতা ৪৪ ফুট। বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ বা হলধ্বজ। এই রথের ১৪টি চাকা। যার অর্থ ১৪টি ভুবন। বলভদ্রের রথের উচ্চতা থাকে ৪৩ ফুট। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন বা পদ্মধ্বজ। এই রথের ১২টি চাকা। যার অর্থ ১২ মাস। সুভদ্রার রথের উচ্চতা ৪২ ফুট।
এই রথগুলো সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে যাওয়ার সময় কাঠের কড়কড় শব্দ হয়। সেই শব্দকে বলা হয় বেদা। পুরীর রথ চলার সময় রাস্তায় তিনটি দাগ পড়ে। এই তিনটি দাগকে বলা হয় গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী। যাঁরা দড়ি ধরার সুযোগ পান না, তাঁরা যদি এই চাকার তিনটি দাগের ধূলি গ্রহণ করেন, তাহলে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীতে স্নানের পূণ্য লাভ হয় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
পুরীর রথের দড়িকে বলা হয় বাসুকি। সেজন্য বলা হয়, পুরীর রথের দড়ি ধরলে পুণ্য হয়। বাসুকির কৃপা লাভ হয়। এই তিনটি রথের রথী বা যাত্রীদের বলা হয় দরুক। জৈনস্তূপের আদলে তৈরি জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথগুলো দক্ষিণ ভারতের দেশর বা নথ, পূর্ব ভারতীয় দেউল এবং উত্তর ভারতের নাগরের ধাঁচে তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন- উপসর্গ থাকলে রথযাত্রায় ‘নো এন্ট্রি’! করোনার বাড়বাড়ন্তে সতর্ক প্রশাসন
পুরীর রথ নির্মাণের জন্য ব্যবহার হয় বিশেষ কাঠ। ফাসি, ভাউনরা, আসানা এই তিন ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় রথ। রথ নির্মাণের জন্য ১,১০০ টি বড় কাঠের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেই সব কাঠ থেকে ৮৬৫টি ৮ ফুটের কাঠ রথ তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয়।
রথযাত্রার দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। রথনির্মাণের কাঠ সংগ্রহ শুরু হয় বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজোর দিন থেকে। কাঠগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে কাটা শুরু হয় রামনবমী তিথি থেকে। রথের নির্মাণকাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকে। রথ তৈরিতে কোনও ধাতু ব্যবহার করা হয় না। রথের পেরেকও তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। তিনটি রথ তৈরি করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।
রথযাত্রার আগে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে ২০৮ কেজি সোনার গয়না পরানো হয়। রথের দিন ওড়িশার রাজা সোনার হাতলের ঝাড়ু দিয়ে রথটি পরিষ্কার করেন। পথও পরিষ্কার করে দেন। সঙ্গে চন্দন ছিটিয়ে দেন। রথযাত্রার সময় ডাহুকা বলি গান গাওয়া হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই ডাহুকা বলি গান না-করলে রথ চলাচল করে না। পাশাপাশি, বনতি নামে এক সম্প্রদায়ের লোকজন আগুনের গোলা নিয়ে খেলাও দেখান। যা জগন্নাথদেবকে সন্তুষ্ট করতে দেখানো হয় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।