দুর্গা পুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল সন্ধি পুজো। মহাষ্টমী এবং মহানবমীর সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয় বলে একে 'সন্ধি পুজো' বলা হয়। মহাষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং মহানবমীর প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ ৪৮ মিনিট ধরে চলে সন্ধি পুজো। ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ সন্ধি পুজোর ক্ষেত্রে দরকার পড়ে। সন্ধি পুজোয় দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় চামুণ্ডা রূপে।
যখন মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী যুদ্ধ করছিলেন, সেই সময় চণ্ড ও মুণ্ড দেবীকে আক্রমণ করেছিল। চণ্ড ও মুণ্ড ছিল মহিষাসুরের দুই সেনাপতি। তাদের দেবী দুর্গা বধ করেছিলেন। সেই থেকে দেবীর নাম হয় চামুণ্ডা। চণ্ড ও মুণ্ডকে যে সন্ধিক্ষণে দেবী বধ করেছিলেন, তাকে স্মরণে রেখেই সন্ধি পুজোর আয়োজন করা হয়।
অনেকে আবার অষ্টমীর রাতে দেবী দুর্গার পুজো করার সময় অশোক গাছের নটি পাতা, একটি কলসি দেবী দুর্গার ছবির সামনে রেখে ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ইন্দ্রাণী এবং চামুণ্ডা দেবীর পুজো করেন। তারপর দেবী দুর্গার মন্ত্র ১০৮ বার জপ করেন।
আরও পড়ুন- অষ্টমীর অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পুজো, কেন পালন করা হয় এই আচার?
পুরাণ অনুযায়ী, এই সন্ধিপুজোর সন্ধিক্ষণে দেবী কালিকার জন্ম হয়েছিল দেবী অম্বিকার তৃতীয় নয়ন থেকে। পরাক্রমশালী অসুর রক্তবীজের সমস্ত রক্ত দেবী কালিকা পান করেছিলেন। এই সন্ধিক্ষণে ক্ষণিকের জন্য হলেও দেবীর অন্তরের সমস্ত স্নেহ-মমতার অবসান ঘটে বলে মনে করা হয়। এজন্য সন্ধিপুজো চলাকালীন দেবীর দৃষ্টির সামনে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। দৃষ্টিপথ পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সন্ধিপুজোয় পুজোর শেষধাপ অর্থাৎ শেষ ২৪ মিনিটে বলিদান সম্পন্ন হয়। সাধারণত ছাগলের পাশাপাশি কোনও কোনও জায়গায় আখ, কলা, চালকুমড়ো ইত্যাদি দেবীকে বলি দেওয়া হয়ে থাকে। কথিত আছে, সংযমী হয়ে ভক্তিভরে নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাসী থেকে সন্ধিপুজো করলে যমের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। অর্থাৎ মৃত্যুর সময় দেবীর কৃপায় যমের স্পর্শও রোখা যায়। আবার বলা হয়, নিষ্ঠা এবং ভক্তির সঙ্গে সন্ধিপুজো করলে যে ফল পাওয়া যায়, তা সারাবছর পুজোয় ফললাভের সমকক্ষ। এবছর সন্ধিপুজো শুরু হচ্ছে দুপুর ৩টে ৩৬ মিনিটে। সন্ধিপুজো শেষ হবে বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে।