Advertisment

পৌষ মেলার পৌষ মাস কি ফুরোলো?

পৌষ মেলা কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, এবারের মেলা চতুর্বিংশত্যধিক শততম, অর্থাৎ ১২৪ তম পৌষ উৎসব। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই মেলা সময়ের সাথে দৌড়ে যেন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পৌষমেলা বসেছে বটে, তবে তার গায়ে এখন অনেক কিন্তু লেগে আছে

কে নেবে মাটির কলসী বা তালপাতার টুপি? বাঁশের বাঁশি বা পট কেনার মানুষ কই? মানুষ যে এবার শুধু ঘুরে দেখে, কেনে না কিছু! পৌষ মেলার শেষপ্রান্তে বাউল শিল্পীর সাথে সেলফি তোলার ঢল দেখে হতাশ এক গ্রামীন শিল্পীর আক্ষেপের সুর এমনটাই। রবিবার পৌষ মেলা শুরু, সমস্ত হোটেল লজে উপচে পড়ছে ভিড়, কিন্তু মেলায় সত্যিই তেমন ভিড় নেই। রাত্রে কিছু মানুষ এলেন, দেখলেন, এবং চলে গেলেন। বিক্রি প্রায় নেই।

Advertisment

পৌষ মেলা কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, এবারের মেলা চতুর্বিংশত্যধিক শততম, অর্থাৎ ১২৪ তম পৌষ উৎসব। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই মেলা সময়ের সাথে দৌড়ে যেন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। গ্রামীন শিল্পের প্রসার যেমন ছিল পৌষ উৎসবের লক্ষ্য, তেমন গ্রামীন শিল্পের বাজার গড়তে আয়োজকদের নিজেদের ভাবনাও জড়িয়ে ছিল এর সঙ্গে। কিন্তু অনলাইনে কেনাকাটার সময় পৌষ মেলার টুপি বিক্রেতা বা কাঁথা সেলাইয়ের শাড়ি বিক্রেতাও যে এমন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যাবেন, তা ভাবতে পারেন নি তাঁরা।

আরও পড়ুন: বড়দিনের আগে খো-খো, কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলবে শহরের খুদেরা

শাড়ি বিক্রেতা উজ্জ্বল দাসের আক্ষেপ, গত বছর দুদিনে পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়েছিল, এবার এক লক্ষ পার হয়নি। কেন? ক্রেতারা বলছেন, অনলাইনে হরেক ডিজাইন এবং বিশেষ ছাড় পান বলে তাঁরা কিনতে আসছেন না, উজ্জ্বলের আক্ষেপ, "ওরা (অনলাইন বিক্রেতা) এমনভাবে পুরোনো ক্রেতাদেরও মাথাটায় ঢুকে গেছে যে আর পারা যাচ্ছে না।" আগামী বছর থেকে আর স্টল খুলবেন না উজ্জ্বল।

publive-image এসেছেন বাউল

চেনা ছবির বদলটা খুব দ্রুত হচ্ছে। পৌষ মেলায় রাতভর বাউল গান শুনে কম্বল মুড়ি দিয়ে রাত কাটানো মানুষরা সংখ্যায় কমে গেছেন। গান আছে, শ্রোতা নেই। তাহলে এত মানুষ মেলা উপলক্ষ্যে এত টাকার প্যাকেজ খরচ সামলে কী করতে এসছেন? অনেকের বক্তব্য, শীতের শান্তিনিকেতনটা উপভোগ করতে, কেউ বললেন, "মেলায় বহুবার এসছি, কেনাকাটার মতন তেমন নতুন কিছু নেই। একবার ঘুরে দেখে চলে যাই হাউজিংয়ের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে যাঁরা স্টল করেছেন তাঁদের কাছে, এখানেই একটা ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে তো আছে।"

কাজেই মেলায় বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা এই সুযোগে ব্যবসা করছে চুটিয়ে। কত না ব্যবসায়িক সংস্থা হাজির এ মেলায়! আইএএস, আইপিএস বা নিদেনপক্ষে নার্সিং ট্রেনিং কম খরচে এবং প্রশিক্ষণ শেষে নিশ্চিত কাজের গ্যারান্টি দেওয়া বিপণি যেমন আছে, তেমন সরকারি শিল্প দপ্তরের বড় মল গোছের বিপণিও আছে। আছে রূপদস্তা, ডোকরা, হরেক অলঙ্কার, হাতে আঁকা বা গড়া হরেক সরঞ্জাম, তবু ক্রেতা টানার দৌড়ে তারা অনেকটাই পিছিয়ে।

আরও পড়ুন: সন্তানরা দূরে, সান্তা সেজে শহরে বড়দিন উদযাপন ‘বুড়ো’দের

মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্বভারতী মিলে খুলেছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, কিন্তু মেলায় মোবাইলের নেটওয়ার্কই মেলে না। প্রায় ২,০০০ পুলিশকর্মী, ছ'টি ওয়াচটাওয়ার, ৪০ টি ড্রপ গেট, সব মিলিয়ে বিরাটভাবে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লেও এবার মেলার আকর্ষন স্থানীয়দের মধ্যেও নেই, কারণ পৌষ মেলার অন্যতম আকর্ষন বাজী পোড়ানো হবে না। পরিবেশ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে এবারই প্রথম আতসবাজী প্রদর্শন বন্ধ রাখলেন কর্তৃপক্ষ।

তবে যাঁরা মেলা নয়, পৌষ উৎসবকে খোঁজেন, তাঁরা ভোর পাঁচটায় আশ্রমে আসছেন সানাইয়ের সুরে চন্দ্রমল্লিকার সুবাসে উৎসবের গভীরতাকে ফিরে পেতে। যে অনুভূতি শুধু শান্তিনিকেতন পৌষ উৎসবেই মেলে, অন্য কোথাও নয়।

shantiniketan
Advertisment