অনাবৃত ২৩: পুরুষসঙ্গীর স্ত্রীকে কীভাবে সরাতে চায় হৈমন্তী?‌

প্রচেত গুপ্তের ধারাবাহিক গোয়েন্দা উপন্যাস: ‘‌তোমরা মেয়েদের ইচ্ছে, অনিচ্ছে, তৃপ্তি অতৃপ্তি নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রয়োজনও বোধ কর না। কারণ নেচার এমন ভাবে পুরুষের শরীর তৈরি করেছে যে তার স্যাটিসফ্যাকশনের কখনই নারীর স্যাটিসফ্যাকশনের ওপর নির্ভরশীল নয়।’

প্রচেত গুপ্তের ধারাবাহিক গোয়েন্দা উপন্যাস: ‘‌তোমরা মেয়েদের ইচ্ছে, অনিচ্ছে, তৃপ্তি অতৃপ্তি নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রয়োজনও বোধ কর না। কারণ নেচার এমন ভাবে পুরুষের শরীর তৈরি করেছে যে তার স্যাটিসফ্যাকশনের কখনই নারীর স্যাটিসফ্যাকশনের ওপর নির্ভরশীল নয়।’

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pracheta Gupta, Anabrito

অলংকরণ- অরিত্র দে

পুরুষটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলেছিল, ‘‌তা কী করে হয়!‌ আমি শুধু জামাকাপড় খুলব?‌‌’‌
হৈমন্তী বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেছিল, ‘কেন,‌ হবে না কেন?‌ তোমার কি মেল শভিনিজ্‌মে লাগছে?‌’
‘তা বলিনি।’‌
হৈমন্তী ঠোঁটের কোণে ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলে, ‘আসলে কী জানো, পুরুষমানুষের কামনাকে প্রাধান্য দেওয়াটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে। সে যখন তার স্ত্রী বা প্রেমিকাকে নগ্ন দেখতে চাইবে, মেনে নিতে হবে মাথা পেতে। শুধু স্ত্রী আর প্রেমিকা কেন?‌ পয়সা দিয়ে কোনো নারীর কাছে গেলেও এক মানসিকতা। পুরুষ নারী শরীরকে যেভাবে চাইবে সেটাই। কেন?‌’‌

Advertisment

পুরুষটি হাসবার চেষ্টা করে। বলে, ‘‌তুমিও তো ফেমিনিস্টদের মতো কথা বলছো। পুরুষবিদ্বেষী।’‌

হৈমন্তী বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে বলল, ‘‌ফেমিনিজিম মানে পুরুষহবিদ্বেষী কে বলল?‌ সম অধিকারও তো হতে পারে। তুমি যদি তোমার সেক্সকে নানা ভাবে এনজয় করতে চাও, আমারও সে অধিকার রয়েছে। তাই নয় কী?‌ কথাটা পুরোনো বলে এড়িয়ে যেতে পারও তাতে ফল হবে না কিছু। তোমরা মেয়েদের ইচ্ছে, অনিচ্ছে, তৃপ্তি অতৃপ্তি নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রয়োজনও বোধ করও না। কারণ নেচার এমন ভাবে পুরুষের শরীর তৈরি করেছে যে তার স্যাটিসফ্যাকশনের কখনই নারীর স্যাটিসফ্যাকশনের ওপর নির্ভরশীল নয়।’‌

হৈমন্তী মদ বেশি খায় না। পার্টিতে লিমিটের মধ্যে থাকে। বাড়িতে খেলে হয়তো কোনও কোনওদিন একটু বেশি নিয়ে ফেলে। সেদিন যেমন দুটো শেষ করে তিন নম্বরে হাত বাড়িয়েছিল। নেশাও হতে থাকে। সেই নেশা জমাতে তিন নম্বর ক্যানও গলায় উপুড় করে নিয়েছিল।

