বর্ষা মানেই নানান রোগের সূত্রপাত। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, আদ্রতা হ্রাস, জমা জল এবং মশাদের প্রভাব। তার সঙ্গে পেটের সমস্যা এবং ত্বকের সমস্যা দুই-ই দেখা দেয়। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড মূলত এই জলবাহিত এবং মশাবাহিত রোগ বর্ষাকালে হয়ে থাকে।
যদিও করোনা আবহে বর্ষায় ভাইরাসের ফলে অসুস্থতা এবং কোভিড ভাইরাসের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন কাজ। সুতরাং সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
ফর্টিস হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনিতা ম্যাথিউ জানিয়েছেন, যখন কোনও মানুষ বর্ষায় ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন , অজান্তেই সেই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সামান্য পরিমাণ অংশ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই সকল ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া যে কোনও সুস্থ দেহে, হাত-মুখ এবং নাকের মাধ্যমে সহজেই সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ফলেই এই সংক্রমণ হতে পারে ষোলো থেকে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে এবং প্রাথমিকভাবে তা উপসর্গহীন।
আরও পড়ুন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে ‘জোঁক-থেরাপি’? কী বলছেন চিকিৎসক মহল
কী কী রোগ হতে পারে এবং তা কোভিড থেকে কতটা আলাদা ?
যেহেতু, বর্ষাকাল তাই এদিক-ওদিক জল জমার শেষ নেই। জমা জল থেকেই জন্ম নেয় নানান ক্ষতিকারক মশা এবং সেই থেকেই রোগের জন্ম।
• ডেঙ্গু: মশাবাহিত একটি রোগ। উপসর্গের মধ্যে অত্যধিক জ্বর, বমি বমি ভাব, গা-হাত-পা যন্ত্রণা, প্লেটলেটের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া। হাড়ের যন্ত্রণা, চোখে যন্ত্রণা এমনকি ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা হয়।
• চিকুনগুনিয়া: মশাবাহিত রোগ। উপসর্গের মধ্যে জ্বর, শরীরের তীব্র ব্যথা এবং ক্লান্তি, ফুসকুড়ি, গাঁটে ব্যথা এবং পেটে ব্যথা। চোখের জয়েন্টগুলি বা পেশিগুলিতে সমস্যা।
• ম্যালেরিয়া: মশাবাহিত রোগ। মূলত সারাদিন জ্বর না থাকলও রাতের বেলা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। ডায়েরিয়া, মানসিক বিভ্রান্তি এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনের পাশাপাশি,মারাত্মক শরীরে ব্যথা, শীতলতা, ঘাম অনুভব করা এর উপসর্গ।
• ভাইরাল ফিভার: বর্ষার মরশুমে সাধারণত নিয়মিত ভাইরাল জ্বর হতেই পারে। ক্লান্তি ,পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা, দুর্বলতা, সর্দি, মাথা ঘোরা, ঘাম, ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা এবং খিদে কমে যাওয়া এর উপসর্গ।
• করোনা সংক্রমণ: উপরের সমস্ত রোগগুলির তুলনায় এর সংক্রমণের ধারা বেশ অন্য। এটির সংক্রমণ রোগীর সংস্পর্শে আসার ৭ দিনের মধ্যে হতে পারে। উপসর্গের মধ্যে, জ্বর, শুষ্ক কাশি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা এবং ঘ্রাণ ও স্বাদের অবলুপ্তি ঘটে। সঙ্গে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া এর লক্ষণ।
আরও পড়ুন গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী সমস্যা হতে পারে? জানুন
কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন ?প্রথমত যেহেতু বর্ষাকাল তাই জল বেশি করে খাবেন। হাবিজাবি না খাওয়াই ভাল এবং নিজের এলাকায় জল জমতে দেবেন না। প্রয়োজনে রেপিলেন্ট ক্রিম এবং মশারি ব্যবহার করুন।
- লোকজনের থেকে দু'গজের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার অবশ্যই ব্যবহার করা দরকার।
- বাইরে বেরোলেই মাস্ক ব্যবহার করুন।
- গরম জল খাওয়া উচিত।
- হাত না ধুয়ে নাকে মুখে হাত দেবেন না।
বর্ষা অবশ্যই উপভোগের সময় তবে ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিজেকে সুস্থ রাখা অবশ্যই দরকার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন