এ বছর পরিবেশ দিবস উদযাপনের মেজাজ নেই এ শহরের। দীর্ঘ সময় পর আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে জীবন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে খুলছে অফিস কাছারি। আড়াই মাস একরকম স্তব্ধ থাকার পর রাস্তায় নেমেছে যানবাহন। তবে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং? আদৌ কি তা মানা সম্ভব কলকাতার মতো মেট্রো শহরের বাস, ট্রাম, অটোয়? পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে এই শহরে কতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে সাইকেল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখলে সাইকেল সবচেয়ে উপযোগী যান। একদিকে পরিবেশবান্ধব, তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যে নিঃসন্দেহে উপকারী। অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক সামর্থ্যের কথা মাথায় রাখলে দেখা যাবে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য সাধ্যাতিরিক্ত খরচ বাঁচাতেও দু-চাকার ওপর ভরসা রাখা যায় অনায়াসেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল কলকাতা সাইকেল সমাজের সদস্য এবং বাইক্স সংগঠনের কলকাতা শাখার মেয়র শতঞ্জীব গুপ্তের সঙ্গে। তাঁর কথায়, "পশ্চিমের দেশগুলোতে, বিশেষ করে ইওরোপের ডেনমার্ক, হল্যান্ডে এত বেশি মানুষ সাইকেল চালান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সারা বছরে ওই সব দেশে ৫ কোটি গাছ লাগালে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড যতটা কমানো সম্ভব, ততটাই হয় ডিজেল পেট্রোল চালিত যানের পরিবর্তে সাইকেল চালিয়ে। গবেষণা বলছে ওসব দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গিয়েছে শুধুমাত্র সাইকেল চালিয়ে। বর্তমানে এত যে ইমিউনিটি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, তাও তো নিয়মিত সাইকেল চালালে অনেকটাই সম্ভব।
কলকাতা এবং হাওড়ার বাইসাইকেল মেয়রদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো মেইল।
আরও পড়ুন, করোনা নয়, দুনিয়াজুড়ে দূষণ বাড়ানোয় নতুন খলনায়ক মাস্ক-গ্লাভস
লকডাউন চলার সময়ে কিছুটা বাধ্যতাজনিত কারণেই সাইকেল নিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত শুরু করেছেন এই শহরের বেশ কিছু মানুষ। লকডাউন শিথিল হয়ে আসার পরেও সেই অভ্যেস আর বদলাতে চাইছেন না অনেকেই। কিন্তু কলকাতার মতো শহরে নিয়মিত সাইকেল চলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রসাশনের কী করণীয়? "অবিলম্বে সাইকেল লেন চিহ্নিত করা দরকার। বড় বড় রাস্তার ধারে ৪-৫ ফুট জায়গা আলাদা করে চিহ্নিত করে দিলেই ব্যাপারটা খুব অসুবিধেজনক রইবে না। পুলিশকে শুধু একটু খেয়াল রাখতে হবে ওইটুকু জায়গা যাতে দখল না হয়। সাইকেল মেরামতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও যেন থাকে, সেদিকে প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে। আর সাইকেল পার্কিং এর জায়গা তৈরি করে দিতে হবে"। কলকাতার ৬৪ টি বড় রাস্তায় এখনও সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ, অবিলম্বে এই বিষয়ে যাতে রাজ্য প্রসাশন কিছু পদক্ষেপ করেন, সেই লক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে BYCS এর কলকাতা ও হাওড়ার বাইসাইকেল মেয়ররা যৌথভাবে করেছি। ", জানালেন শতঞ্জীব বাবু।
দেশে বিদেশে সাইকেল নিয়ে প্রায়শই সোলো অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়েন লিপিকা বিশ্বাস। তিনিও মনে করেন সাইকেল শুধু অ্যাডভেঞ্চারের জন্য নয়, ভারতের মতো গরিব দেশে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে এটিই সবচেয়ে কম খরচ সাপেক্ষ। "সাইকেলের তেমন কোনও মেন্টেন্যান্স খরচ লাগে না, সামান্য যত্ন করলেই হয়। করোনা পরবর্তী সময়ে এত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, আয় কমেছে রাতারাতি, এই অবস্থায় বাস অটোয় যাতায়াত করার সামর্থ্যই নেই অনেকের। আর তাছাড়া বিদেশে একটা জিনিস হয়, এখানে হয় না। বিদেশে মানুষের হাতে টাকা থাকলেও গাড়ি না কিনে অনেকে সাইকেলেই যাতায়াত করেন, পরিবেশের প্রতি মানুষের কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। আমাদের দেশে কিন্তু স্ট্যাটাস সিম্বলের একটা প্রশ্ন এসে যায়। এখানে একটা সংস্কৃতি রয়েছে, সাইকেল যেন শুধুই নিম্নবিত্ত মানুষের যান। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মানুষকে ট্যাফিক নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নইলে একই রাস্তায় বড় গাড়ি আর সাইকেল চালানো সম্ভব না। তাতে কী হবে সাইকেল আরোহীদের প্রতি বড় যান চালকদের বিরক্তি তৈরি হয়, সেটা কখনওই কাম্য নয়"।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন