গণতন্ত্রে বিরোধীদের থেকে সরকারকে শিখতে হয়। সরকার ভুল কিছু করলে, তা আটকানোর বা শোধরানোর চেষ্টা করেন বিরোধীরা। এটাই গণতন্ত্রের নীতি ও গণতন্ত্রের উজ্জ্বল দিক। সেই দিকের এক উজ্জ্বল অধ্যায় বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যাচ্ছে। বিরোধীরা হামেশাই সরকারের বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তা সে নিয়োগ দুর্নীতিই হোক বা অন্যকিছু।
কিন্তু, বিরোধীরা শেখানোর আগে বা ভুল ধরানোর আগে কি সরকার নিজেদের শুধরে নিতে পারে না? উত্তরটা হল হ্যাঁ পারে। আর, সেই সুযোগ সরকারের কাছে আছে। সেই সুযোগ সরকারকে দিয়েছে চাণক্য নীতিশাস্ত্র। প্রশ্ন জাগবেই, কীভাবে সেটা সম্ভব? চাণক্য এতদিন আগে জন্মেছিলেন। তিনি অতদিন আগে নীতিশাস্ত্র লিখে গিয়েছেন। তিনি কীভাবে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতে পারবেন?
আর, এই প্রশ্ন জাগলে চাণক্যের 'মূর্খে নিযোজ্যমানে তু ত্রয়ো দোষা মহীপতেঃ। অযশশ্চার্থনাশশ্চ নরকে গমনং তথা।।'- এই শ্লোকটাও জেনে রাখা উচিত। চাণক্য এই শ্লোকে ঠিক কী বলে গিয়েছেন? তিনি বলেছেন, রাজার কাজ হল প্রজা পালন। প্রজাপালনের জন্য রাজাকে বিভিন্ন দফতরে বিভিন্ন উপযুক্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হয়। সমস্ত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করার জন্য দায়িত্বপূর্ণ জ্ঞানী ব্যক্তির হাতে প্রশাসন অর্পণ করতে হয়।
তা না-করে রাজা যদি মূর্খ, বুদ্ধি, বিবেচনাহীন ব্যক্তিকে কোনও দায়িত্ব দেন, তবে তিনি তা সম্পন্ন করতে পারবেন না। ফলে, প্রজারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত থেকে যাবেন। ফলে, রাজার প্রতিও প্রজারা অসন্তুষ্ট হবেন। আর, তাতে রাজারও ক্ষতি হবে। কারণ, অসন্তুষ্ট প্রজা সবসময় কর কম দেওয়ার চেষ্টা চালাবে। ফলে, রাজকোষ ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে যাবে। আর, রাজার প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে, দায়িত্ব দেওয়ার আগে রাজাকেই সচেতনভাবে দেখে নিতে হবে, সেই ব্যক্তি যোগ্য কি না।
আরও পড়ুন- কেন আজকের দিনটি স্থান পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়?
চাণক্যের এই শ্লোকের আপ্তবাক্যের কথা মাথায় রাখলে বলতে হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে নিযুক্ত কেউ যে সঠিক ব্যক্তি নয়, সেটা প্রশাসনের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার হামেশাই বলে থাকে রাজকোষ ফাঁকা। প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে তাদের নিয়োগ দুর্নীতির মত কোনও সমস্যা নেই তো? যেমনটা, চাণক্য বলেছেন!