Advertisment

মনে পড়ে কী পড়ে না: ভাগ্যিস রবিঠাকুর

আমরা তো এ-বছরের প্রতিমা বিসর্জনের আগেই জেনে গেছি পরের বছর পুজোর সময় বৃষ্টির ভয় নেই, পুজো পেছিয়ে গেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mone Pore ki Pore Na, Depression

অলংকরণ- অভিজিত বিশ্বাস

আমি ঠিক জানি না নিম্নচাপ ব্যাপারটা কী। আমরা তো নিম্নচাপহীন সহস্রাব্দগুলি পেরিয়ে নতুন শতাব্দে ঢুকেছি। নিম্নচাপ ছাড়া এতগুলি শতাব্দ পেরিয়ে এসে এখন রোজ সকালে সব দৈনিকের প্রথম পাতায় নিম্নচাপের গতায়াত পড়তে হয়। সে সব নিম্নচাপ সমুদ্র থেকে সমুদ্রান্তরে ঘোরাফেরা করে। সমুদ্র তো অসীম। এক সমুদ্র আর-এক সমুদ্রের সঙ্গে মিশে পৃথিবীটাকে দোলায়। সমুদ্রের যদি আমাদের মত চোখ, কান ও স্মৃতিশক্তি থাকত, তা হলে তারা এই পৃথিবীটাকে নস্যাৎ করে দিতে পারত। আমরা যখন রোজ সকালে নিম্নচাপের খবরে সমুদ্রগুলিকে নস্যাৎ করে দিতে থাকি যেন সমুদ্রগুলো আমাদের বেঁচেবর্তে থাকার আপদ, এগুলিকে শুকিয়ে দিতে পারলে আমরা, পৃথিবীর মানুষ, বেশ আশ্বস্ত ও নিশ্চিন্ত হতে পারতাম। একবারের জন্যও তো ভাবি না, সমুদ্র আছে বলেই পৃথিবী আছে, পৃথিবী আছে বলেই মানুষ, পশুপাখি , জীবজন্তু, গাছপালা ও স্মৃতিশক্তি আছে।

Advertisment

মানুষের স্মৃতিশক্তি বিস্ময়করের চাইতে চমৎকার। কখন যে কী মনে পড়বে তার ঠিক নেই। দু-দিন আগে গভীর শেষ রাতে দরজা-জানলা বন্ধ ঘরে ঘুমের মধ্যে মনে হল - শীত-শীত ভাবে পা দুটো কুঁচকে আসছে। সে তো হতেই পারে। পাশেই চাদর আছে। আঙুল বাড়িয়ে টেনে নিলেই হয়। তা না করে হঠাৎ মনে এল তা হলে বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচার ঘূর্ণি হয়ে উঠতে পারে, সেটা ঘূর্ণি হয়ে উপকূলের দিকে আসতে পারে বলে পড়েছিলাম সেটা কি হয়ে গেল। তখন তো আর বিছানায় থাকা যায় না। শুধু আঙুল দিয়ে চাদরটা টেনে নিলেই যে নিদ্রা সুখনিদ্রা হতে পারে, সেই সম্ভাবনা ছেড়ে আমি উঠে আর-এক ঘরে গিয়ে দরজা খুলে যাচাই করতে চাই বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কি না। যদি হয়, তা হলে, তার সঙ্গে আমার শেষ রাতের ঘুমের কোনো সম্বন্ধ নেই। যদি না-হয় তা হলেও, তার সঙ্গে আমার শেষ রাতের হঠাৎ জাগরণের কোনো সম্বন্ধ নেই।

আরও পড়ুন, প্রচেত গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস অনাবৃত

হয়তো আছে।

কাল আবার সকালের কাগজে সেই নিম্নচাপগুলির খবর পড়তে হবে। তারা গভীরতর হয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গেছে কিনা বা তারা পাতলা হয়ে সমুদ্রের বাতাসে মিশে গেছে কিনা। আমার মত যে নিম্নচাপ কাকে বলে তাই জানে না, সে কী করে সেই চাপের গভীরতর হওয়া বা হালকা হয়ে যাওয়া বুঝবে। তা ছাড়াও, যদি জানতাম, তা হলেও তার ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার উদ্বেগেরও তো তা হলে কোনো বাস্তব কারণ নেই। রাতের তারাগুলোর মতই নিম্নচাপও আমার কাছে পঠিতব্য কিছু, বা শুধুই দর্শনীয় কিছু।

ফলে, ঋতু বদলের আকস্মিকতার কৌতুক কি কিছু কমে গেছে। কোন খ্যাপা শ্রাবণ আশ্বিনের আঙিনায় ঢুকে পড়ল, ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে শ্যামল গাইরা আর ডাকাডাকি করে না, সে ডাক যে একবার শুনেছে সে কোনোদিন ভোলে না, শ্যামা মেয়ে ত্রস্ত ব্যাকুল পদে কুটীর হতে ত্রস্ত বাইরে আসে না আর বারেক চোখের গুরুগুরু শোনে না। পুবে বাতাস আর হঠাৎ ধেয়ে আসে না।

আমরা তো এ-বছরের প্রতিমা বিসর্জনের আগেই জেনে গেছি পরের বছর পুজোর সময় বৃষ্টির ভয় নেই, পুজো পেছিয়ে গেছে। পুজোর ছুটির তালিকাও বেরিয়ে গেছে - যাতে সামনের বছর পুজোর বেড়ানোর টিকিট এখনই কাটা যায়।

আরও পড়ুন, নবনীতা দেবসেনকে নিয়ে অনুরাধা কুন্ডার লেখা

কিন্তু নিম্নচাপও কি এখন পাঁজি-অনুগত! নিম্নচাপ তো সব সময় সমুদ্রেই ঘটে। সমুদ্রের তো কোনো পাঁজি নেই বা সরকার নেই। মধ্যরাতে বা গভীর শীত রাতে সেই নিম্নচাপ তো বৃষ্টি নিয়ে আসতে পারে, সঙ্গে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ঈশাণ কোণ থেকে অন্ধ বেগে ধেয়ে আসতে পারে।

ভাগ্যিস রবি ঠাকুর আছেন। বেঁচে থাকার বিস্ময় তাই কমে না।

এই সিরিজের সব লেখা একত্রে পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

Mone Pore ki Pore Na
Advertisment