করোনা আতঙ্কে ত্রস্ত গোটা বিশ্ব, আক্রান্তের সংখ্যা অগুনতি! ভাইরাসের জেরে জর্জরিত সকলেই। তবে কোভিড -১৯ মোকাবিলায় মানুষ প্রোটেকশন নিচ্ছেন যথেষ্টই। ভাইরাসের প্রথম ধাপ থেকেই, ডাক্তারদের কথায় যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কাই বেশি। এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানব দেহের নিজস্ব কিছু সমস্যা। হাই ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিক রোগীদের কিন্তু এই ক্ষেত্রে সমস্যা এবং আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ মাত্রায় লক্ষ্যনীয়।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রথম পর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী , ক্যান্সার রোগী, ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিড -১৯ দ্বারা, যদিও দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরাও আক্রান্ত হয়। প্রথমে আমরা জেনে নিই, কোভিড -১৯ থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের কী কী সমস্যা হতে পারে ?
প্রথমত, ডায়াবেটিস রক্তের ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়। সেই কারণে ভাইরাসের সঙ্গে লড়বার ক্ষমতা ক্রমশই কমতে থাকে, এবং হাই ব্লাড সুগার রোগীদের সব রকম খাবার খাওয়া শরীরের পক্ষে উপযোগী নয়। ফলে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রোগীকে।
দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার লেভেল সবসমই একটু বেশি থাকে, কোভিডের মতো ভাইরাসদের পক্ষে সেইসব মানবদেহে বাসা বাধা বেশ সহজ।
ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে যে কোনও রোগ থেকেই সেরে ওঠা বেশ সময়সাপেক্ষ। বেশি মাত্রায় শর্করা রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, সেই কারণে শরীরে নানান সমস্যার দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নানান পর্যায়ে ব্যাহত করে, যাতে মানুষের সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রাতঃভ্রমণ একটি দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে পড়ে, এবং তার সঙ্গে ছোটখাটো কিছু এক্সারসাইজ তো বটেই।
কিন্তু করোনা আবহে মানুষজন ঘরবন্দি! পার্ক কিংবা জিম সবই বন্ধ এবং মানুষ বাইরে যতটা পারছেন কম বেরোচ্ছেন। তার ফলে অ্যাক্টিভিটিস কম হচ্ছে। হাই ব্লাড সুগার রোগীদের প্রথম এবং মূল ওষুধ হল প্রচুর পরিমাণে শরীর সক্রিয় রাখা, যাতে রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে হয়। এছাড়াও, সুগার লেভেল বৃদ্ধি পাওয়ার আরও একটি কারণ আছে, অকারণ চিন্তা বা কোনও বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত স্ট্রেস নেওয়া। করোনা আবহে মানুষের চিন্তা ভাবনার পরিমাণ বেড়েছে বইকি কমেনি , প্রচুর মাত্রায় স্ট্রেস ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এক্কেবারে গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন ক্যান্সার রোগীদের অবিলম্বে নিতে হবে করোনা টিকা! দেরি করলেই বিপদের আশঙ্কা
কোভিডের ফলে, একজন রোগীকে নানান ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয়। ওষুধের নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত মাত্রায় স্টেরয়েড বা নানান ওষুধ ডায়াবেটিস রোগীদের ভীষণ মাত্রায় দুর্বল করে দেয় এবং তার সঙ্গে কিডনির ক্ষতিও করতে পারে।
বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের কোভিডের ফলপ্রসূ হিসাবে ডায়াবেটিক কেটোসিডোসিস বা রক্তে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি, আবার mucormycosis বা শ্লৈষ্মিক সংক্রমণ এমনকি নিউমোনিয়া হওয়ার সুযোগ খুবই বেশি। তাতে রোগীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই থাকছে।
সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে ;
১. মাস্ক, স্যানিটাইজার অবশ্যই ব্যবহার করা। বাইরে বেরোলে অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করা। যে কোনও বাইরের জিনিস ধরার আগে জীবাণনাশক ব্যবহার করা। যতটা সম্ভব বাইরে কম বেরোনো এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
২. নিয়মিত বাড়িতেই হাঁটাচলা করা, ব্যায়াম বা যোগা করতেই পারেন। মানসিক শান্তি রাখতে গার্ডেনিং করতে পারেন বা গল্পের বই ভাল অপশন।
আরও পড়ুন কোভিড টিকা নেওয়ার আগে গর্ভবতীদের যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে
৩. নিজস্ব ওষুধ প্রতিদিন ঠিক করে নিন এবং ব্লাড সুগার লেভেল পরীক্ষা করে নেওয়া আবশ্যিক।
৪. খাবারের মধ্যে চিনি জাতীয় খাবার এবং সোডা, কোল্ড ড্রিংকস, কুকিজ , অত্যধিক ভাত এগুলো এড়ানোই ভাল। ব্রকলি, টমেটো, স্পিনাচ এমনকি ডিম বা চিকেনের থেকে ভাল আর কিছুই নেই। এছাড়াও ওটস, ডালিয়া এবং ব্রাউন রাইস ব্লাড সুগার আয়ত্বে রাখতে বেশ কার্যকরী।
বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরিষ্কার থাকা, জ্বর-সর্দি কাশি আক্রান্ত রোগীদের থেকে দূরত্বে থাকা আর সঙ্গে নিজের যত্ন..!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন