Advertisment

ছোট গল্প: সদানন্দের সাধ

সরকারি আমলার কর্মময় জীবনযাত্রা ও অন্যান্য দায়দায়িত্ব সত্ত্বেও লেখার রাস্তা থেকে দুরে সরে যাননি ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পর্যন্ত তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আজ ভাস্বতীর ছোট গল্প।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

তেলেভাজার ঠোঙাটা হাতে নিয়ে রোজকার মত এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন সদানন্দবাবু। না, পরিচিত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এবার একটু নিরিবিলিতে বসে আরাম করে খাবেন। এই জন্যই তো এতদূর উজিয়ে এ পাড়ায় আসা। বিকেলে একটু বৃষ্টি হয়ে গেছে। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ। তেলেভাজার জন্য একেবারে আদর্শ। দুটো আলুর চপ, দুটো বেগুনি, সঙ্গে দু’টাকার মুড়িও নিয়েছেন আর একটা কাঁচালঙ্কা। তেলেভাজার গন্ধটা জিভে জল এনে দিচ্ছে। গরম তেলেভাজার ঠোঙার ওম নিতে নিতে পার্কের কোণের বেঞ্চিটার দিকে এগোলেন সদানন্দবাবু।

Advertisment

এই তেলেভাজা খাওয়া নিয়ে নিত্য অশান্তি লেগেই ছিল বাড়িতে। তেলেভাজা দেখলে নিজেকে সামলাতে পারেন না সদানন্দবাবু। নাহলে মানুষটা এমনিতে সাধাসিধে, কোনও নেশাভাঙ নেই, বাজে খরচের অভ্যাস নেই, বরং কিপটে বলে একটু দুর্নামই আছে তাঁর। ব্যাতিক্রম শুধু একটাই। তেলেভাজা। গিন্নি প্রতিমা স্বামীর এহেন তেলেভাজা প্রীতি চিরকাল সস্নেহ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতেই দেখে এসেছেন। বাড়িতে বানিয়েও দিতেন প্রায়ই। তবু সদানন্দবাবু দোকানে তেলেভাজা কিনে খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। এ নিয়ে প্রতিমা অনুযোগ করলে মাথা চুলকে বলেছেন,

কি জান! বাড়িতে ঠিক দোকানের মত স্বাদ হয় না।

প্রতিমা রেগে গিয়ে বলেছেন,

হবে কি করে? বাড়িতে তো আর পচা তেলে ভাজা হয় না!

সদানন্দবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বাড়িতে যখন দোকানের মত স্বাদ হচ্ছেই না, তখন আর কষ্ট করে বানানোর দরকারটাই বা কি? তেলেভাজা তো রসনা তৃপ্তির জন্যই খায় মানুষ, না কি?

কয়েকবার এই ধরণের কথোপকথনের পর প্রতিমা বাড়িতে তেলেভাজা বানানো ছেড়েই দিলেন। সদানন্দবাবু দোকান থেকে বাড়ির সবার জন্যই কিনে আনতেন, বাড়িতে বসেই খেতেন। অন্তত চারটের কমে তাঁর মন ভরত না।

বেশ চলছিল। সমস্যা বাধল সদানন্দবাবুর গ্যাস্ট্রিক আলসার ধরা পড়ার পর। খাওয়াদাওয়া নিয়ে নানারকম বাছবিচার চালু হল। প্রথমেই বাদ পড়ল তেলেভাজা। তার ওপর গত বছর ধরা পড়ল রক্তে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল। এরপরই প্রতিমা শক্ত হাতে হাল ধরলেন। দুই ছেলেও পূর্ণ সমর্থন জানালো মাকেই।

আরও পড়ুন, সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্প: মরুৎ

যতদিন চাকরি করেছেন সমস্যা ছিল না। অফিসের বেয়ারাকে দিয়ে রোজ আনিয়ে নিতেন টিফিন টাইমে। মুশকিল হল মাস ছয়েক আগে রিটায়ারমেন্টের পর। চব্বিশ ঘণ্টা প্রতিমার নজরদারির আওতায় চলে এলেন। সে এক দুর্বিসহ ব্যাপার। শরীরের যত সমস্যাই থাক, তেলেভাজাহীন জীবন সদানন্দবাবু ভাবতেই পারেন না।

অনেক ভেবেচিন্তে বিকেলে পার্কে হাঁটবেন বলে বেরোতে শুরু করলেন। জানতেন প্রতিমা তাঁর সঙ্গী হতে চাইবেন না। কোনদিনই হাঁটাহাঁটি করার ব্যাপারে উৎসাহী নন প্রতিমা। সদানন্দবাবু এই সুযোগটাই নিলেন। প্রত্যেকদিন হাঁটার পর পাড়ার দোকানে চপ-ফুলুরি খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। দিন কয়েক পর প্রতিমার কেমন যেন সন্দেহ হল। কারণ, বাড়ি ফিরে আর কিছু খেতে চাইতেন না সদানন্দবাবু। শুধু এক কাপ চা। প্রতিমা জিগ্যেস করলেন,

এত যে হাঁটছ, খিদে পাচ্ছে না তোমার? ওইসব ছাইপাঁশ তেলেভাজা-টাজা খেয়ে আসছ না কি?

উত্তরে এত জোরে হাত মাথা নেড়ে প্রতিবাদ করে উঠলেন সদানন্দবাবু যে তাইতেই সন্দেহ আরও বেড়ে গেল প্রতিমার। আশেপাশের তেলেভাজার দোকানগুলোতে খোঁজখবর করতেই ধরা পড়ে গেলেন সদানন্দবাবু। তারপরই পাড়ার সবকটা চপ-ফুলুরির দোকানে তাঁর ঢোকা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। তারা আর তাঁকে বেচতেই চায় না। প্রতিমা সমস্ত দোকানে ঘুরে ঘুরে কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, কেউ যেন এই বুড়োকে এক টুকরো তেলেভাজাও বিক্রি না করে। যদি করে তবে তার ব্রহ্মহত্যার শাপ লাগবে।

শুনে অল্পবিস্তর দাঁত বের করে সকলেই বলেছে,

বুঝে গেছি মাসিমা। আর বলতে হবে না। তবে দুঃখ একটাই, একটা বাঁধা খদ্দের চলে গেল।

শুনে প্রতিমা বলেছেন,

কি ব্যাপার বলত? সকলেই বলছে তুমি নাকি ওদের বাঁধা খদ্দের? কত তেলেভাজা খাও সারাদিনে?

তেলেভাজার মর্ম প্রতিমা আর কি বুঝবেন? কোনও দোকানে ফাটাফাটি ফুলুরি বানায় তো কোনও দোকানে দুর্দান্ত পেঁয়াজি; কোথাও অপূর্ব আলুর চপ তো কোথাও তুলনাহীন বেগুনি। তাই ঘুরেফিরে সব দোকানেই যেতে হয়।

তাছাড়া, প্রতিমার দু’একজন গুপ্তচরও আছে, যারা বেফাঁস কিছু দেখলে শুনলে আগে প্রতিমার কানে তুলে দেয়। অগত্যা সদানন্দবাবুর বেপাড়ায় হাঁটতে আসা ছাড়া আর কোনও উপায়ই ছিল না। এ পাড়ায় চেনা পরিচিত এখনও তেমন কাউকে চোখে পড়ে নি। নিয়মিত তেলেভাজা সেবনও চলছে। প্রতিমা এখনও খবর পান নি।

কিন্তু চিরদিন তো আর সমান যায় না।  পার্কের বেঞ্চে বসে সবে আলুর চপে দু কামড় দিয়েছেন, তারিয়ে তারিয়ে খেতে খেতে নশ্বর জীবনের মাধুর্যের কথা ভাবছেন, এমন সময় পিছন থেকে পরিচিত গলার স্বর শুনে চমকে উঠলেন।

- বাবু এখেনে?

পঞ্চানন! তাঁদের রাত-দিনের চাকর, প্রতিমার ডান হাত এবং নাম্বার ওয়ান গুপ্তচর। ব্যাটাচ্ছেলে এখানে কি করছে?

তুই এখানে কি করতে এসেছিসহতভাগা? কাজকর্ম নেই?

আজ্ঞে, কাজেই তো এসেচি। মা-জননীর জন্য পুদিনা পাতা খুঁজতে খুঁজতে...পার্কের ওই পাশে একটা বাজার বসে সন্ধ্যেবেলায় ...তা, ভাগ্যি এলুম! ... কি খাচ্চেন বাবু? তেলেভাজা?

কোথায় রে? দেখছিস না, মুড়ি খাচ্ছি? এই দ্যাখ, দ্যাখ!

আজ্ঞে, মুড়ি কি বাড়িতে নেই যে এতদূরে মুড়ি খেতে এয়েচেন? তা, মুড়ির ঠোঙা কি অমন তেল চপচপে হয়?

শোন পঞ্চা! ভালো হবে না বলছি। খবরদার যদি তোর মা-জননীর কানে কথাটা তুলেছিস, কাল থেকে তোর চাকরি নট।

হে হে, কি যে বলেন বাবু! চাকরি আমার আরও পাকা হবে বরং!...

হতভাগা, তোকে মাইনেটা আমিই দিই মনে রাখিস, তোর মা-জননী নয়!

