সন্ধে নামতে না নামতেই শিরশিরে উত্তরে হাওয়ায় খুব মালুম পড়ছে, শীত আসতে আর বেশি দেরি নেই। আর দিন পনেরোর মধ্যেই আলমারির তাক থেকে বেরিয়ে পড়বে গরম চাদর। শীত যেমন উপভোগ করার জন্য একেবারে আদর্শ ঋতু, তবে এই সময়ে ঠোঁট, ত্বক, চামড়া সব বেশ ফেটে ফেটে যায় শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য। মুখ একেবারে রুক্ষ হয়ে যায়। তবে এই বিয়ে, পার্টি, উদযাপনের মরশুমে একটু সাজগোজ তো করতেই হবে। মুখে ফেসিয়াল মাস্ট। কোন কোন ফেশিয়াল করতে পারেন, তার তালিকা দেওয়া হল পাঠকদের জন্য।
অক্সি ফেসিয়াল:
এই সময়টায় বসন্ত তথা গ্রীষ্মের উপযোগী একটা ফেসিয়াল করিয়ে নেওয়া খুব দরকার। আজকাল ভালো পার্লারে নানা ধরনের ফেসিয়ালের ব্যবস্থা থাকে, আপনার সমস্যা ও ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে তথা রূপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকটি বেছে নিন। মোটামুটি দু’ মাসে একবার ফেসিয়াল করাতে পারলে ত্বক সুস্থ থাকে। যাঁদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে, তাঁদের জন্য অক্সি ফেসিয়াল খুবই উপযোগী। এই ফেসিয়ালটির গুণাগুণ ত্বকের গভীরতম স্তরে পৌঁছে যেতে সক্ষম, ফলে ত্বক ভিতর থেকে নরম, উজ্জ্বল, টানটান হয়ে উঠতে পারে। অক্সিজেন ও স্যালাইন ব্যবহার করা হয় এই ফেশিয়ালটিতে, যা ত্বকের গভীর থেকে ধুলোময়লা টেনে বের করে আনে ও ত্বক এক্সফোলিয়েট করে তাকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে। মাসে এক থেকে দু’বার অক্সি ফেসিয়াল করাতে পারলে শুধু বসন্ত কেন, সারা বছর আপনার ত্বক থাকবে নজরকাড়া!
আরও পড়ুন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রণর দাগ দূর করবেন কী ভাবে?
মিনি হাইড্রা বুস্ট ফেসিয়াল:
যাঁদের সারাদিন অসম্ভব ব্যস্ততায় কাটে এবং নিয়মিত ফেশিয়াল করার সময় নেই, তাঁদের জন্য আদর্শ এই ফেসিয়ালটি। শীতের শুকনো ত্বকে ভরপুর আর্দ্রতা জোগান দেয় এই ফেসিয়াল। তা ছাড়া আরও একটি সমস্যায় এই ফেসিয়াল অত্যন্ত কার্যকর। আমাদের শরীর অ্যান্টি অক্সিডান্টের মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিকালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কোনও কারণে সেই প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যের অভাব দেখা দিলে তার ছাপ পড়ে ত্বকে। এটিকেই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলা হয়। মিনি হাইড্রা বুস্টের সাহায্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কাটিয়ে ওঠা যায় ও ত্বক স্বাভাবিক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে।
ডিএনএ ট্রিটমেন্ট:
সমস্যা আরও গভীরে এবং রুটিন ত্বক পরিচর্যা দিয়ে কাজ হচ্ছে না, তাঁরা নতুন বসন্তে স্কিন ট্রিটমেন্ট করানোর কথা ভাবতে পারেন। ত্বকের ধরন ও সমস্যার গভীরতা অনুযায়ী নানাধরনের অভিনব ট্রিটমেন্ট করানোর ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন সালোেন। ভিএলসিসি-র সালোনগুলোয় ডিএনএ স্কিন ট্রিটমেন্ট নামে একটি নতুন ধরনের ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জেনেটিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে তবেই ট্রিটমেন্টের ধারা ঠিক করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ত্বকের ধরন, ত্বকে ক্ষতির পরিমাণ, পিগমেন্টেশনের মতো নানা দিক খতিয়ে দেখে তবেই তাঁর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্কিনকেয়ার রুটিন বেছে নেওয়া হয়। পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। সঠিক পরিচর্যা আর ডায়েটের কম্বিনেশনে বসন্তের প্রাক্কালে ত্বক হয়ে ওঠে জৌলুসে ভরপুর!
আরও পড়ুন, জুতো মোজা পরলেই পায়ে গন্ধ হচ্ছে? এখন উপায়?
মেসো গ্লো বা মেসো থেরাপি:
রূপ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি এটি। অন্যান্য ট্রিটমেন্ট পদ্ধতির সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবহার করা হয় এই থেরাপি এবং ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনতে এই থেরাপিটি বিশেষ কার্যকর! তবে মেসো থেরাপিতে প্রশিক্ষণ রয়েছে, এমন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই এই ট্রিটমেন্টটি করান।
কার্বন পিলিং:
দাগছোপ, বলিরেখা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটিও বেশ জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মুখের উপর কার্বন পাউডারের একটি পাতলা আস্তরণ লাগিয়ে তা লেসারের সাহায্যে গরম করে তারপর লেসার দিয়েই তুলে ফেলা হয়। এর ফলে ত্বকের ভালোভাবে এক্সফোলিয়েশন হয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। বড়ো হয়ে যাওয়া রোমছিদ্র সঙ্কুচিত করতে এবং বলিরেখা কম করতেও কার্বন পিলিং খুবই উপযোগী।
ফোটোরিজুভেনেশন:
রোদে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা কমানো যায় এই পদ্ধতিতে। ফ্র্যাকশনাল লেসার প্রয়োগ করে বলিরেখা, বয়সজনিত দাগছোপ, ব্রণর ক্ষত নির্মূল করে ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে এই পদ্ধতিটি কার্যকর।