Advertisment

বেলুড়মঠের নৈশ রূপ

দোতলার ঘরটিতে একটি অনির্বাণ আলো জ্বলছে। এত রাত্রে তিনি জেগে আছেন? বাইরের দিকের সিঁড়ি বেয়ে নিঃশব্দে দোতলার বারান্দায় উঠলাম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dhulamatir Baul

অলংকরণ- অভিজিত বিশ্বাস

যে-কোনো মন্দির, চার্চ, বিহার কিংবা মসজিদের একটি রাত্রিকালীন রূপ আছে। মানুষ সাধারণত দিনের বেলাতেই যান, তাই রাতে এসব কেমন দেখায়, বেশিরভাগ মানুষ জানেন না। মঠবাস করেছি বলেই দেখেছি সেই অপার্থিব রূপের বিথার।

Advertisment

বেলুড় মঠের একটি আশ্চর্য নৈশ রূপ আছে!

মঠ কখনও পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ে না। এতজন সেখানে থাকেন, কেউ-না-কেউ জেগে থাকেন নানা প্রহরে। কিন্তু সেই জেগে থাকা প্রায় শব্দহীন। কোথাও হয়ত একটি ঘরে স্তিমিত আলো জ্বলছে। কোথাও-বা ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়ার ছন্দোময় ধ্বনি। ঘাসে শিশির পড়ার অশ্রুতিসম্ভব শব্দ। রাতচরা পাখির ডানার মৃদু কম্পন। ভোর হয়ে গেছে ভেবে ভুল করে হঠাৎ পাখিদের অলৌকিক ডেকে ওঠা। তারপর আবার সীমাহীন নৈঃশব্দ্য।

সেই সীমাহীন নীরবতার ভিতর সুপ্তিমগ্না গঙ্গার স্রোতোমর্মর। নদী তো ঘুমের ভেতরেও চলে, থামতে জানে না। তবু সেই চলা রাত্রে কিঞ্চিৎ আমন্থর। অন্তত ভাটা থাকলে। জোয়ারের রাত্রি অবশ্য অন্যরকম। তখন গঙ্গা চলোর্মিমুখরা বালিকার মতন দু-চোখের পাতা এক না করে রাতের বেলাতেও চ্ছলোচ্ছলো শব্দে অতন্দ্র জেগে থাকে। তার ঢেউ  মায়ের ঘাট, স্বামীজীর ঘরের সামনের ঘাটের ধাপ একটি একটি করে গ্রাস করে নেয়। ভোরে জল সরে গেলে দেখা যায়, কাদামাখা পৈঠার উপর সে রেখে গেছে জলজ শৈবাল, কচুরিপানা আর তার ধুলামলিন পদচিহ্ন।

আরও পড়ুন, পিতৃতন্ত্র ও যৌনতা: প্রাচীন বাংলা কাব্য থেকে উনিশ শতকের পরম্পরা

এমন অপার্থিব রজনীতে ফুটে ওঠে বেলুড়ের নৈশ রূপ। সর্বদক্ষিণে সন্ন্যাসীদের শ্মশানভূমির উপর কৃষ্ণচূড়ার নভোবিস্তারী ডালপালা তামসী রাত্রিকে অবসিত যুগের গল্প শোনায়। অদূরে নিস্তব্ধ বিল্বমূল—যার নীচে কতদিন সশিষ্য বা একাকী গঙ্গাভিমুখে বসে থেকেছেন স্বামী বিবেকানন্দ—এখানে এখন সমাসন্ন প্রভাতের ইশারার দিকে জোনাকিসবুজ চোখ জ্বেলে বসে আছে উদ্গ্রীব জ্যোৎস্না। স্বামীজীর মন্দিরের আকাশস্পর্শী চূড়ার উপর ভাসমান ছিন্ন মেঘমালা; চাঁদের আলোয় যেন ধ্যাননিমগ্ন বিভূতিভূষিতাঙ্গ শশাঙ্কশেখর। তারপর সেই ঊর্ধ্বমুখ দেওদার, যার অয়স্কঠিন পত্রবহুল শাখা হতে ক্ষরিত হয় সৃষ্টির আদিমতম অনাহত প্রথম ওঁকারধ্বনি।

