রাজ্যের শিল্পনগরী দুর্গাপুর। শিল্প সমৃদ্ধির জন্য রাজ্যে এই অঞ্চলের ব্যাপক খ্যাতি। তবে, দুর্গাপুর যেমন শিল্পনগরী। তেমনই এর গ্রামীণ এলাকাও আছে। এই গ্রামীণ অঞ্চল আবার দীর্ঘদিন ধরেই রাঢ়বঙ্গের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলেছে। যেখানে গড়ে উঠেছে জাগ্রত ধর্মীয় সব তীর্থস্থান। এই সব তীর্থস্থানের ব্যাপক খ্যাতি। দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে বছরের পর বছর ধরে ছুটে যান অসংখ্য ভক্ত। এমনই এক মন্দির রয়েছে দেবী শ্বেতকালীর। কথিত আছে এই মন্দির অতিজাগ্রত। এখানে রোজ রাতে দেবী কালী নদীতে স্নান করেন। মন্দিরটি রয়েছে দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর পল্লিতে।
এখানে দেবীর গায়ের রং সাদা। মন্দিরটির রং-ও সাদা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই মন্দির অত্যন্ত পুরোনো। মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন এক সাধক। কথিত আছে, আজও এখানে দেবী শ্বেতকালীর নূপুরের শব্দ শোনা যায়। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পুণ্যতোয়া দামোদর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এই দামোদর নদেই রোজ রাতে স্নান করতে যান দেবী শ্বেতকালী। স্থানীয় এক বাসিন্দা আবার প্রত্যক্ষভাবে সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হয়েছেন।
কাহিনিটি দুর্গাপুর অঞ্চলের আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত। খনিসমৃদ্ধ দুর্গাপুর অঞ্চলে প্রচণ্ড গরম পড়ে। কথিত আছে, একবার তীব্র গরমে স্থানীয় এক বাসিন্দা মন্দিরের সিঁড়িতে রাতে শুয়েছিলেন। সেই সময় তিনি শুনতে পান, কোনও এক মহিলা কণ্ঠ তাঁকে বলছেন, ‘আমার পথ ছাড়! আমি যাব।’ কিন্তু, গলার আওয়াজ শুনতে পেলেও ওই ব্যক্তি কাউকে দেখতে পাননি। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ একই ঘটনা ঘটায়, ওই ব্যক্তি ভয় পেয়ে মন্দিরের সিঁড়ি থেকে বাড়ি ফিরে যান। পরদিন মন্দিরে গিয়ে তিনি দেবীর কাছে সিঁড়ি আটকে শুয়ে থাকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আরও পড়ুন- তারাপীঠের মতই জাগ্রত বুংকেশ্বরীর মন্দির, সাধক শুধু তান্ত্রিকরাই, পূরণ হয় মনস্কামনা
প্রতিবছর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় দেবীর বাৎসরিক উৎসব পালন করা হয়। স্থানীয় তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা মিলে দেবী শ্বেতকালীর পুজোয় অংশ নেন। দেবীর পুজোর দিন সকালে সূর্য ওঠার আগে দই ও খই দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। দুপুরে দেওয়া হয় লুচি, সিমুই, মিষ্টি। রাতে পুজোর সময় ভোগ হিসেবে থাকে ফল, মিষ্টি, সাদাভাত, মুগডাল, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস।