চোদ্দপিদিম / ৫
স্বপ্নে যত ভাষা পাও, লিখে রাখো বুদবুদ-আখরে
ঝলকানির আগেপিছে বিশুদ্ধ সারং বেজে ওঠে
নেমে আসে শান্তিজল, মরা গাছে সর্পগন্ধা ফোটে
স্বপ্নে যত চারামুখ, ভেসে ওঠে মেহেন্দি কাপড়ে
যদিও গ্রহণ তার বিপদসীমার নীচে জল
জলের পাতাল তার অশনাক্ত মুখ খুলে দেবে
মুঠোয় লাগাম, তবু এসময়ে কার কথা ভেবে
আগুনের বুকে উঠে হাত নাড়ো, সংসারসফল?
অকথা কুকথা নিয়ে হেঁটে গেছ উঠোন মাড়িয়ে
স্বপ্নে যত খিদে তার এককণা মেলেনি শরীরে
তবুও সানাই বাজে অবেলায়, ভাগিরথী তীরে
তবুও শান্তির জল, সত্য আর সুন্দরের বিয়ে
স্বপ্নে সেই গাঁটছড়া, তুমি যাকে ভেবেছ বিদায়
চোদ্দপিদিম / ৬
রোজ ভাবি ভালো থাকব, খেতে দেব নিজেকে আবার
তোমাকে শোনাব বলে লিখে রাখব সব সত্যিকথা
এবার নিশ্চিত করো, জাদুমন্ত্রে দাও ক্ষুরধার
চামড়ায় শ্রাবণ দাও, মর্মে দাও জলের বহতা
রোজ এই উদ্গীরণ, কটা চোখ, অস্থির বেড়াল
কালো ধান্দা, সাদা ধন্দ, হুমকি আর ভয়ের তামাশা
আমাকে জড়িয়ে থাকে। যা ছিল তাচ্ছিল্য, গতকাল
আজ তার মুখে দেখি অকাট নির্বোধ ভালোবাসা
কোথায় কল্কির বাস, অথবা সে নিরম্বু ভূতের
বিধি না অবিধি যার হাটে হাঁড়ি, শ্মশানে কবর
রোজ তাকে মেরে রাখি, বিকেলে বাঁচিয়ে তুলি ফের
সে কিছু বলে না শুধু গুনেগেঁথে দেখে হাড়গোড়
রোজ ভাবি খুলে দেব, যে খাঁচায় দরজাই ছিল না
আরও পড়ুন, পীযূষকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের একগুচ্ছ কবিতা
চোদ্দপিদিম / ৭
ওঠো। ভোর হয়ে এল। আমাদের যেতে হবে দূরে
দুটো রাস্তাহীন রাস্তা। হোটেলের দুধারে বেঁকেছে
সমতা ফেরাও তবে। যেভাবে ফিরিয়ে নিলে মুখ
ওঠো। ডেকে যাচ্ছে কেউ। বয়ে যাচ্ছে জল আরও জলে
কালি। আর খাতাভর্তি হিজিবিজি। গোটানো মাদুর
হোটেলে সমুদ্র নেই। আছে এই ঠাণ্ডা ধারাপাত
কম্বলের নীচে খড়। শামুক জড়িয়ে গেছে পা-য়
কথা। আর বার্তা। আর কালোপর্দা যেদিকে পাহাড়
দাঁড়ি। চিহ্নহীন কমা। সাদামাটা সেমিকোলনের
লিবিডোবিধুর রাত। যতিময় নাগালে নাগাল
বালিশে পায়ের ছাপ। নখেদাঁতে কাটা বর্ণনায়
মায়া! নাকি মতিচূর্ণ! যে লেখার নাম গতকাল
দুটো রাস্তাহীন রাস্তা যার বাঁকে মিলে যায় রোজ
আরও পড়ুন, সর্বজিৎ সরকারের কবিতা
রক্তকরবী
বৃহদাঙ্গে বেঁধে রাখো, আমে দুধে মেশাও সজনী
যে তোমার তুল্যমূল্য, যে তোমার মণিহারা ফণী
তৃতীয় ইশারা যাকে বইখাতা থেকে মুখ তুলে
আড়চোখে মেপে নাও, উঠে পড়ো ভুলের মাস্তুলে
সে শুধু নির্যাস চায়, তুমি চাও নদীমাতৃকার
বুকের পাথর ছুঁয়ে শুরু হোক খেয়া পারাপার
যে হোটেল জন্ম দেয়, যে রাত দাঁতের মতো কাটে
তাদের একত্র করো, মুড়ে দাও হলুদ মলাটে
তারপর আদ্যশ্রাদ্ধ, ফুটে ওঠা আর ঝরে পড়া
তৃতীয় প্রহর জুড়ে চলে রোজ জন্মের মহড়া
রুদ্ধদল খুলে যায়, রক্তদল, যতদূর চিনি!
যে ফুলের ক্ষতনাম, আমি তার ধারণা, নন্দিনী