তারপর সুনীরব সেই মা-জননীর মন্দির। বিন্দুবাসিনী যেন বিন্দুতে বিরাজিতা । দু-পাশের দুই মন্দির গঙ্গার থেকে বিপরীতমুখী। শুধু মায়ের মন্দিরটির মুখ গঙ্গার দিকে ফেরানো। গঙ্গা মায়ের প্রিয়সখী,তাই। মধ্যযামে মন্দিরের বন্ধ দরজার সামনে আজও কি কেউ গায় আধোস্ফুট গুঞ্জরণে ‘ওঠো গো করুণাময়ী, খোলো গো কুটিরদ্বার; আঁধারে হেরিতে নারি, হৃদি কাঁপে অনিবার’? গায় নাকি কেউ সেই গান? হয়ত গায়। কান পাতো, নিশ্চয়ই শুনতে পাবে।

মায়ের মন্দিরের সামনে মায়ের ঘাট। সারি সারি ধাপ গঙ্গার মধ্যে গিয়ে ডুব দিয়েছে। গঙ্গাবক্ষে পড়ে জ্যোৎস্না চিকচিক করছে ব্যাকুল প্রেমিকের প্রেমার্ত কপোলের উপর শুকিয়ে থাকা অশ্রুরেখার মতো। পরপারে কুঠিঘাট, বরানগর, কাঁচের মন্দির, ঘুমন্ত উত্তর কলকাতা...মৃদু সব আলোর অটল দেউল। অন্ধকারের  ভিতর জড়ামড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকা কলের চিমনি। ওইদিকে কাশীপুর মহাশ্মশানে জ্বলে উঠছে চিতাগ্নির আলোক। কেউ হয়ত চলে যাচ্ছেন আজ রাত্রে। ওই সেই ইতিহাসস্পন্দিত শহর—হয়ত ওরই কোনো কক্ষে আজ রাতে এই মুহূর্তে পৃথিবীতে নেমে আসছেন কেউ...স্তব্ধবাক রাত্রি মূকভাষায় জীবনের কত গল্প শোনায়।

গঙ্গার এই তীরে শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির চাঁদের কিরণ গায়ে মেখে চন্দ্রাতপের নীচে সুগম্ভীর ধ্যানে ডুবে আছে। বিভাবরীর হৃৎপদ্মে এসে বসেছেন প্রেমের ভূপতি, তাঁর চরণে মূর্ছে পড়েছে প্রপন্ন ভ্রমর। স্থান-কাল-পাত্র অবলীন; বুদ্ধির অগম্য কোন্‌ আনন্দবারিধির ইঙ্গিত তাঁর অর্ধনিমীলিত নেত্রে, ঈষৎ-উন্মুক্ত ওষ্ঠাধরে মুকুলিত হাস্যরেখায়।

আরও পড়ুন, দেবেশ রায়ের কলাম মনে পড়ে কী পড়ে না

মায়ের মন্দিরচত্বর পেরিয়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দের মন্দির। শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র, প্রথম সঙ্ঘাধিনায়ক—স্বামীজীর প্রিয়সহচর রাখালরাজ। সেই মন্দিরের ভারি ভারি থামের ছায়া সুপ্রাচীন দ্বারকানগরীর স্তম্ভের স্মৃতি আনে কোনো মরমীর মনে। কোনো এক না-ঘুমোনো দূরদেশী কিশোরের বাঁশীর সুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেরে কেন আজও এই রাত্রির বাতাসে? এ তো যমুনা নয় গো, এ যে গঙ্গা! এখানেও কি অভিনীত হবে আবার সেই পুরাতন অথচ চিরনবীন অভিসাররাত্রি? যামিনীচর পাখি গাছের শাখায় উড়ে বসবে, থরথর করে কাঁপবে অন্ধকারে বেপথুমান পত্ররাজি, সেই মৃদু কম্পনশব্দে সচকিত নয়নে প্রেমিক কি ভাববেন, তুমি এলে, তুমি এলে? কত রাধিকা তো ফুরিয়েছে রাখালরাজ, তবে কি তুমি অপেক্ষা করছ আজও সেই চিরায়ত শ্রীমতীর, কালের মঞ্জীর বাজিয়ে যে আসবে এই গঙ্গাপুলিনে? বেদান্তসিদ্ধান্ত মূর্তিমতী হয়ে আসবে কি বৈরাগ্যরূপা প্রেমানুভূতিমন্দ্রিত তোমার বাঁশীর সঙ্কেতে?

তারপর গাছের ছায়ায় অন্ধকারে ডুবে থাকা একা একটি বুকফাটা উদাসীন পথ। এ-পথ যেন সময়সরণি বেয়ে চলে গেছে কপিলাবস্তু থেকে উরুবিল্বের দিকে। গঙ্গার বাঁধানো পাড় বেয়ে উঠে এসে উত্তাল হাওয়া্র শিশুরা কথা বলে। রাত্রির বিস্ময়ের মতো জেগে থাকে আরক্তহৃদয় নাগকেশর। নিঃশর্ত জিজ্ঞাসার মতো, নির্মোহ ঔদাসীন্যের মতো আকাশের গায়ে চিত্রার্পিত হয়ে থাকে শ্রদ্ধাবান মহানিম। তবু এই উপলব্যথিত পন্থায় পাথরের খাঁজে খাঁজে অনুরাগঅরুণ ঘাসফুল মূক যন্ত্রণায় যেন মাথা কুটে মরে। সেই পথ ধরে ছায়াচ্ছন্ন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে স্বামীজীর ঘর।

দোতলার ঘরটিতে একটি অনির্বাণ আলো জ্বলছে। এত রাত্রে তিনি জেগে আছেন? বাইরের দিকের সিঁড়ি বেয়ে নিঃশব্দে দোতলার বারান্দায় উঠলাম। বারান্দার দিকের জানালা খোলা। গরাদে মুখ রেখে সন্তর্পণে ঘরের ভিতরের দিকে তাকালাম। সাবেকী আমলের অর্ধগোলাকার কেদারায় তাঁর ছবি, লেখার টেবিল, হাই-ব্যাকড চেয়ার, আলনা-আলমারি, তানপুরা, পাখোয়াজ, খাট-বিছানা। ওদিকের দেওয়ালের জানালায় গঙ্গার অশ্রান্ত বাতাস ধেয়ে আসছে। এ ঘরে নয়, কিন্তু অন্য কোথাও থেকে একটি গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক সময়ের পাথর কাটতে কাটতে গম্ভীর ঘণ্টাধ্বনিতে জানালো, রাত্রি এখন দুটো।

‘এত রাত্রে আপনি এখনও জেগে আছেন, স্বামীজী?’

—‘ঘুম আসে না। কী করব? ঘরের ভিতর এইভাবে পায়চারি করতে করতেই রাত ভোর হয়।’

—‘এখনও এত কষ্ট আপনার? এই বিছানায় শুয়ে একটু ঘুমোতে পারেন না?’

—‘কোনোদিনই পারিনি। খাট থেকে নেমে মেঝেতে শুতাম। ঘুম আসত না তাতেও।’

—‘আমরা তো জানি, আপনি সপ্তর্ষিলোকে ফিরে গেছেন। সত্য নয়?’

—‘রাখ তোর সপ্তর্ষিলোক। আমি যে স্বেচ্ছায় চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। আই হ্যাভ ফলেন ইন লভ অফ ম্যান। ঘায়েল হয়ে গেলাম। ঘায়ল কি খত ঘায়ল হি জানে, অউর না জানে কোই!’

—‘আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না। তবে কি মুক্তি বলে কিছু নেই?’

—‘বন্ধন, মুক্তি সবই তো মায়ার কল্পনা। আত্মা তো নিত্যমুক্ত রে! তাহলে কোন্‌ মুক্তি তুই খুঁজছিস?’

— আপনার বেদান্তে যে-মুক্তির কথা আছে...হোক না মায়িক...তবু এই মায়িক বন্ধন থেকে মায়িক মুক্তির জন্যই তো মায়িক সাধনা...আর এ সব যে মায়া, তা তো বুঝিনি আমি এখনও...সেই বোঝার জন্যেই তো...’

—‘কান্নার শব্দ শুনতে পাস না?’

— ‘কান্নার শব্দ?’

—‘রাত্রিদিন পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণা থেকে অন্তহীন কান্নার শব্দ উঠছে যে! শুনতে পাচ্ছিস না? প্রতিদিন অবিদ্যায় অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষ দু-মুঠো ভাতের জন্য, বেঁচে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করার জন্য, একটু শান্তির জন্য, সহানুভূতির জন্য অহরহ কাঁদছে যে! নিজের মুক্তি খুঁজছিস? তুই তো ঘোর স্বার্থপর! আমাকে তুই এই বুঝলি?’

—‘আপনাকে বুঝি আমার সাধ্য কী! তবু মনে হয়, আপনি যদি একটু ঘুমোতে পারতেন! যুগান্তের সূর্য তো অস্ত গেছে, স্বামীজী! এখনও কালের প্রহরীর মতো কতদিন, আর কতদিন এভাবে তন্দ্রাহীন জেগে থাকবেন?’

—‘যুগান্ত হয়েছে, আবার নতুন যুগ আসছে। সমাসন্ন ভোর। এই সময়টাই অন্ধকার প্রগাঢ় হয়ে উঠতে দেখি। মানুষের ধারণাগুলো এখন সংশয়ের মেঘকুজ্ঝটিকায় ঢেকে আছে। এই সন্ধিক্ষণে দেশ আর রাষ্ট্র মানুষ গুলিয়ে ফেলেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের চাকার নীচে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মূর্খের দাপটে, প্রতিপত্তিতে মাথা নীচু করে মুখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে রুচিশীল বিদ্বানেরা। দেশে বিদ্যার কদর নেই। কেবল টাকার গরম। ধর্মমতগুলো চরিত্রহীন লোকেদের স্বার্থচরিতার্থ করার তামাশায় পরিণত হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের চিনতে পারছে না, বিদ্যুতের ক্ষণপ্রভ আলোকে তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। মায়েদের সম্মানও কিছুমাত্র নেই। পাশ্চাত্য-অনুকরণমোহে সিংহচর্মাবৃত গর্দভের দল ক-টা বই আর লেখকের নাম মুখস্থ বলে তোদের নিম্নমেধাকে সম্মোহিত করে ফেলছে। অন্যদিকে যা কিছু প্রাচীন, তাকেই মহনীয় ভেবে গোঁড়া রক্ষণশীলের দল দেশটাকে অতীতের তমিস্রার ভিতর ডুবিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আর তুই আমাকে ঘুমোতে বলছিস?’

—‘কিন্তু তাহলে আপনাদের এত ত্যাগ, এমন অমানুষিক পরিশ্রম— সব ব্যর্থ হয়ে গেল?’

—‘ব্যর্থ কি অত সহজে হয় রে? আমরা যে সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে বেঁচে আছি। কত উত্থান, কত পতন দেখেছি। এমন কত অন্ধকার কেটে আবার ভোর হয়েছে। এবারও তাই হবে। এ অন্ধকারও অপসৃত হবে।’

—‘তবে এত দেরি হচ্ছে কেন?’

—‘হবে না? তোরা আমার কোন্‌ কথাটা শুনেছিস, বল দেখি? বললাম, ঘরের সব জানালা খুলে দে। সব দিক  থেকে আসুক জ্ঞানের কিরণধারা। ঘরে যে-রত্নভাণ্ডার আছে, কালের কষ্টিপাথরে তার পরীক্ষা হোক। যা শাশ্বত, তা টিকে থাকবে। যা মরণীয়, তা মরবে—তাকে বাঁচিয়ে রেখে কী লাভ? দেওয়ানেওয়াই একটা জাতির বেঁচে থাকার অন্যতম শর্ত। তোরা শুনলি কই? যে জানালাগুলো খুলে দিয়ে গেছিলাম, সেগুলোও বন্ধ করে দিয়ে আবার নাক ডাকিয়ে ঘুমোনোর তোড়জোড় করছিস। আমি চেয়েছিলাম, বেদান্তের ব্যক্তিস্বাধীনতার মন্ত্রে একটা নতুন ভারত গড়তে। তোরা কী করলি? তোরা উপনিষদ ছেড়ে পুরাণের চর্চায় মেতে উঠলি। তোদের এই পুরাণসর্বস্ব সমাজগঠনের নির্বোধ প্রচেষ্টা করতে বলেছিলাম আমি? তবে জেনে রাখিস, তোদের এই তামসিক প্রচেষ্টা টিকবে না।’

—‘কীভাবে?’

—‘নতুন যুগের ছেলেমেয়েরা আসছে। তারা আর তোদের কথা শুনবে না। তোদের মতো স্বার্থপর নয় তারা, কোনো মতবাদের তারা দাসত্ব করবে না। সায়েন্টিফিক, নন-ফিউডাল মন তাদের। যা কিছু মহৎ, তাকেই তারা স্বাগত জানাবে। শুধু বইতে লেখা আছে বললেই তারা মানবে না। নেড়েচেড়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে তবে তারা নেবে। আমার বিশ্বাস ওদের উপরেই। ওই...ওই ওরা আসছে। ওদের জন্যেই আমি রাত জেগে বসে আছি।’

তারপর আর কথা নেই; সব নিশ্চুপ। গঙ্গার বাতাস স্বামীজীর ঘরের সিঁড়ির উপর আছড়ে পড়ছে। স্বপ্নপ্রেরিত শব্দগুলি অলিন্দের উপর কাঁপছে যেন এখনও। আলো ফুটছে। ভোর আসছে।

ধুলামাটির বাউল সিরিজের সব লেখা একত্রে পড়ুন এই লিংকে

dhula matir baul
Advertisment