Advertisment

ছোট গল্প: গরীব লোকের গল্প

কবিতার জগতে বেশ পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন তিনি, এমনকী গদ্য গ্রন্থও রয়েছে তাঁর। গল্প খুব বেশি লেখেননি, কিন্তু সাহিত্যের এ ধারাকে নিজের কাছে অনতিক্রম্য রাখতেও চান না অদিতি বসুরায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

এলি আমাকে সব সময়ে ইডিয়ট বলত। ও আমার হাই স্কুল সুইটহার্ট ছিল। ওর বাবার গ্যারেজে আমরা দুজনেই কাজ করতাম।এলিকে ভাল দেখতে ছিল কিনা জানিনা কেননা ও এত মোটা ছিল যে বোঝা যেত না ওর চোখ টানা টানা কিনা কিম্বা নাকটা টিকালো কিনা।কিন্তু মেয়েটা বড্ড টানত আমাকে। মাত্র ষোল বছর বয়েসে কোন মেয়েকে ওর পরিশ্রম করতে দেখিনি আমি।অনেকটা যেন আমার মায়ের মত। মাকে অবশ্য আমি একেবারেই পছন্দ করতাম না। কিন্তু মায়ের খাটার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। মায়ের সঙ্গে আমি ছিলাম জীবনের প্রথম বারটা বছর। আমার মায়ের মত আলকহলিক সহজে দেখা যায় না।সারাদিন উন্মাদের মত খাটা-খাটনি করত আর বিকেলে কাজ থেকে ফিরে শুরু হয়ে যেত একটানা মদ খাওয়া। আর বললে বিশ্বাস করবেন না, ওই রকম মদ্যপ অবস্থাতেই ক্রমাগত ঘরের কাজ করে যেত। একটানা রান্না করে যেত চিজ হ্যামবার্গার,স্প্যাগেটি, স্যান্ডউইচ, পাউন্ড কেক, হট ডগ,প্যান কেক, সুপ ইত্যাদি ইত্যাদি। যত নেশা চড়ত তত যেন মায়ের রান্নার হাত খুলত। মায়ের মত চমৎকার সুপ আমাদের গ্রামে আর কেউই বানাতে পারত না। সেই স্বাদ আমি আজও মিস করি। ইন ফ্যাক্ট মাকে যত না মিস করি তার থেকে অনেক বেশি মিস করি মায়ের হাতের সুপকে। আমার বাবা, মাকে যখন ছেড়ে যায় তখন আমার বয়েস সাত। বাবাকে আমি কক্ষনো রাগারাগি বা ঝগড়া করতে দেখিনি। মাকে মদ খেতে খুব নিষেধ করত বাবা।মা কথা না শুনলে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকত। বেশিরভাগ সময়েই মা কথা শুনত না। বাবাকে যাতা করে গালাগাল করত। বাবা কখনো বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেত, কখনো বা পোর্টিকোতে  বসে থাকত চুপ করে। খুব একটা ভাল কাজ করত না আমার বাবা, মা। আর যা রোজগার করত তার বেশিরভাগটা তো মায়ের মদে উড়ে যেত। একবার খুব ঝামেলার পর,বাবা এক রবিবারের সকালে চুপচাপ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আমাকে কিছু বলে যায়নি। সম্ভবত মাকেও না। এখন বুঝতে পারি, বাবা আর পারছিল না এই রোজকার গোলমাল সহ্য করতে। আমার বারো বছরের জন্মদিনের ঠিক পনের দিন পরে মা মারা যায়। দিদিমা আর তার বয়ফ্রেন্ড আমার দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমার জায়গা হয় এক অর্ফ্যান হোমে। দিদিমা পরিষ্কার পুলিশকে জানিয়েছিল “ববের মত অপয়ার জায়গা নেই আমার ঘরে ,ওর জন্মের পর থেকেই আমার মেয়ের দুঃখের শুরু”। আমাদের হোমে  হত না এমন কুকর্ম মেলা ভার। দিনের বেলায় সব ঠিকঠাক কিন্তু রাতে হল্লা করত মাতালের দল।কেউ কেউ ঘরে এনে তুলত স্ট্রিট হুকারদের।এইভাবে আমার হাই স্কুল শেষ হয়। গ্রাডুয়েশনের দিন, রাতে যখন সক্কলে পার্টি করতে মত্ত, আমি ছুটেছিলাম অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে। তার কয়েক মাস আগে আমি এলির বাবার গ্যারেজে কাজ শুরু করি।হাতে কিছু ডলার জমে গিয়েছিল। সেটা দিয়েই অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়ার প্ল্যান করেছিলাম। এলির সঙ্গে আমার আলাপ অবশ্য স্কুলে।আমরা একই ক্লাসে ছিলাম। এলি খুব একটা কারও সঙ্গে মেলামেশা করত না। অনেকটা আমার মতই।

Advertisment

আরও পড়ুন, ছোট গল্প: শেষ পীরের গান

ক্যান্টিনে দেখতাম একা একা বসে পেস্ট্রি কিম্বা বার্গার খাচ্ছে। প্রায়ই দেখতাম চিজ বার্গার নিতে। আমাদের দুজনেরই তখন সতের বছর বয়েস। আমি একদিন এগিয়ে গিয়ে বললাম, “তোমার সঙ্গে টেবিল শেয়ার করতে পারি?” একগাল হেসে মেয়েটা বলল, “ নিশ্চই। আমি রোজই তো তোমাকে ডাকব ভাবি কিন্তু সাহস পাইনা”। আমাকেও নাকি ভয় পায় লোকে! হায় রে! ভেবে ভেবে তিন রাত্রি ঘুম হল না জানেন। ফোর্থ ডে-তে সটান একটা গোলাপ ফুল নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম এলির সামনে। বলে দিলাম ভালবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। সে তো অবাক, “তুমি বুঝি আমাকে এতখানি চাও? জানো আমাকে আজ অব্দি কেউ প্রপোজ করে নি। আমি মোটা তো তাই আমাকে মনে হয় কেউ পছন্দ করেনা”। আমি বলে দিলাম , “আমি আছি আর থাকবো।তুমি মোটা না রোগা সে সব আমি দেখিনা। দেখিনি। আমি শুধু জানি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না”। তারপর থেকে রোজ এক টেবিলে খাওয়া দাওয়া করতাম আমরা। কত কথা হত। ভাব হয়ে গেল আমাদের আস্তে আস্তে। এলির বাবার গ্যারেজ থাকলেও ওরা কিন্তু যাকে বলে বড়লো্ক তা ছিল না। আমাকে ওই গ্যারেজে কাজটা যোগাড় করে দেয় ও-ই। হাই স্কুল শেষ হতে না হতেই আমরা বিয়ে করি। পরের বছর আমাদের মেয়ে মিলা জন্মায় আর এলি পালটে যেত শুরু করে। ও আসলে এত তাড়াতাড়ি বেবি চায়নি। ও কেরিয়ার করতে চেয়েছিল। আমার সঙ্গে স্কুল পাশ করার পর ও আমার মতই ওর বাবার গ্যারাজে কাজ শুরু করে।প্ল্যান করেছিল গ্যারজে কাজ করে করে টাকা জমিয়ে কলেজ এডুকেশন নেবে। কারণ সারাজীবন গরীবি আর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিল এলি। তাই ও চেয়েছিল বিরাট একটা বাড়ি, অনেক টাকা, দামী গাড়ি। কিন্তু আমি তা চাই নি। আজীবন পরিবার তৈ্রির প্রতি ঝোঁক আমার। এই বিরাট দুনিয়ায় আমি চেয়েছিলাম আমার একান্ত নিজের কয়েকটা মানুষ। অন্য কোন উচ্চাশা আমাকে তাড়া করেনি কখনও। মেয়ে হওয়ার পর ঈশ্বরের কাছে জানিয়েছিলাম আর কিছু চাইব না আমি তাঁর কাছে। ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ছিল এলি। মতের অমিল হচ্ছিল আমাদের। মন কষাকষি। তবে ঝামেলার পরে ভাবও হয়ে যেত।আদর থাকত বিছানা জুড়ো। এলি রাগ করে মুখ-ঝামটা দিত বটে কিন্তু রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে এলে কফির কাপের সঙ্গে চুমুও দিত জাপটে ধরে। সুখ-অসুখ মিলিয়ে আমি তাই ভালই ছিলাম জানেন। সমস্যা শুরু হল আমাদের নতুন নেবারের আগমনের পর থেকে। মানে প্রতিবেশী আর কি! ছেলেটি একা থাকত। ইন্ডিয়ান। বিরাট বড়লোক। ডাক্তার। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের এই ছোট গ্রামে এর আগে অন্য কোন ভারতী্রকে আমরা দেখিনি। এই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই আমার মত সাদা আমেরিকান। কালো আর মেক্সিকানদের সংখ্যা হাতে গোনা। সেখানে তো ভারতীয়দের নামও অনেকেই শোনে নি।আমারও যে ওই অদেখা অচেনা দেশ সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা ছিল তা নয়। টেলিভিশনে দেখেছিলাম একবার সেই দেশ নাকি সাপ আর বাঘে ভর্তি।মানুষগুলোও কেমন যেন বাদামী রঙের আর জবুথবু টাইপের। রাস্তা-ঘাটে শুয়ে থাকে।বাথরুমও করে রাস্তায়।আসলে একটাই অহংকার ছিল আমার। সাদা চামড়ার অহংকার। আমি ছোটবেলা থেকে এটা জানতাম আমরাই দুনিয়ার সেরা জাত-জগতের ওপর একমাত্র আমাদেরই একচেটিয়া দাদাগিরি কায়েম আছে। তাই নিজের ঘরের পাশে থার্ড ওয়ার্ল্ড –এর বাদামী ত্বকের একটা মানুষের উপস্থিতি আমার অসহ্য লাগত। আরও বেশি অসহ্য লাগত এলির বারবার কারণে অকারণে লোকটার কাছে দৌড়ন। যেন দুনিয়ায় ওই একটা পিস ডাক্তারই আছে। আমার রাগ হতে শুরু করলো বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর। অথচ কিছু বলতেও পারতাম না। এলি কাজ থেকে ফিরে মেয়েকে বগলদাবা করে ছুট দিত ডাক্তারের বাড়ি।বেশিরভাগ দিন ডিনার সেরেই ফিরতে শুরু করল। আমাকে যে অবহেলা করত তাও ঠিক কথা নয় তা আমি বাইবেল ছুঁয়ে বলতে পারি।ওরা নিজেরা ডিনার করে আমার জন্যে আবার প্যাক করে নিয়ে আসত খাবার। এলিকে বাধ্য হয়ে একদিন বোঝাতে হল,যতই ডাক্তার হোক আর যাই হোক ওই সব দেশের মানুষকে বিশ্বাস করাটা বিরাট বোকামি। ব্যাটারা টয়লেট পেপার পর্যন্ত ইউস করতে জানে না।এমন ভাবে ইংরিজি বলে যেন মুরগীর ঠ্যাং চিবচ্ছে। লন মোয়িং করতে অব্দি শেখে নি। এদের সঙ্গে এত মাখামাখি করাটা মোটেও ভাল দেখায় না। ভেবেছিলাম মেয়েটা বুঝবে, ওমা কোথায় কী -এলি আমাকে এক লম্বা লেকচার দিয়ে শেখাতে চেষ্টা করল আমার নাকি সবই ভুলভাল ধারণা। ভারতীয়রা মোটেও ওরকম নয়।ওরা আসলে খুব শিক্ষিত।দেশ-বিদেশের প্রায় সব বড় বড় জব নাকি ভারতীয়রাই পায় স্কিলের জোরে। সবচেয়ে বড় কথা,পরে বুঝেছিলাম সেটাই সবচেয়ে দামি কথা-ভারতীয়রা আসলে প্রচুর টাকার মালিক। শিক্ষা-টিক্ষা তেমন কিছু নয়। আমার কিছুতেই মাথায় ঢুকত না ওত যাদের শিক্ষা-দীক্কা তাদের নিজেদের দেশের অমন দুঃঃখকষ্টের কোন সমাধান না করার চেষ্টা না করে কেন তারা অন্য দেশে বসে মাজাকি করে! ডলার ই ভগবানের মত এদের কাছে।সেই শীতে একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটল।ভারত থেকে ডাক্তারের বাবা- মা এসে হাজির হল। একদিন আমার সঙ্গে বাগানের গেটে দেখা।আমি যথারীতি ভদ্রতা করে গ্রিট করে জানতে চাইলাম,”হাউ আর ইউ ডুইং?” অদ্ভুত  জিপসিদের মত পোশাক পরা মানুষ দুজন কেমন থতমত খেয়ে উত্তর দিল “গুড মর্ণিং গুড মর্ণিং”-ভাবুন একবার!ভদ্রতা-সভ্যতা কিস্যুই জানে না, একেবারে ভূত। আমি তো হাসতে হাসতে পাগল হয়ে গিয়ে এলিকে জানালাম গোটা বৃত্তান্তখানা। সে রেগে কাঁই আমার হাসি দেখে। হাবিজাবি বলতে শুরু করায় আমি পালিয়ে বাঁচলাম সেদিন। তারপর কেন জানিনা ওই বুড়ো – বুড়িকে দেখলে আমার পেট গুলিয়ে হাসি পেত।বিরক্তও লাগত খুব। যাতায়াতের পথে ওদের দেখতে পেলেই আরও বেশি করে জড়িয়ে জড়িয়ে নিজের ভাষায় কুশল জিজ্ঞেস করতাম। ওরা বুঝতে পারত না। তাই যদি জিজ্ঞেস করতাম , “ আজ আবহাওয়া খুব ভাল নাকি ?”বুড়ো উত্তর দিত “আমরা ভাল আছি”,আমি হাসতে হাসতে কেটে পড়তাম। এই ভাবে দিন যেতে লাগল ।এলিকে কপালে বিন্দি পরা শিখিয়েছিল বুড়ি। আস্তে আস্তে এলি কেমন যেন পর হয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে দামী দামী উপহার পেতে শুরু করল। কফির বদলে চা খেতে শুরু করল। ওর ভারতীয়-পনা অসহ্য লাগত আমার।তাই নিয়ে মস্করা করলে দারুণ ঝগড়া হত আমাদের। আমাদের মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত, যখন বাছা বাছা খিস্তিগুলো করতাম এলিকে।ঝামেলা করতে করতে ফল মানে হেমন্ত কাল এল। চলেও গেল। অন্যান্যবারের মত গাছ-পালার রঙ দেখতে সপরিবারে পার্ক-যাওয়া হলনা আমাদের। তারপর হাজির  ক্রিসমাস। এলি সেবার ক্রিসমাস ট্রি কিনে এনে ডাক্তারের বাড়িতে সাজাল খুব করে।কেক-টেক কিছুই বানাল না। অবশেষে চব্বিশে ডিসেমবর রাতে আমি ওকে পাকড়াও করে নিয়ে এলাম ও বাড়ি থেকে। জিজ্ঞেস করলাম সোজাসুজি, “কী চাও তুমি?ওই বেজন্মার সঙ্গে কি সম্পর্ক তোমার? ঠিক করে বল। অনেক ন্যাকামি হয়ে গেছে। আর পারা যাচ্ছে না এভাবে”। এলি বলল, “দয়া করে ভদ্রলোকেদের সম্পর্কে ভদ্রভাবে কথা বল। আমি ডাক্তারকে ভালবাসি। ওর পরিবার আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে তাতে আমি কৃতজ্ঞ”। আমি চিৎকার করে উঠলাম, “শালী, মানুষ হয়ে কুকুরের সঙ্গে শুতে চাস?”এলি সপাটে দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে ঢুকে গেল। আমি বসার ঘরে ওর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতে পারিনি। পরদিন সকালে উঠে দেখি বাড়ি ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই। সে এক অদ্ভুত সিচুয়েশন। রাস্তায় সবাই হইচই করছে,ঝলমলে রোদ্দু্রচমকাচ্ছে গতরাতের বরফ –আমি বুঝতে পারছিনা কী করব,কোথায় যাব। মাথায় কেবল একটাই চিন্তা আমাকে কিনা একটা ক্লারড লোকের কাছে হেরে যেতে হল। এর চেয়ে এলি মারা গেলেও তো ভাল হত । শালা,একটা সাহেব যোগাড় করতে পারল না মেয়েমানুষটা? লোকের কাছে মুখ দেখাব কী করে কে জানে! একটু বেলা বাড়লে গুটিগুটি ডাক্তারের বাড়িতে গেলাম। দোরগোড়া থেকেই ভিতরের হইহই শোনা যাচ্ছিল। আমি ঢুকতেই সব চুপচাপ মুহূর্তে। সবার আগে এগিয়ে এল দারুণ দামী পোশাক গায়ে এলি। আমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম অতগুলো সুবেশ লোকজনের মধ্যে। হঠাৎ কানে এল কে যেন বলছে, “ এই হতভাগা মিস্ত্রিটাকে ডাকল কে? এলি?”এলি উত্তর দিল, “ইডিয়টটার কথা আর বোল না, যেখানেই ভাল খাবারের গন্ধ পাবে শুঁকতে শুঁকতে হাজির হয়ে যাবে”। বুঝতে পারলাম গত কয়েক মাসে সমস্ত অপমানের প্রতিশোধ নিচ্ছে এলি। জানি না কিভাবে ওই ঘর থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এসে বাগানে এসে বসতে পেরেছিলাম। মাথায় ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় চমকে উঠে দেখি ওই দুই ভারতীয় বৃদ্ধ –বৃ্দ্ধা দাঁড়িয়ে। মহিলার চোখে জল। হাতে একটা কেকের টুকরো। আর একটা সোয়েটার। ইশারায় বলছেন গায়ে দিয়ে নিতে। দুটো জিনিসই নিলাম। শুনতে পেলাম সেই আগের মতই ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজিতে বলছেন, “বাবা,আমরা তোমাদের বাবা-মায়ের মতই। কেঁদ না”। ধীরে ধীরে আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছেন দুজনেই। খানিকক্ষণ বাদে, ঝাপসা হয়ে আসা চোখে দেখলাম আস্তে আস্তে ফিরে যাচ্ছেন ওঁরা ডাক্তারের বাড়ির দিকে। গেট বন্ধ হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম তখনই যে আমি সত্যি বড্ড গরীব। এতই গরীব আমি যাকে মিলিয়ন ডলার দিলেও যে গরীবই থেকে যাবে আজীবন, এক গরীব প্রথম বিশ্বের গর্বিত নাগরিক ।

Bengali Literature Bengali Short Story
Advertisment