হে হে হে, কিন্তু উপরিটা তো মা-জননীই দেন গো!... তাছাড়া, ভেবে দেখুন বাবু, আপনার শরীলের কথা আপনি না ভাবলে, কাউকে তো ভাবতে হবে!...

আরও পড়ুন, জয়তী রায়ের ছোট গল্প: শেষ পীরের গান

পঞ্চার কাছ থেকেও জ্ঞান শুনতে হবে? দিল মুডের বারোটা বাজিয়ে। এমন সুন্দর ওয়েদার, এমন তেলেভাজার মৌতাত, সব গেল! এরপর বাড়ি ফিরে যে তাঁর জন্য কি অপেক্ষা করছে! ধুস্! আর বাড়িই ফিরবেন না তিনি। যেখানে এরকম চোরের মত লুকিয়ে সামান্য সাধ আহ্লাদ মেটাতে হয়, সেটা তাঁর বাড়ি নয়। গ্যাস্ট্রিক! কোলেস্টেরল! যেখানে তাঁর মনের খুশির চেয়ে কতকগুলো মেডিক্যাল টার্ম বেশি গুরুত্ব পায়, একটা ছোকরা ডাক্তারের অ্যাডভাইসের দাম বেশি, সেটা তাঁর বাড়ি নয়, হতে পারে না।

মনের দুঃখে তেলেভাজাও আর মুখে রুচল না তাঁর। আধখাওয়া ঠোঙাটা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে এদিক ওদিক এলোপাথাড়ি হাঁটতে লাগলেন সদানন্দবাবু। কিছুক্ষণ পর মোবাইল বেজে উঠল। প্রতিমা। ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দিলেন।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খেয়াল করলেন, স্টেশনের দিকটায় চলে এসেছেন। তার মানে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে ফেলেছেন। ক্লান্ত লাগছিল। জলতেষ্টা পাচ্ছিল। একটা গলি রাস্তা ধরে ডাউন প্ল্যাটফর্মের পিছন দিকটায় ওঠা যায়। সেদিক দিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে আগে ট্যাপ থেকে জল খেলেন খানিক। তারপর একটা বেঞ্চে বসে পড়লেন।

জায়গাটা অন্ধকার মত। আলোগুলো কোন কালে খারাপ হয়ে গেছে, আর বদল করা হয়নি। ভালই হয়েছে, অন্ধকারই ভাল। এদিকে লোকজনের যাতায়াতও অনেক কম। চুপচাপ বসে আকাশপাতাল ভাবতে লাগলেন সদানন্দবাবু। একটা অভিমান ঠেলে উঠে মনটা ভারী করে দিয়েছে। সারা জীবন সংসারের জন্য এত কিছু করেছেন! এই প্রতিমার কোনও সাধ আহ্লাদ অপূর্ণ রেখেছেন তিনি? সাধ্যের অতিরিক্তই করেছেন। ছেলেদের জন্য দিন রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন, আর এই প্রতিদান দিচ্ছে তাঁকে সংসার? সামান্য একটু তেলেভাজা! নাহ্, ওকথা আর ভাববেন না। আর বাড়িই ফিরবেন না। কোনও একটা ট্রেনে চড়ে বসলেই তো হয়! কত লোকই তো এক কাপড়ে বিবাগী হয়ে যায় বলে শুনেছেন। তিনিও না হয় তাই হলেন!

মফস্বলের ছোট্ট স্টেশন। দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়ায় না এখানে। বেশ কয়েকটা লোকাল ট্রেন এল গেল। তিনটে মেল ট্রেন, দুটো মালগাড়ি পেরিয়ে গেল। সদানন্দবাবু ঠায় সেখানেই বসে রইলেন। দু একটা হকার তাঁকে দেখতে দেখতে গেল। একটা কুকুর কখন এসে শুয়েছে তাঁর পায়ের কাছে। মনে হচ্ছে বেশ রাত হয়েছে। সঙ্গে ঘড়ি নেই। মোবাইলটাও বন্ধ। হঠাৎ খানিক দূরে কিছু মানুষের কথাবার্তার আওয়াজ শোনা গেল। কারা যেন টর্চ হাতে এদিকেই আসছে। কাছাকাছি হতে গলার আওয়াজ চেনা লাগল তাঁর। টর্চের আলো এসে পড়ল তাঁর গায়ে, আর সঙ্গে সঙ্গে ‘এই তো! এই তো!’ বলে একটা কলরব উঠল।

টর্চের আলো সরছে না তাঁর গায়ের ওপর থেকে। সেই আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে সদানন্দবাবুর। মুখগুলো দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। সবচেয়ে সামনে যে, গলার আওয়াজে বুঝলেন, তাঁর বড়ছেলে অন্তু।

ওহ্ বাবা! তুমি এখানে! ... এই শীগ্গির বাড়িতে খবর দাও, বল পাওয়া গেছে!... চল বাবা!

কাকাবাবু চলুন! গাড়ি এনেছি...

সদানন্দবাবু কিছু বলার চেষ্টা করলেন। অন্তু তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

আগে বাড়ি চল, তারপর সব শুনব। বিকেল চারটেয় বেরিয়েছ, এখন রাত এগারোটা! খুজে খুঁজে হয়রান।

ভাগ্যিস মন্টুদা আপনাকে স্টেশনের দিকে আসতে দেখেছিল!

বাদামওয়ালা ছেলেটা ঠিকই বলেছিল, একজন বয়স্ক মানুষকে প্ল্যাটফর্মে অন্ধকারে বসে থাকতে দেখেছে!

এই সমস্ত কথাবার্তার মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে গেলেন সদানন্দবাবু। খুব দুর্বল বোধ করছিলেন, শরীরে এবং মনে। গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে চোখে পড়ল, কাঁচুমাচু মুখ করে পঞ্চা দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে। অসহ্য রাগে ব্রহ্মতালু পর্যন্ত জ্বলে গেল তাঁর। কি আর করবেন! প্রতিমার তীব্র বাক্যবাণের মুখোমুখি হবার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন, সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়ের ছোট গল্প: জাহ্নবী

ঘরে ঢুকতেই প্রতিমার মুখোমুখি। প্রতিমা বললেন,

চল, ওপরের ঘরে চল।

সহজ স্বাভাবিক নিরুত্তাপ কণ্ঠস্বর। তাহলে বোধ হয় ওপরের ঘরে গিয়েই...! আড়চোখে প্রতিমার মুখের দিকে চেয়ে দেখলেন। প্রতিমা তখন পুত্রবধূকে কিছু নির্দেশ দিতে ব্যস্ত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেন সদানন্দবাবু। শরীর যেন আর চলছে না।

প্রতিমাও তাঁর সঙ্গে উঠে এলেন দোতলায়। একই রকম নিরুত্তাপ গলায় বললেন,

ফ্রেশ হয়ে নাও। সন্ধ্যের ওষুধগুলো বাদ পড়ে গেল। খাওয়াদাওয়ার পর একেবারে দেব।

কি ব্যাপার কে জানে? এত শান্ত, ধৈর্যশীল প্রতিমাকে অনেক দিন দেখেননি। এ তাহলে ঝড়ের পূর্বাভাস।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে লুঙি আর ফতুয়া পরে পাখার নীচে বসে সত্যিই ফ্রেশ লাগছিল। প্রতিমা হাঁক দিলেন,

পঞ্চা! খাবার দিয়ে যা।

সদানন্দবাবু অবাক হয়ে বললেন,

এখানে?

হ্যাঁ, আজ আমরা এখানেই খাব।

পঞ্চা আর বউমা ঢুকল প্লেট, চামচ, আর দুটো ক্যাসারোল নিয়ে। টেবিলের ওপর খবরকাগজ বিছিয়ে প্লেট সাজাচ্ছিলেন প্রতিমা।

আজ আর বেশি কিছু করতে পারে নি। সন্ধ্যে থেকে যা চলল! একটু চালে ডালে ফুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। কই, এস?

টেবিলে বসে হতবাক হয়ে গেলেন সদানন্দবাবু। দুটি প্লেটে খিচুড়ি বাড়া হয়েছে। আর একটা ক্যাসারোল ভর্তি নানা রকমের তেলেভাজা। একি কাণ্ড!

ইয়ে...এত তেলেভাজা? ...মানে...

খাও। এবার থেকে বাড়িতেই পাবে। তবে রোজ নয়।

সদানন্দবাবু প্রতিমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন একটুক্ষণ! তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,

প্রতিমা! ...সরি!...মানে, আমি...

চোখ তুলে তাকালেন প্রতিমা। একটু হাসি ফুটে উঠল মুখে। বললেন,

খাও! রাত হয়েছে অনেক...

মনে হল অনেক দিন পর প্রতিমার এমন হাসি, এমন নরম চোখের দৃষ্টি, এমন মাখন গলার স্বর শুনলেন! তেলেভাজার কল্যাণেই তো এত কিছু! সত্যিই, তেলেভাজার কোনও তুলনাই চলে না। এক্কেবারে স্বর্গীয় ব্যাপার! পরম তৃপ্তিতে বেগুনিতে কামড় দিলেন সদানন্দবাবু।

Bengali Literature Bengali Short Story
Advertisment