অম্বুবাচী চলছে। বুধবার লেগেছে, রবিবার ছাড়বে। শাস্ত্রমতে এই সময় দেবী রজঃস্বলা। সেই জন্য মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের দেবী শীতলা, কালী, বিপত্তারিণী, চণ্ডী, জগদ্ধাত্রী, দুর্গার প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। হিন্দু বিধবা, ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসীদের অনেকেই আগুনে তৈরি করা রান্না এই ক'দিন খান না। এবারও খাচ্ছেন না।
কিন্তু, তারাপীঠ মন্দির এই সময়ও খোলা। সেখানে অন্য দিনের মতোই চলছে দেবী তারার আরাধনা। ভক্তদের জন্যও মন্দির খোলা আছে। কারণ হিসেবে সেবায়েতদের তরফে জানানো হয়েছে, এটা নতুন কিছু না। আগাগোড়াই অম্বুবাচীতে তারাপীঠের মন্দির খোলা থাকে। নিত্যপুজো, ভোগরাগ সব কিছুই অন্যদিনের মতই হয়।
এর কারণ হল, তারাপীঠের তারাদেবীর মন্দির কোনও সতীপীঠ না। এটা উপপীঠ, যার অর্থ সতীপীঠের কাছাকাছি থাকা পীঠস্থান। অনেকে একে সিদ্ধপীঠও বলে থাকেন। কারণ, প্রাচীনকালের মহামুনি বশিষ্ঠ থেকে বামাক্ষ্যাপার মতো সাধকরা এই তারাপীঠে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাঁদের সিদ্ধির মহিমা দেশ থেকে বিদেশে পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। সেই কারণে, তারাপীঠের মন্দিরে দেবীর আরাধনায় অম্বুবাচীর সময়ও কোনও বাধা নেই।
আরও পড়ুন- সামনেই রথযাত্রা, মাতবে গোটা দেশ, কিন্তু জানেন কেন জগন্নাথের মূর্তির এমন চেহারা?
শাস্ত্র অনুযায়ী, সৌর আষাঢ় মাসে সূর্য যখন মিথুন রাশিতে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে প্রবেশ করে, তখন থেকে তিন দিন ধরে মোট বিশ দণ্ডকাল অম্বুবাচী পালিত হয়। এই সময় ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে পূজা করা, মন্দিরে প্রবেশ ও দর্শন বন্ধ রাখা, বিগ্রহ স্পর্শ না-করা, গৃহ দেবতার নিত্যসেবা বাদ দেওয়াই বিধেয়। কিন্তু, তারাপীঠে এসব নিয়ম মানা হয় না। দেবী তারা মূলত শ্মশানের দেবী। সেই কারণে তাঁর ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না।
তবে, সাধারণ ভাবে হিন্দুদের একাংশ এই সময় কৃষিকাজ বন্ধ রাখে। অম্বুবাচী শেষ হলে, পোশাক থেকে বিছানার চাদর-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র সাবান দিয়ে ধুয়ে-কেচে ব্যবহার করেন। বহু জায়গাতেই অম্বুবাচীর সময় মন্ত্রপাঠ করা হয় না। শুধু ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে পুজো চলে। অম্বুবাচী শেষে দেবীমূর্তির আচ্ছাদন খুলে নিতে হয়। দেবীমূর্তি বা প্রতিমাকে ভালো করে পুছে নিয়ে পুজো করতে হয়। দেবীকে নিবেদন করা হয় আম ও দুধ।