Advertisment

সাইকেলে নদিয়া থেকে দীঘা, সচেতনতার বার্তা দিতে নজির রকির

রক্তদান ও প্লাস্টিক বর্জন, এই দুই বার্তা জনমানসে পৌঁছে দিতেই নদিয়ার তেহট্ট থেকে সাইকেলে চেপে দীঘা রওনা দেন রকি মণ্ডল। পরের বছর সাইকেলে চেপেই পাহাড় সফরের ভাবনা নদিয়ার এই তরুণ সমাজসেবীর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rocky mondal, রকি মণ্ডল

সাইকেলে চেপে বেড়াতে ভালবাসেন রকি মণ্ডল। ছবি সৌজন্যে, রকি।

''দোস্তো কো সালাম, দুশমনো কো সালাম...রকি মেরা নাম...'' সঞ্জয় দত্তের এককালের হিট ছবির গান। ছবি এবং বাইকে আসীন হিরোর নাম রকি। আমাদের এই প্রতিবেদনের নায়কের নামও রকি। তিনিও দু'চাকায় চেপে ঘুরেছেন। তবে পর্দার হিরোর মতো বাইকে চেপে গান গেয়ে নয়। দু'চাকার সাইকেলে চেপে সচেতনতার বার্তা নিয়ে নদিয়া থেকে দীঘা ঘুরে বাস্তবের হিরো এরাজ্যের রকি মণ্ডল।

Advertisment

নদিয়ার তেহট্টের শ্যামনগর এলাকার বছর চব্বিশের তরুণ গত ২০ নভেম্বর সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়েছিলেন ঘর থেকে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সমাজ যাতে সচেতন হয়। রক্তদান ও প্লাস্টিক বর্জন, এই দুই বার্তা জনমানসে পৌঁছে দিতেই রকির অভিনব সাইকেল সফর।

শনিবার ভোর সাড়ে চারটেয় দীঘা থেকে ঘরে ফেরার পথে বেরিয়েছিলেন রকি। শনিবার সন্ধেয় কৃষ্ণনগরে পৌঁছন তিনি। সেখান থেকেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে রকি বললেন, ''আমি সাইকেলে ঘুরতে ভালবাসি। আগে ট্রেনে-বাসে দীঘা গিয়েছি।তারপরই ঠিক করি যে সাইকেলে যাব। তখনই ভাবলাম, সাইকেলে ঘুরে সচেতনতামূলক বার্তাও তো দিতে পারি। মূলত দুটি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বেরিয়েছিলাম। 'তুচ্ছ নয় রক্তদান, বাঁচাতে পারে একটি প্রাণ' ও 'প্লাস্টিক বর্জন, সুস্থ সমাজের নিদর্শন', এই দুই স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড সাইকেলে লাগিয়ে ঘুরেছি।"

কবে শুরু করেছিলেন এ সফর‍? তরুণ এই সমাজসেবী জানালেন, "গত ২০ নভেম্বর সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেরোই। এরপর কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রাণাঘাট, ব্যারাকপুর, বালি, কোন্নগর, মেচেদা, তমলুক, রামনগর হয়ে দীঘা পৌঁছই। শনিবার ভোর সাড়ে চারটেয় দীঘা থেকে বেরোই। তারপর কলকাতার ধর্মতলা, শিয়ালদহ হয়ে কৃষ্ণনগরে এসেছি। রবিবার সেখান থেকে বাড়ি ফিরব।"

আরও পড়ুন: শব্দদূষণ ঠেকাতে মরিয়া কলকাতার ‘নো হঙ্কিং ম্যান’

রক্তদান ও প্লাস্টিক বর্জন নিয়েই কেন সচেতনতার বার্তা? জবাবে রকি জানালেন, "আমার জ্যাঠতুতো দাদার কিডনির সমস্যা ছিল। ডায়ালিসিস চলছিল। সেসময় রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে খুব মুশকিলে পড়েছিলাম। কার্ড থাকলেও রক্ত সঠিক সময়ে মিলত না। তখনই ভাবতাম, আমাদের দেশে এত ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে, এত রক্তদান শিবির হয়, অথচ রক্তের এত ঘাটতি! নিজে যখন রক্তদান করতে শুরু করলাম, তখন দেখলাম, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই রক্ত দিতে ভয় পান, অনীহা প্রকাশ করেন। সেজন্যই রক্তদান নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়ার কথা ভাবলাম। পাশাপাশি, প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে, ফলে নিকাশির সমস্যা হচ্ছে, মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। সমুদ্রেও প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে, মাছের মৃত্যু হচ্ছে। তাই এ নিয়ে মানুষকে বার্তা দেওয়ার কথা ভাবি।"

west bengal, পশ্চিমবঙ্গ রকির সেই বাহন। ছবি সৌজন্যে: রকি মণ্ডল

কেমন ছিল সাইকেল সফর? বেতাই বি আর আম্বেদকর কলেজের প্রাক্তনী বললেন, "খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাকে দেখে বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন, জানতে চেয়েছেন, উৎসাহ দেখিয়েছেন। বহু পথচলতি মানুষকে বুঝিয়েছি। অনেকেই কথা দিয়েছেন যে আর প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না।" উদাহরণ স্বরূপ রকি শোনালেন, "এক ভদ্রমহিলা ফুল বিক্রি করছিলেন। ওঁকে পরামর্শ দিই, প্লাস্টিকে বিক্রি করবেন না, প্লাস্টিক তো কিনতে হচ্ছে। কাগজের ঠোঙ্গা বানান। ফুল বিক্রির ফাঁকে কাগজের ঠোঙ্গা বানান, তাতে দেখবেন প্লাস্টিক কেনার খরচও কমবে, আর ঠোঙ্গা বেশি বানালে, আপনি সেগুলো বিক্রিও করতে পারবেন। একথা শুনে উনি রাজিও হলেন।"

আরও পড়ুন: মোদীর ‘মন কি বাত’-এ স্বপ্নপূরণের কাহিনী শোনাবেন বাংলার সহিদুল

তবে একলা লড়াইয়ের ভাবনা নিয়েই সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখেছেন রকি। নদিয়ার যুবক বললেন, "কাউকে সেভাবে পাশে পাইনি। একমাত্র বাবা-মা পাশে থেকেছেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথচলতি বহু মানুষকে কাছে পেলাম। এটা বড় প্রাপ্তি।"

সাইকেলে চেপে নদিয়া-দীঘা সফরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টিউশন করার ফাঁকে এবার পাহাড়ে যেতে চান পরিবেশপ্রেমী রকি। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "এবারের অভিজ্ঞতা ভাল হয়েছে, অনেক কিছু উপলব্ধি করলাম। পরের বছর পাহাড়ের দিকে যাব। সাইকেলে চেপে সচেতনতামূলক বার্তা দিতেই যাব।"

kolkata news
Advertisment