হিন্দুশাস্ত্রে পঞ্চমুখী দেবতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। স্বভাবতই পঞ্চমুখী গণেশেরও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে ভক্তদের কাছে। কারণ, এমনিতেই গণেশকে সব শুভর প্রতীক বলে মনে করা হয়। তার ওপর পঞ্চমুখী। পঞ্চ মানে পাঁচ। আর, মুখী শব্দের অর্থ হল মুখ।
পণ্ডিতদের ধারণা, পঞ্চমুখী গণেশ হলেন জীবদেহের পাঁচটি কোষের প্রতীক। বেদে আত্মার উৎপত্তি, বিকাশ, ধ্বংস ও গতিবিধিকে পঞ্চকোষের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই পঞ্চকোষকে আবার জীবের পাঁচ প্রকার দেহও বলা হয়।
এরমধ্যে প্রথম কোষ হল অন্নময় কোষ। সমগ্র বস্তুজগৎ যেমন পৃথিবী, নক্ষত্র, গ্রহ, নক্ষত্রমণ্ডল ইত্যাদি আসলে অনাময় কোষ। দ্বিতীয় কোষ হল প্রাণময় কোষ। দেহের মূলে প্রাণের প্রবেশের ফলে বায়ুর উপাদানটি ধীরে ধীরে জাগ্রত হয়। আর, তা থেকে বহু কোষের সৃষ্টি হয়। একেই বলা হয় প্রাণময় কোষ।
তৃতীয় কোষ হল মনোময় কোষ। জীবের মধ্যে মন জাগ্রত হয়। আর, যাঁর মন যত বেশি জাগ্রত হয়, সেই ব্যক্তিও তত বেশি মানুষ হন। চতুর্থ কোষ হল বিজ্ঞানময় কোষ। যা আসলে জাগতিক মোহের জ্ঞান। বোধি, অর্থাৎ যে সত্যের পথে চলে, তা রয়েছে এই বিজ্ঞানময় কোষের মধ্যেই। জ্ঞানী লোকের উপলব্ধি তখনই বাড়ে, যখন তাঁর বুদ্ধির বিকাশ হয়। এই বুদ্ধির বিকাশ আসলে বিজ্ঞানময় কোষের বিকাশ।
আর, পঞ্চম কোষ হল আনন্দময় কোষ। কথিত আছে এই কোষের জ্ঞান লাভের পর মানুষ সমাধি প্রাপ্ত করে মহামানব হয়ে যান। হিন্দু শাস্ত্র মনে করে, মানুষেরও ভগবান হওয়ার ক্ষমতা আছে। আর, সেই জন্য আনন্দময় কোষের জ্ঞান লাভ করে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন- চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন ফরাসিদের দেওয়ান, আজও চলছে সেই পুজো
শাস্ত্রমতে, গণেশের পাঁচটি মুখ সৃষ্টির পাঁচটি রূপ বা কোষের প্রতিনিধিত্ব করে। এর পাশাপাশি, অনেক পণ্ডিতের আবার ধারণা যে পঞ্চমুখী গণেশ চার দিক এবং এক মহাবিশ্বের প্রতীক। তিনিই চার দিক থেকে ভক্তদের রক্ষা করেন। আর, ভক্তদের পাঁচটি কোষকেও সজীব রাখেন। বাস্তুবিদরা বলেন, পঞ্চমুখী গণেশকে ঘরের উত্তর বা পূর্ব দিকে রাখাই শুভ। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলায় বিশ্বের একমাত্র নিজস্ব শৈলীর পঞ্চমুখী গণেশ মন্দির রয়েছে।
এখানকার স্বয়ম্ভূ পঞ্চমুখী গণেশ মন্দির রয়েছে শ্রীঅর্কেশ্বর মন্দিরে। মনে করা এখানে গণেশের মূর্তিটি শতাব্দীপ্রাচীন। সারাবছর এই মূর্তি দেখতে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। মন্দিরের সেবায়েত থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের দাবি, এই মূর্তিটি স্বয়ম্ভূ। আর, গোটা বিশ্বেই গণেশের এমন রূপ খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।