Advertisment

‘‌যদি মিস্টার গড, এমন ভাবে পুরুষমানুষের শরীরের কলকব্জা বানাতেন যাতে পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটির ইচ্ছে ছাড়া কোনও ফাংশন অন হবে না, তাহলে কী হতো একবারে ভাবতে পারছো স্যার? ক্যান ইউ ইমাজিন?‌‌ হাতে পায়ে ধরে কেঁদে কঁকিয়ে মরতে হতো তোমাদের। দাস হয়ে থাকতে সব। স্লেভ।’‌

কথা শেষে জোরে হেসে উঠেছিল হৈমন্তী।
‘‌‌তুমি টিপসি হয়ে যাচ্ছো হৈমন্তী?‌’‌
হৈমন্তী বলল, ‘‌এনি প্রবলেম?‌ তোমার কোনো সমস্যা আছে।’‌
‘‌না না আমার কী সমস্যা?‌ হৈমন্তী তোমাকে একটা সিরিয়াস কথা বলতে চাই।’‌
হৈমন্তী চতুর্থ ক্যান খুলে বলল, ‘‌বল। তোমাদের সিরিয়াস কথায় আমার মজা লাগে। জোকস বলে মনে হয়।’‌
পুরুষমানুষটি হৈমন্তীর কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, ‘‌তোমাকে আমি ভালবাসি হৈমন্তী।’‌
হৈমন্তী অবহেলায় বলেছিল, ‘‌তাই!‌’‌
‘‌তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’‌

হৈমন্তী এই কথার কোন জবাব না দিয়ে চতুর্থ ক্যানটিও শেষ করতে থাকে।
‘‌সত্যি বলছি হৈমন্তী। আই হ্যাভ ডিসাইডেড। আমি তোমাকে বিয়ে করব।’‌
হৈমন্তী বলল, ‘‌তা কর। সমস্যা কী?‌’
‘‌তুমি রাজি আছ?‌’
হৈমন্তী সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না।

‘‌আমি তো কোনওদিনই এই ধরনের প্রস্তাবে আপত্তি করিনি। আমার অতীত তো তুমি জান। জান না? তখনও আমি কোনো কথা বলিনি। দুজনেই অপমান করল। ভালোবেসে ফেলেছিলাম বলে ঠকালও।’

সেই পুরুষ হৈমন্তীর কাছ ঘেঁষে আসে।‌ বলে, ‘‌আমি তোমাকে ঠকাতে চাই না। চাই না বলেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’‌
‘‌অতি উত্তম প্রস্তাব। তাহলে বউকে ডিভোর্স দাও।’‌
পুরুষটি বলে, ‘‌এটাই তো সমস্যা হৈমন্তী। ওকে আমি ডিভোর্স দিতে পারব না।’‌
হৈমন্তী ঢুলু ঢুলু চোখে বলল,‘‌বউকে ডিভোর্স না দিলে আমাকে বিয়ে করবে কী করে!‌ দুটো বউ রাখবে?‌’‌
‘‌জানি না।’‌
হৈমন্তী ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করেছিল, ‘‌ডিভোর্স দিতে পারবে না কেন?‌’
পুরুষ আমতা আমতা করে উত্তর দিয়েছিল, ‘বিয়ের সময় আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম।’‌

হৈমন্তীর নেশা যেন আরও চড়ল। বলল, ‘‌সে আবার কী!‌ কীসের প্রতিশ্রুতি?‌ ডিভোর্স করতে পারবে না?‌ এমন প্রতিশ্রুতি হয় নাকি?‌’
‘‌না‌ তা নয়। আমি লিখে দিয়েছিলাম, যদি কোনওদিন ছাড়াছাড়ি হয়, আমি কমপেনশেসন হিসেবে ফ্ল্যাট, গাড়ি, ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ের সিংহ ভাগটা দিতে বাধ্য থাকব। আমি তো নিঃস্ব হয়ে যাব।’
হৈমন্তী কাঁধ ঝাঁকিয়ে ‌বলল,‘‌ইমপসিবল্‌। এমন‌ কন্ডিশন আবার হয় নাকি?‌ এর কোনো লিগাল জাস্টিফিকেশন নেই। এমন উদ্ভট একটা শর্তে তুমি গিয়েছিলেই বা কেন?‌’‌

পুরুষটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘‌ভুল করেছিলাম হৈমন্তী। গ্রেট মিসটেক। সেদিন আবেগের বশে কোর্ট পেপারে সই করেছিলাম। এই কাগজ লিগ্যাল নয় সেটা প্রমান করতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমি বিশ্রী ভাবে আটকে গিয়েছি। হৈমন্তী তুমি একটা ব্যবস্থা কর।’ কথা শেষ করে পুরুষটি দু’‌হাতে মুখে ঢেকে বসে থাকে।

হৈমন্তী বলে, ‘‌কী‌ ব্যবস্থা করব?‌’‌
পুরুষটি চুপ করে থেকে নিচু গলায় বলেছিল, ‘‌আমি জানি না। একমাত্র পথ ও যদি নিজে থেকে সরে যায়।’
হৈমন্তী  ঠান্ডা ভাবে বলে, ‘‌কথা বল।’‌
‘‌লাভ হবে না। আমার কাছে যুক্তি নেই। কী বোঝাব?‌’‌
হৈমন্তী কাঁধ ঝাকিয়ে বলে, ‘‌কেন? আমাকে বিয়ে করবে এটাই কি যথেষ্ট যুক্তি নয়?‌’‌‌
পুরুষটি বলে, ‘‌কে বোঝাবে?‌ রাজি হবে কেন?‌’
হৈমন্তী অবাক গলয় বলে,‘‌হবে নাই বা কেন?‌ স্বামী আর এক মহিলার সঙ্গে থাকতে চাইছে এটা তো একজন স্ত্রীর পক্ষে অপমানের। নয় কী?‌’ ‌ ‌
পুরুষটি বলল, ‘‌সবাই তোমার মতো নয় হৈমন্তী। ঐন্দ্রিলের বেলায় তুমিই টাকা দিয়েছিলে।’‌
হৈমন্তী বলল, ‘‌তুমিও গাড়ি, বাড়ি, টাকা স্যাকরিফাইজ কর।’‌
‘‌অত টাকা!‌’‌
হৈমন্তী বলল, ‘‌তাহলে আমাকে ত্যাগ‌‌ কর।’‌

পুরুষটি হাত বাড়িয়ে হৈমন্তীর হাত চেপে ধরেছিল।
‘‌আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না হিমি। আই কান্ট। এই মিথ্যে দাম্পত্য আমাকে প্রতি নিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে।’‌
হৈমন্তী একটু ভেবে বলেছিল, ‘‌কী চাইছো?‌ স্পষ্ট করে বল।’‌
‘‌তুমি একটা পথ বের কর হৈমন্তী।’‌
হৈমন্তী গলা নামিয়ে বলে, ‘‌কীসের পথ?‌’‌
পুরুষটি চকচকে চোখে বলল, ‘‌বুঝতে পারছো না?‌ আমাদের একসঙ্গে থাকবার পথ।’‌
হৈমন্তী চোখ সরু করে বলল,‌ ‘আমাকে ভাবতে দাও।’‌

