লোক আদালতের বিচারকের পদে বসে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন রূপান্তরকামীর

নদীয়ার সুমনা প্রামানিক কিছুদিনের মধ্যেই নদীয়া জেলার লোক আদালতে বিচারক পদে বসতে চলেছেন। এর আগে প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসে নজির গড়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মন্ডল।

নদীয়ার সুমনা প্রামানিক কিছুদিনের মধ্যেই নদীয়া জেলার লোক আদালতে বিচারক পদে বসতে চলেছেন। এর আগে প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসে নজির গড়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মন্ডল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সমাজ সাবালক হয়েছে অনেকটাই। শিক্ষা, প্রযুক্তির অগ্রগতি, উন্নয়ন কিছুই থেমে নেই আর। তবে তৃতীয় লিঙ্গ বা রূপান্তরকামীর নাম শুনলে আজও ভুরু কুঁচকে যায় অনেকেরই। আইনি স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক স্বীকৃতির লড়াই জারি এখনও। তবে এসবের বাইরেও স্বপ্নের উড়ান থেমে নেই।

Advertisment

নদীয়ার বাসিন্দা সুমনা প্রামানিক, আর কিছুদিনের মধ্যেই নদীয়া জেলার লোক আদালতে বিচারক পদে বসতে চলেছেন। এর আগে প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসে নজির গড়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মন্ডল। সম্প্রতি ইসলামপুরে রয়েছেন তিনি। জয়িতার পর এবার তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন সুমনা।

আরও পড়ুন: জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের চিফ পেট্রন পদে এবার রূপান্তরকামী

Advertisment

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সুমনা বলেন, "ভারতে একটা মানসিক সংকীর্ণতা রয়ে গিয়েছে, কারণ এখনও ট্রান্সজেন্ডারদের মেনে নিতে পারে না সমাজ। আমাদের সমাজ যে চোখে দেখে তা বদলানো সহজ নয়, কিন্তু রূপান্তরকামীরা মূল স্রোতে এলে সমাজও ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠবে আমাদের উপস্থিতিতে। আমাদের মেনে নেওয়াও ততটাই সহজ হবে সমাজের পক্ষে। আমাকে বলা হয়েছে আমি প্যানেলে থাকব, আমি সত্যিই ভীষণ আপ্লুত, তবে এখনও অনেকগুলো দিক রয়েছে যেগুলোর ওপর আমাদের কাজ করতে হবে, আর তাহলেই রূপান্তরকামীদের জীবনযাপনের পরিবর্তন হবে।"

সুমনার অতীতের সফরটা যে নেহাত সহজ ছিল না সে কথাও জানিয়েছেন তিনি নিজেই। স্কুল-কলেজ জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় কারও সঙ্গে বন্ধুত্বটুকুও করতে পারেননি তিনি। সুমনার কথায়, "অবাক ব্যাপার এটাই, যে আমি গতকাল পর্যন্তও নানা বিদ্রুপ এবং হয়রানির সম্মুখীন হয়েছি। এখনও সামান্য একটা বাড়ি ভাড়া পেতেও একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় রূপান্তরকামীদের। কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, সর্বত্রই লাঞ্ছিত হতে হয় আমাদের। তবে আশার আলো এটাই যে, অবস্থার ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে, আমি নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে পুরো পরিস্থিতিই বদলে যাবে।"

আরও পড়ুন: তেলেঙ্গানার নির্বাচনের আগে নিখোঁজ রূপান্তরকামী বাম প্রার্থী, তদন্তে পুলিশ

সমাজে সম্মানিত হওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি শিক্ষা, কাজেই পরিবর্তন আনতে রূপান্তরকামীদেরও পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে হবে বলেই মনে করেন সুমনা। তাঁর কথায়, "দেখা গিয়েছে, প্রতি পদক্ষেপে আমাদের এতটাই বৈষম্যের মুখে পড়তে হয় যে হাল ছেড়ে দিই আমরা, কিন্তু নিজের স্বপ্ন সত্যি করতে যদি কেউ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অন্য কারো ক্ষমতা নেই তাকে থামানোর।"

সুমনার স্বপ্নের উড়ানের গল্প কিন্তু শেষ হয়নি এখনও, রূপান্তরকামীদের জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করতে চান তিনি। ব্রাত্য জীবনযাপনের গল্প করতে গিয়ে তিনি বলেন, "কেউ আমার সঙ্গে বসার জায়গাটাও ভাগ করতে চাইত না, আমি একাই বসতাম সারাজীবন। এমনকী ইউনিভার্সিটিতেও। আমার কোনও বন্ধু ছিল না, কেউই আমাকে মেনে নেয় নি, আমিও বন্ধুত্বের ইচ্ছে প্রকাশ করিনি ওদের কাছে। আমি এমন একটা বিদ্যালয় বানাতে চাই যেখানে আমার মতো মানুষেরা ব্রাত্য মনে করবে না নিজেদের।"

Read the full story in English