একাকীত্ব যেন গিলে খেতে আসছে সমাজের একটি বড় অংশের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের! একা থাকতে-থাকতে মানসিক ও শারীরিকভাবে আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন অনেকে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ঘটছে চরম পরিণতিও। কাজের সূত্রে অনেক ছেলেমেয়েই বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে একা ফেলে থাকেন ভিনরাজ্যে। কেউ আবার বিদেশেও। ফোনেই কথা হয় বাবা-মার সঙ্গে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাই শেষ বয়সেও একা থাকতে হয় প্রবীণ নাগরিকদের একটা বড় অংশকে। বাড়িতে একা যেসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা থাকছেন সব সময়েই কাছে রাখুন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওষুধ। মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ। একাকী প্রবীণদের সুবিধার্থেই এবার শহর কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক রাহুল জৈন নিজের মূল্যবান কিছু পরামর্শ শেয়ার করলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
দিন কয়েক আগেই কলকাতার ফ্ল্যাটে মিলেছে বর্ষীয়ান পরিচালক সুজন দাশগুপ্তর মরদেহ। বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হয়েছে ‘একেনবাবু’-র স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্তের নিথর দেহ। ফ্ল্যাটেই শরীর হয়তো এতটাই খারাপ করেছিল যে কাউকে ফোন তো দূরের কথা, ঘরের দরজাটা খুলেও কাউকে ডাকতে পারেননি তিনি। পরিণতি, মৃত্যু।
বৃদ্ধ বয়সে পুরুষ বা নারীর একটা বড় অংশকে বাধ্য হয়েই একা থাকতে হয়। কোথাও স্বামী-স্ত্রী দু'জন মিলেও শেষ বয়সে একা থাকেন। কোথাও আবার স্বামী বা স্ত্রী কারও একজনের মৃত্যু হলে অন্যজন একাই দিন কাটান। ফোনেই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। সমাজের একটি বড় অংশের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এখন এভাবেই দিন কাটে। তাঁদের জন্যই বিশিষ্ট চিকিৎসক রাহুল জৈন বেশ কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ দিলেন।
একাকী বয়স্করা সব সময়ের জন্য বাড়িতে কোন কোন ওষুধ রাখতে পারেন?
চিকিৎসক জৈনের কথায়, বাড়িতে সব সময় জ্বর বা ব্যথার ওষুধ রাখুন। এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ৬৫০ ট্যাবলেট হাতের কাছে রাখুন। শরীরে টুকিটাকি ব্যথা-যন্ত্রণার জন্য বাম ব্যবহার করুন। অন্য ওষুধের চেয়ে প্রাথমিকভাবে এটাই নিরাপদ বয়স্কদের কাছে। বয়স্করা যথাসম্ভব পেনকিলার জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া চলবে না। এছাড়াও বয়স্কদের পেটের গোলমালও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কাছেই রাখুন প্রোবায়োটিক জাতীয় ওষুধ এবং ওআরএস। একইসঙ্গে বমির কয়েকটি ওষুধও বাড়িতে রেখে দেওয়া ভালো। মোটামুটি ছোটখাটো সমস্যা এড়াতে এই ধরনের কয়েকটি ওষুধ বয়স্করা সব সময়ের জন্য বাড়িতে রেখে দিন।
আরও পড়ুন- টাকা ডাবলের ‘ধামাকা’ সুযোগ পোস্ট অফিসে, বিভিন্ন স্কিমে বেড়েছে সুদের হার
সুস্থ থাকতে হেল্থ চেক আপ…
বাড়িতে যে বয়স্ক মানুষরা একা থাকছেন তাঁদের নিয়মিত একটি হেল্থ চেক-আপের মধ্যে থাকা উচিত বলেই মনে করেন ডক্টর জৈন। বয়স ৭৫-এর নীচে থাকলে ৬ মাস অন্তর হেল্থ চেক আপ করানো যেতে পারে। তবে বয়স ৭৫-এর উপরে হলে হেল্থ চেক করাতে হবে ৩ মাস অন্তর।
মোবাইলের স্পিড ডায়ালে চিকিৎসকের ফোন নম্বর…
অনেক প্রবীণ এখনও মোবাইল ফোন ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বাড়িতে একা থাকলে শরীর খারাপ হলে অনেক ক্ষেত্রেই বয়স্ক মানুষদের দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের স্পিড ডায়ালে একজন চিকিৎসকের ফোন নম্বর সেট করে রাখুন। যাতে সহজেই মোবাইল হাতে পেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
বয়স্কদের মন ঠিক রাখতে মনোবিদের পরামর্শ…
অনেক বাড়ির ছেলেমেয়েরাই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বছরে মাত্র কয়েকবার হয়তো তাঁরা বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। চিকিৎসক জৈন মনে করেন, দিনের পর দিন ছেলেমেয়েদের বা নিকটাত্মীয়দের ছেড়ে থাকতে-থাকতে বয়স্কদের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। নিয়ম করে তাই একজন মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।