Tagore Family Legacy: ঠাকুরবাড়ির দুই রত্ন! রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিরকালীন সুতোয় বেঁধে রেখেছে ৭ আগস্ট

Tagore Family Legacy: বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাসে ৭ আগস্ট এক যুগান্তকারী দিন। এই দিনে জন্মেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর প্রয়াত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

Tagore Family Legacy: বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাসে ৭ আগস্ট এক যুগান্তকারী দিন। এই দিনে জন্মেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর প্রয়াত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Rabindranath and Abanindranath Thakur

Rabindranath and Abanindranath Thakur: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

Tagore Family Legacy: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দুই রত্নকে চিরকালীন সুতোয় বেঁধে রেখেছে ৭ আগস্ট। ১৮৭১ সালে ৭ আগস্ট ছিল জন্মাষ্টমী। সেই দিন জন্মেছিলেন গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৌদামিনীর পুত্র অবনীন্দ্রনাথ। যিনি বাংলা সংস্কৃতিতে অবন ঠাকুর নামেই বেশি পরিচিত। আর, ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ইন্দ্রপতন ঘটেছিল। সেই দিন প্রয়াত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় অবনীন্দ্রনাথের বয়স ৭০ বছর। যাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন 'রবিকা'। আর, ঠাকুরবাড়ির সবাই তাঁকে চিনত 'রবিকাকা'র ছায়াসঙ্গী হিসেবে। 

Advertisment

রবি ঠাকুরের প্রয়াণের দিন অবনীন্দ্রনাথ

বাংলা ক্যালেন্ডারে দিনটা ছিল ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ। রবিঠাকুরের মৃত্যুর খবর শুনে এত লোক এই দিন ঠাকুরবাড়িতে ভিড় করেছিলেন যে নিয়ন্ত্রণ কার্যত এই বিখ্যাত বাড়ির বাসিন্দাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। সেই সময় ৭০ বছরের অবনীন্দ্রনাথ দক্ষিণের বারান্দায় বসে একমনে এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথের অন্তিম যাত্রার ছবি। তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষটির মৃত্যু এভাবেই মিশে গিয়েছিল অবনীন্দ্রনাথের জন্মদিনের সঙ্গে। 

Advertisment

আরও পড়ুন- জন্মাষ্টমীর আগেই রাজযোগ! এই ৩ রাশির ভাগ্য খুলে দিতে চলেছেন গ্রহরাজ শনিদেব

অখণ্ড বাংলার স্বার্থে ঠাকুরবাড়ির রাখিবন্ধন, স্বদেশি আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহেই শুরু করেছিলেন লেখালেখি। তাঁর 'শকুন্তলা' রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল। 'ক্ষীরের পুতুল', 'রাজকাহিনি', 'বুড়ো আংলা' ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। জোড়াসাঁকোর ধারে বইয়ে অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'রবিকা বলতেন, অবন একটা পাগলা। সেকথা সত্যি। আমি একেক সময় ভাবি, হয়তো কোনওদিন সত্যি খেপে যাব।...আমি চিরকালের খ্যাপা। সেই খ্যাপামি আমার কোনওকালেই গেল না।'

আরও পড়ুন- ২০০ টাকার কমে বাজার তোলপাড় করা প্ল্যান Jio এর, অফার জানলে মন আনন্দে নেচে উঠবে

তাঁর রবিকাকার সঙ্গে অবন ঠাকুরের বয়সের ফারাক ছিল বছর দশেক। ডানপিটে ছেলেটির ছেলেবেলা কেটেছে 'পদ্ম দাসী'র কোলে। তিনিই ছিলেন অবন ঠাকুরের অভিভাবক। হলে হবে কী! শিশু অবনের দস্যিপনায় অস্থির ছিলেন পদ্ম। এই দস্যিপনার দৌলতেই বাড়ির লোকেদের কাছে অচিরেই অবন ঠাকুরের নাম হয়ে যায়, 'বম্বেটে'। পরবর্তী জীবনে সেই ছেলেটাই ধীরে হয়ে ওঠেন সংস্কৃতি জগতের মহীরুহ। লন্ডনে চিত্রশিল্প প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের থেকে পেয়েছিলেন 'সিআইই' উপাধি। ১৯০৬ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯০৭ সালে তৈরি হয়েছিল 'ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্টস।'  

আরও পড়ুন- আরও সঞ্চয়ী হোন, খরচা করুন তবে লক্ষ্য ঠিক করে, উদ্বেগ দূর করুন

যাঁর আলোতে অবনীন্দ্রনাথ আলোকিত ছিলেন, সেই রবীন্দ্রনাথ প্রয়াণের চার বছর আগে থেকেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ১৯৩৭ থেকেই তাঁর কিডনির সমস্যাটা গুরুতর হয়ে উঠেছিল। ১৯৪০ সালে পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীকে দেখার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর রবি ঠাকুর গিয়েছিলেন কালিম্পঙে। সেখানেই ২৬ সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটু সুস্থ হয়ে কলকাতায় ফিরলেও অসুস্থতা তাঁর পিছু ছাড়েনি।

আরও পড়ুন- ৯ আগস্ট গজলক্ষ্মী যোগে রাখিবন্ধন, ভাই-বোনের পবিত্র বন্ধনের এই মহোৎসবের তাৎপর্য কী?

১৯১৬ সালের পর থেকে কবির চিকিৎসা করছিলেন নীলরতন সরকার। কিন্তু, স্ত্রীর মৃত্যুর পর নীলরতন সরকার গিরিডিতে গিয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। ১৯৪০-এ তাই কবিগুরুর শারীরিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায়। তিনি অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু, অস্ত্রোপচারের পর রবীন্দ্রনাথ সুস্থ হননি। তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নীলরতন সরকারকে গিরিডি থেকে যখন আনা হয়, তখন আর তাঁর কিছু করার ছিল না। ২২ শ্রাবণ সকাল ৯টায় কবিকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে থেমে যায় তাঁর হৃদস্পন্দন। আজও গোটা বিশ্ব শোকমগ্ন হৃদয়ে পালন করে কবিপ্রয়াণের দিনটি।

একসময় রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছেয় জোড়াসাঁকোর ৫ নম্বর বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় শান্তিনিকেতনের কলাভবনের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে অবনীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, রানি চন্দ, বিনায়ক মাসোজিরা। ১৯৪১-এর ৭ আগস্ট, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর থেকে সব উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে অবনীন্দ্রনাথের অংশটা ভগ্নস্তূপ হয়ে গিয়েছিল।

নভেম্বর মাসে সপরিবারে ওই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন অবনীন্দ্রনাথ। সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে চলে যান বেলঘরিয়ার গুপ্তনিবাসে। বাড়িটা কিনে নেন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী। ১৯৫১ সালে মৃত্যু পর্যন্ত বেলঘরিয়াতেই ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। তাঁর জোড়াসাঁকোর বাড়ির সামনের বাগানে বড় বাড়ি তৈরি হয়ে যায়। দক্ষিণের বারান্দা ভেঙে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট অংশ রক্ষণাবেক্ষণের ভার নেয় কেন্দ্রীয় সরকার।      

Family Tagore Legacy