আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জেরে গোটা বিশ্বজুড়েই পরিবেশের দফারফা। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ঘুম ছুটিয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। যে ভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত জল ও জ্বালানি তলানিতে এসে ঠেকেছে , তাতে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার সামনে যে বিশাল সংকট এসে উপস্থিত হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখনই জলযন্ত্রণার কবলে ভারতের একাধিক রাজ্য। কিছুদিন আগেই এক ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে একফোঁটা জলের জন্য কীভাবে গভীর কুয়োয় নামছেন গ্রামের মহিলারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে, কোথাও প্রবল জলের আকাল পড়বে। কোথাও আবার বন্যায় ভেসে যাবে।
২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের ৩০ টি শহরে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে ‘জল সংক্রান্ত ঝুঁকি’। যে তালিকায় আছে কলকাতাও। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’-এর (ডব্লুউ ডব্লুউ এফ) একটি সমীক্ষায় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ভারতের জলসংকটের মুখে ভারতের একাধিক শহর। মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড এবং হরিয়ানার একাধিক জেলায় তীব্র জলসংকটের ছবি স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দ্রুত গতিতে নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবের মতো বিষয়ের ফলে প্রবল জলসংকটের মুখে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন শহর।
গত কয়েক বছর ধরে চেন্নাই থেকে শিমলার মতো শহরে জলসংকট প্রবল হয়েছে। জল-সমস্যায় ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। তারপরও যে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, তা নয়া সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তনের জেরে তীব্র গরমে নাজেহাল আমরা সকলেই। পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস।
১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় উষ্ণতম মাসের তকমা পেল এপ্রিল। তার সঙ্গেই অসমের ভয়াবহ বন্যা! আমাদের জীবন ও জীবিকাকে রীতিমত হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বারে বারেই জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে। প্রযুক্তি এসে যেমন আমাদের জীবন যাপনকে সহজ করেছে, তেমনই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে পরিবেশের ওপরে। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার ওপরেই বর্তায়। একটু চেষ্টা করলেই পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারি আমরাও। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সংকল্প হয় পৃথিবীকে বাঁচানোর। কতগুলি সাধারণ বিষয় মেনে চললেই আমরা জলবায়ুর এই সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারি। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী!
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির পর মহারাষ্ট্রে রেকর্ড সংক্রমণ, ভিড়ে মাস্ক পরার আবেদন
শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জেরে গোটা বিশ্বজুড়েই পরিবেশের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ঘুম ছুটিয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। বিশ্ব উষ্ণায়ণ থেকে বাঁচতে আমাদের সকলের উচিত গাছ লাগানো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং বিশ্ব উষ্ণায়ণের হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে গাছ লাগানো অন্যতম সেরা উপায়। গাছ বাঁচলে বন্যপ্রাণীও বাঁচবে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে।
পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার আমাদের সকলের বর্জন করা উচিৎ। বর্ষার সময় জলযন্ত্রণার কবলে কলকাতা থেকে অসম। আর এই জলযন্ত্রনার অন্যতম কারণ হল প্ল্যাস্টিক। প্লাস্টিকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। এমনকি মৃত্যু হচ্ছে নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীরও। ভূগর্ভস্থ জল কমে আসছে। তাই আমদের আজ থেকেই জলের অপব্যবহার রোধে এগিয়ে আসতে হবে। জল নষ্ট যাতে না হয়, সেদিকে আমাদের সবার দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
লকডাউনের ফলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছিল বহুগুণে। বড় বড় মেট্রো শহর আজ বায়ু দূষণে আচ্ছন্ন। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশ বাঁচাতে বিশুদ্ধ বাতাস বিশেষ ভাবে কার্যকর। আমাদের পেট্রোল-ডিজেলের পরিবর্তে ইকো ফ্রেন্ডলি পরিবহনে জোর দিতে হবে। বলাই বাহুল্য, একথা মাথায় রেখেই কলকাতার রাস্তা দিয়ে আজ ছুটে চলেছে ব্যাটারি চালিত বাস।গ্রিন হাউস গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইডের মত ক্ষতিকারক গ্যসের ব্যবহার কমাতে হবে। প্রয়োজনে সোলার সিস্টেমে আমাদের আরও বেশি করে নজর দিতে হবে।
বেশি করে গোটা শস্য, ফল, বাদাম, শাকসবজি খান, রেড মিট এড়িয়ে চলুন। রান্নাঘরের ট্র্যাশ রিসাইকেল করুন। জিনিসগুলিকে ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে কতবার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি করুন। আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে দিন। কাঠ বেশিরভাগই কাগজ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, আপনি যেভাবে পারেন কাগজের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন। অনলাইন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পদ্ধতি বেছে নিন।