‘‌ভাবতে দাও’‌ নয়, হৈমন্তী বলতে চেয়েছিল ‘‌জানতে দাও’‌। এই  পুরুষটি তাকে বিয়ে করতে কেন এত উতলা?‌ কেনই বা তার কাঁধে বন্দুক রেখে বউয়ের দিকে গুলি চালাতে চাইছে?‌‌ কে জেনে দেবে?‌ সমস্যা নেই।‌ তিনজন পুরুষের বাকি দু’‌জন তো রয়েছে। তারা কাজ করবে। এদেরই একজন সুশান্ত। সেই সুশান্তর সঙ্গে একদিন ডিনারে বসল হৈমন্তী। কবে যেন আড্ডার সময় শুনেছিল, সুশান্তর কোন এক বন্ধু কলকাতা ইনসিওরেন্স কোম্পানির বড় পোস্টে রয়েছে। শুরুটা ইনসিওরেন্স অফিস বা ব্যাঙ্ক থেকে করাই উচিত।
‘‌সুশ্‌, একটা নাম আর অ্যাড্রেস দেব। তার বা তার স্ত্রী ইনসিওরেন্স অ্যামাউন্টগুলো জেনে দিতে হবে।’‌
‘‌মি, কাজটা খুব জটিল। তাও চেষ্টা করব।’‌
সুশান্ত চেষ্টা শুধু করেনি, কাজটা করেও দিয়েছিল। শুনে অবাক হয়েছিল হৈমন্তী। এরপরে আরও খোঁজ পায়। ব্যাঙ্কে রাখা টাকা, ফ্ল্যাট, গাড়ির সব। মাথায় আগুন জ্বলে উঠল হৈমন্তীর। অতীতের আগুন, অপমানের আগুন। সে ফোন করে। কথা বলে ঠান্ডা গলায়।

‘‌আমি তোমার স্ত্রীকে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করব। ’‌
পুরুষকণ্ঠ একই সঙ্গে উচ্ছ্বসিত এবং উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘‌করবে?‌ কীভাবে?‌ ওকে বোঝাবে?‌’‌
হৈমন্তী দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, ‘‌সে জেনে তোমার দরকার কী? পরে আমাকে বিট্রে করবে না তো?‌’‌
‘‌কী বলছো হিমি। আমিই তো তোমাকে বলেছিলাম.‌.‌.‌। ও কি ডিভোর্স করতে রাজি হবে?‌’
‌‌ হৈমন্তী দাঁতে দাঁত চেপে হেসে বলেছিল, ‘‌তাতে তো শুধু আমাকে পাবে, আমি আরও বেশি করব।’‌
‘‌হিমি!‌ কী বলছো!‌’‌
হৈমন্তী বলল, ‘‌কী বলছি তুমি বুঝতে পারছো। মনে রাখবে, টাকা পয়সা ফ্ল্যাট গাড়ি সব ফিফটি ফিফটি ভাগ হবে। না, গাড়ি আমার লাগবে না। ফ্ল্যাটটা আমাকে দিও। ওটা আমার পছন্দ। নতুন ফ্ল্যাট। কলকাতায় আমার থাকবার জায়গা নেই।’‌
পুরুষকণ্ঠ  কাঁপা গলায় বলল, ‘‌মনে হয় আমি খানিকটা আঁচ করতে পারছি।’
‌হৈমন্তী সামান্য হেসে বলল, ‘তোমার আঁচ করবার দরকার নেই। শুধু এটুকু মনে রেখ নরম হৈমন্তী কঠিনও হতে জানে। খুব কঠিন। আচ্ছা, একটা কথা বল তো অন্যের অপরাধের রিভেঞ্জ কি আর একজনের ওপর নেওয়া যায়?‌ যদি সে একই অপরাধ করে?‌’

‌পুরুষকণ্ঠ  বলল, ‘‌মানে!‌’‌
হৈমন্তী গলা আরও নামিয়ে বলল, ‘‌মজা করলাম।’‌
খুব সুইম করতে ইচ্ছে করছে, ‌কিন্তু পুলে যাওয়া যাবে না। সুইম ট্রাঙ্ক নেই। সুইম ট্রাঙ্ক ছাড়া নামতে দেবে না। পুকুর বা দিঘি থাকলে এই সমস্যা হত না। সেখানে যা খুশি পরে নামা যায়। বাথ রোব খুলে ফেনা ভরা বাথটাবে গা এলিয়ে দিল হৈমন্তী। গুন গুন করে গেয়ে উঠল—
‘‌ফর দ্য আদার হাফ অফ দ্য স্কাই/‌ উওম্যান আই ক্যান হার্ডলি এক্সপ্রেস।’‌

————————
ধারাবাহিক এই গোয়েন্দা উপন্যাসের সব পর্ব পড়ুন এই লিংকে

Anabrito