নারকেলডাঙা খাল পুল। এই রাস্তা দিয়েই অনেকে হয়তো নানা প্রয়োজনে যাতায়াত করেছেন। রাস্তার ধারে ছোট আকারের এই মন্দিরটিও দেখেছেন। কিন্তু, ছোট মন্দির দেখে এই ব্যাপারে জানার তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু, শনিবার সন্ধ্যার পর এলে এই ছোট মন্দির ঘিরেই দেখবেন ভক্তদের ছোটখাটো জটলা।
আশপাশে অবাঙালি, বিশেষ করে উর্দুভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাস। তারপরও শনিবার সন্ধ্যা শেষে এই জায়গার পাশ দিয়ে গেলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন মন্দিরে পূজাপাঠ চলছে। ভক্তরা তা দাঁড়িয়ে দেখছেন, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছেন।
ছোট এই মন্দিরটার আবার বেশ বড় একটা নাম আছে- শ্রীশ্রী পশুপতিনাথ জিউয়ের মন্দির। পশুপতিনাথ অর্থাৎ ভগবান শিবের মন্দির। হলে কী হবে, এখানে ভক্তদের মূল উপাস্য কিন্তু, শনিদেব আর কালী। শিব আছেন, মন্দির তাঁর নামে, তাই যেন থাকতে হয় বলে থাকা। আর, তাই অন্তত প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই মন্দিরের শনিদেব অত্যন্ত জাগ্রত। তিনি ভক্তদের প্রার্থনা কান পেতে শোনেন। মন্দিরের বয়সও নেহাত কম হল না। বাংলার ১৩৩৬ সালে তৈরি, ইংরেজির ১৯২৯ সাল। সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি।
আরও পড়ুন- দক্ষিণেশ্বরের আদ্যাপীঠ মন্দির, যার সঙ্গে জুড়ে এই সব অলৌকিক কাহিনি
মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভুবনমোহন দে ও শ্যামাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সময় অবশ্য আজকের মত দামি টাইলস বসানো মন্দির ছিল না। কেবলমাত্র ছিল টিনের একটা চালাঘর। ভক্তরা যবে থেকে বুঝতে শুরু করেছেন, এখানকার ঠাকুর জাগ্রত, তাঁদের মনস্কামনা পুরণ করেন, তবে থেকেই সমৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছে এই মন্দিরের। বারবার মন্দিরের সংস্কার হয়েছে। এখন ছোট হলেও বেশ একটা ঝাঁ-চকচকে মন্দির।
মন্দির লাগোয় অশ্বত্থ গাছ ছিল। সেটা কেটে জায়গাটা বেশ ভালো করে সাজানো হয়েছে। রয়েছেন নিত্যসেবার স্থায়ী পুরোহিতও। তিনি আবার বংশপরম্পরায় এই মন্দিরের পুরোহিত। তিন পুরুষ ধরে এই মন্দিরের পুজোয় যুক্ত। এই সবই সম্ভব হয়েছে ভক্তদের দানে। আর, ভক্তরাও জানেন, বিপদে-আপদে প্রার্থনা করলে এখানকার বড়ঠাকুর অর্থাৎ শনিদেব ফেরান না। অন্তত তাঁদের কোনওদিন ফেরাননি।