Advertisment

সীতা: অদিতি বসু রায়ের দীর্ঘ কবিতা

সীতার মত ট্র্যাজিক চরিত্র দেখিনি। আজ পর্যন্ত তিনি পুজো পান কেবল সহনশীলতার জন্য। ভারতীয় নারী এমনভাবোই যুগে যুগে চিত্রিত। অত্যাচারিতা অথবা নম্র কিংবা দুষ্ট। এ মেনে নিতে পারিনি। পারিও না। সীতাকে তাই জিতিয়ে দিতে চেয়েছি...

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali Poetry, Sita

অলংকরণ অরিত্র দে

সীতার সঙ্গে পার্কস্ট্রিটে দেখা হয় মাঝে মধ্যে

Advertisment

সীতা এখন গলফগ্রীনে থাকেন

ইউনিভার্সিটিতে পড়ান এবং

তাঁর বাড়ির বুক র‍্যাকে সিমোনের বই রাখা।

শুনলাম,

মল্লিকা সেনগুপ্ত মারা গেলে তিনি তিনদিন ভাতের পাতে বসতে পারেন নি।

রাম ও তাঁর  ডিভোর্সের পালা বহুদিন সাঙ্গ !

আপাতত তিনি বাসুদেব কৃষ্ণের সঙ্গে ‘লিভ ইন’-এ আছেন

লব ও কুশের সিঙ্গল মাদার সীতা, একটি কন্যার জননী হয়েছেন কৃষ্ণের ঔরসে।

  • এ পর্যন্ত জেনে যাঁরা ভাবছেন মহিলার রামায়ণ থেকে মহাভারতের যাত্রাপথ

সুগম এবং মসৃণ – তাঁরা মূর্খ।

তবে পথ দুর্গম হলেও গন্তব্য সেই আদি, অকৃ্ত্রিম পুরুষকাতরতা - সেই মাতৃত্ব।

অবশ্য একথা মানতেই হবে,

রামচন্দ্রের থেকে আমাদের নন্দলাল অনেক বেশি স্মার্ট।

রাধাপর্ব মিটতেই তিনি আর মহাভারতীয় বখেরায় যেতে চান নি

রুক্মিণী, সত্যভামা – ব্যবহারে জীর্ণ। পুরোনোও।

  • তাঁরা আর বাসুদেবের মন টানেন কই?

এখন তিনি সামান্য সময়ের এদিক-ওদিক করে,

সীতাতেই থিতু হবেন ঠিক করেছেন।

গোড়ায় সীতা জয় সহজ ছিল না মোটেও

ওদিকে হাল ছেড়ে দেওয়া বাসুদেবেরও স্বভাবে নেই

প্রায় ১৬০০ রমণীতে উপগত পুরুষ তিনি

নারীযন্ত্র জয় করার বিদ্যে তাঁর যথেষ্ট করায়ত্ত

সীতা অবশ্য রাম, রাবণ, রাক্ষসকুল পেরিয়ে এসবে বিশেষ বিচলিত হন না

ইদানিং, একান্তে তাঁর রাবণকে মনে পড়ে।

সে রাক্ষস ছিল। শয়তানও।

তবু তার একনিষ্ঠ নিবেদনটির কথা ভেবে জানকীর কষ্ট হয়

কৃষ্ণ, প্রেমিক বটে তবে তিনি বিশ্ব-সংসারের মানুষ

অপরিমেয় নারীপ্রীতি তাঁর মজ্জাগত

সকলের মতো সীতাও জানেন, তিনি একমাত্রিক উপায়ে বহুগামী

তথাপি জানকীর হৃদয়ের নিক্তিতে

এই শতেক বান্ধবীপ্রিয় সখা বুঝি হেরে যান ওই রাবণের কাছে!

যুগান্তর পেরিয়ে যায় ...

কন্যেটিও পা রাখে নিজের দুনিয়ায়

আর কৃষ্ণ? তাঁর কথা থাক।

সন্দেহপ্রবণ দশরথপুত্রের রথের চাকার মতোই থেমে গেছে

কৃষ্ণের মহার্ঘ মোটর।

সীতা কাজ সেরে নিউ মার্কেট যান... বাগবাজার... গড়িয়াহাট...

কৃষ্ণের ফোন এনগেজড... কৃষ্ণ আন অ্যাভেলেবল...

আমি আর সীতা দেখা করি

এ-ওর শাড়ির প্রশংসা করি

কথা ফুরোয় দ্রুত -

এবারও  পাত্র শূন্য

এবারও শেকলের শাসন জারি

হাতে-হাত আমরা বসে থাকি

সূর্য বৃদ্ধ হয় ...

অশোকবনে পলাশফুল নিতে আবারও ছুটে যায় দুরন্ত মেয়ের দল

অঙ্কে ভুল করে শখ করে...

পাতালপ্রবেশের পর পথ পায় না ফেরার

পুড়ে যায় আনখশির... তবু

আমাদের প্রিয়-পুরুষ-কাতরতা আর মরে না...

(সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে সাহিত্যের জগতে এসে পৌঁছোনো অদিতি বসুরায়ের কলম স্বীকৃত হয়েছে নানা স্তরে, নানা ভাবে। তার মধ্যে রয়েছে পূর্ব পশ্চিম সাহিত্য সম্মান, মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কারও।)

কবিতা, গল্প, বইয়ের আলোচনা ও সাহিত্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর পড়ুন এখানে

bengali poetry Bengali Literature
Advertisment