খাবারের অনিয়ম সঙ্গে জীবনযাত্রায় বেলাগাম এবং তার হাত ধরে হজমের সমস্যা ও অম্বল ভোগেন অনেকেই। খাবার সঠিকভাবে হজম না হলে কিন্তু পাচনতন্ত্রের নানান গোলযোগ অনেক শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। যেমন, ইউরিক অ্যাসিড !
প্রথমেই জেনে নিই ইউরিক অ্যাসিড কী?
এটি শরীরের একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পণ্য যা প্রতিদিন তৈরি হয়। এটি পিউরিন নামক রাসায়নিক থেকে আসে যা আমাদের দেহে প্রাকৃতিক কোষ ভাঙনের কারণে তৈরি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ২-৬ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৩-৭।
কখন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ?
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় যখন শরীর বর্জ্য পদার্থগুলি কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে সক্ষম হয় না। যখন আপনার শরীর ঠিক মতো কাজ না করে, বিশেষ করে আপনার কিডনি। বেশিরভাগ তিনটি কার্যকলাপ ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে - ধূমপান, অ্যালকোহল এবং শরীর চালনা না করে এক জায়গায় বসে থাকা। অতএব, আমাদের শরীরের কার্যকারিতা অনুকূল করতে হবে এবং এই তিনটি অভ্যাস বাদ দিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন যাতে সঠিক ভাবে হয় সেদিকে নজর দিতে হবে ।
পুষ্টিবিদ রুজুতা দিবাকর বলেন, আপনার শরীর যখন বর্জ্য পদার্থগুলি কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে সক্ষম হয় না তখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি তখন ঘটে যখন আপনার শরীর ঠিক মতো কাজ করে না, বিশেষ করে আপনার কিডনি যখন সুস্থভাবে কাজ করে না তখন কিন্তু ভীষণ সমস্যা। রুজুতা তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে একটি ভিডিওর মাধ্যমে জানান, এটি কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং এর আশেপাশের বেশ কিছু মিথ সম্পর্কেও সঠিক ধারণা প্রেরণ করেন।
তিনি বলেন, ইউরিক অ্যাসিড অবশ্যই কন্ট্রোলে রাখা উচিত। নিয়মিত খাদ্য, শরীরের হাইড্রেশন, এসবের দিকে নজর রাখা উচিত। প্রতিদিন ব্যায়াম করা অবশ্যই উচিত। যে যে বিষয়গুলি কম করতে হবে তার মধ্যে ধূমপান এবং মদ্যপান এছাড়াও প্যাকেটজাত খাবার কম খেতে হবে। বাড়িতে রান্না করা খাবারই খান। খাবারের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের বিরতি হলে চলবে না। বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসে না থেকে চলাফেরা বজায় রাখুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম অবশ্যই দরকার।
কী কী খাবেন ?
• জল: জল অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবেন। তবে দিনের বেলায় এর মাত্রা বেশি রাখুন।
• ফল: প্রতিদিন তাজা এবং মৌসুমী ফল খাওয়া আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে। যদি আপনার ইতিমধ্যে প্রদাহ থাকে তবে কলা সত্যিই ভালও কাজ করে।
• দুধ, দই এবং বাটার মিল্ক: ইউরিক অ্যাসিড কমাতে এই তিনটি জিনিস আপনার ডায়েটে যোগ করুন। বিশেষ করে, প্রতিদিন একবার কিসমিসের সাথে দই খাওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। বাটারমিল্ক আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে এবং আপনার পেশি এবং জয়েন্টের জন্য ভালও।
• বাদাম: প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খেলে আপনার ইউরিক এসিডের মাত্রা কমে যাবে।
• ডাল এবং স্প্রাউট: প্রথমে ডাল এবং স্প্রাউটগুলি সঠিক অনুপাতে খাওয়ার আগে ভিজিয়ে নিন, সঠিক ভাবে অঙ্কুরিত হলে তারপর রান্না করুন।
• এক গ্লাস হলুদ দুধ পান করুন
কী কী খাবেন না?
কেচাপ, টেট্রা প্যাক জুস, চকলেট, চিপস এবং বিস্কুট থেকে দূরে থাকুন।
শারীরিক অনুশীলন: নিয়মিত ব্যায়াম আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম রাখতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
• প্রতি ৩০ মিনিট বসে থাকার জন্য, কমপক্ষে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থাকুন।
• শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন অন্তত একটি ফ্লোরে ওঠানামা করুন।
• সপ্তাহে অন্তত দুই দিন শক্তি প্রশিক্ষণ করুন।
• আপনার রুটিনে স্ট্রেচ এবং যোগব্যায়াম যোগ করুন।
• ঘুমানোর আগে গ্যাজেট থেকে দূরে থাকুন।
আরও পড়ুন প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস: সহজ ব্যায়াম দূর করবে পায়ের পাতার ব্যথা
তবে হ্যাঁ! ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কে কিন্তু বেশ কিছু মিথ রয়েছে, যেগুলি মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে দেয়! যেমন:
• পালং শাক অনুপাতে খাওয়াতে সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
• দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া নিরাপদ।
• আপনি অনুপাতে ডিম খেতে পারেন।
• মাংস এবং মাছ আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াবে না। খাবারের একটি ছোট অংশ হিসাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার খাওয়া নিরাপদ।
• আপনার ব্যায়ামের ঠিক পরে হাই প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে।
• মিলেট জাতীয় দ্রব্য খেতে পারেন। তবে পরিমাণে কম খাবেন!
তাহলে সমস্যা মিটলো তো ?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন