খেলোয়াড়, রিকশাচালক এমন অনেক পরিচিতি তাঁর। বিধানসভা নির্বাচনে অসাধ্যসাধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য এই সাহিত্যিক। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই জিতে গিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ জানতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোর জন্য টোটোও কিনেছেন তিনি। এবার অনবদ্য সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি জিতে নিলেন ২০২২ সালের শক্তি ভাট পুরস্কার। আর পুরস্কারের টাকায় এলাকারই এক গরিব যুবককে নতুন টোটো কিনে দেওয়ার কথা জানালেন তিনি।
অনবদ্য সাহিত্য কর্মের জন্য ২০২২ সালের শক্তি ভাট পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন লেখক তথা তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। আর এই পুরস্কার জিতে রীতিমত উচ্ছ্বসিত তিনি। বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছেন এক ডজনেরও বেশি উপন্যাস এবং বেশ কয়েকটি ছোট গল্পও। পুরস্কার বাবদ তিনি পাবেন ২ লক্ষ টাকা।
আর এই টাকা দিয়েই বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলের এক দুঃস্থ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে একটি টোটো কিনে দিতে চান তিনি। বিধায়কের কথায়, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ছেলেটিকে চিনি। মা, বাবা ছেলের সংসার। কোভিড লকডাউনে সংসার চালাতে আগের টোটোটি বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। আমি আমার টোটোটি তাকে দিয়েছি চালানোর জন্য। কিন্তু সেটিও অনেক পুরনো। পুরস্কারের টাকায় আমি ছেলেটিকে একটি নতুন টোটো উপহার দেব’।
আরও পড়ুন: < উত্তাল বিধানসভা, দুর্নীতি ইস্যুতে সোচ্চার BJP, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি’ টিপ্পনিতে তুমুল বিক্ষোভ তৃণমূলের >
১৯৮১ সালে ‘রিকশা চালাই’ লেখা দিয়েই তাঁর হাতেখড়ি। শক্তি ভট্ট ফাউন্ডেশনের বর্তমান ট্রাস্টি মৃদুলা কোশি, বলেন তার লেখায় প্রাণ পায় দলিত, শ্রমিক, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা। বরাবরই ব্যতিক্রমী। মেহনতি মানুষের কথা বলেন তিনি। তাঁর কলমেও ফুটে ওঠে সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণার কথা।
তাঁর লেখা দারিদ্র্য এবং জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। তাঁর আত্মজীবনীমূলক কাজ, ইন্টারোগেটিং মাই চণ্ডাল লাইফ ২০১৮ সালে নন-ফিকশনের জন্য হিন্দু পুরস্কার জেতে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাডেমি এবং শর্মিলা ঘোষ স্মৃতি সাহিত্যিক কর্তৃক প্রদত্ত সুপ্রভা মজুমদার পুরস্কার (২০১৪) ও পেয়েছেন তিনি। তাঁর উপন্যাস There's Gunpowder in the Air-এর ইংরেজি অনুবাদ ২০১৯ সালের সাহিত্যের জন্য JCB পুরস্কার, ২০১৯ দক্ষিণ এশিয়া সাহিত্য DSC পুরস্কার জেতে এবং মাতৃভূমি বুক অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার ২০২০-এর জন্য শর্টলিস্ট করা হয়েছিল।
রিকশা চালানোর সময় লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে তার আলাপ। সেই থেকেই লেখার প্রতি ভালবাসা, একাধিক লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে হাত পাকিয়ে তিনি আজ জিতে নিয়েছেন ২০২২ সালের শক্তি ভট্ট পুরস্কার। পুরস্কার জিতে মনোরঞ্জন বলেন, “আমি পুরস্কারের আশায় লিখি না। দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষের জীবন সংগ্রামকে লেখার মাধ্যমে তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য। এর আগে ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’উপন্যাসের জন্য তিনি ২০১৪ সালে জিতে নেন বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার।