Advertisment

বাংলার 'রঙ্গ' রাজনীতিতে শোভন, বৈশাখী ও রত্না

সম্প্রতি শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক বিশেষ রাজনৈতিক অর্থবহ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sovan baisakhi ratna

ঘাসফুল না পদ্ম? কোন শিবিরে কানন?

শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে না তৃণমূলে? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহল দ্বিধায়। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি সরকারি ভাবে অন্য় কোনও দলে যোগ দেননি বা বিজেপি ছেড়েছেন সে কথা কখনও ঘোষণা করেননি। বরং বহুবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এবার শোভন-বান্ধবী বৈঠক করে চলেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে।

Advertisment

সম্প্রতি শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ও পরবর্তীতে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক বিশেষ রাজনৈতিক অর্থবহ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। একইসঙ্গে বেহালা পূর্ব বিধানসভার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শোভনপত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায় সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। রাজনীতির কারবারিরা দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চাইছেন।

আরও পড়ুন: ‘আমি পারব না’ বলে সরে গেলেন রত্না, মুখ খুললেন বৈশাখীও

রত্না চট্টোপাধ্যায় দায়িত্ব নিলে কোনও ভাবেই তৃণমূলে ফিরবেন না শোভন, এমনটাই রটেছিল প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠমহলে। শোভন ও বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রত্না তৃণমূল কংগ্রেসে অধিক সক্রিয় হয়েছিলেন। প্রাক্তন মেয়র গেরুয়া শিবিরে সামিল হওয়ার পরও পদ্মশিবিরে কোনও কর্মসূচিতে সামিল হননি বলা চলে। তা নিয়ে নানা মন্তব্য় করেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। বিজেপি নেতৃত্ব শোভনকে গুরুত্ব দিলেও বৈশাখীকে দলে সেভাবে পাত্তা দিতে চায়নি। ৬, মুরলি ধর লেনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

মেয়রের পদ ছাড়ার পর থেকে একের পর নাটকীয় ঘটনা ঘটে গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে। দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেওয়া থেকে শুরু। ওই দিন দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। তারপর বঙ্গ বিজেপি দফতরে শোভনের সংবর্ধনা নিয়েও 'নাটক' দেখেছিল বাংলা। প্রথমে বৈশাখী সেই অনুষ্ঠানে আসবেন কী না তা নিয়ে রহস্য, তারপর 'গম্ভীর মুখে' সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির। সেদিন বিজেপি সভাপতির মন্তব্য়ের পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন বৈশাখী। সেই রঙ্গ এখনও দেখছে বাংলা। দেবশ্রী বিজেপিতে থাকলে সেখানে থাকবেন না, আর তৃণমূলে রত্না থাকলে তা চলবে না। এই 'তত্ত্ব' ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। কেনই বা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন না রাজ্য়ের প্রাক্তন এই মন্ত্রী? যা নিয়ে সন্দিহান বাংলার রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: ‘করোনায় কানন যেন সাবধানে থাকে’, বৈশাখীকে পরামর্শ উদ্বিগ্ন মমতার

রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রকৃত কোন ইস্যুতে দল ছেড়েছিলেন শোভন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও ভাই ফোঁটার দিন কালীঘাটে 'দিদি'র বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন শোভন-বৈশখী। তবু কাটেনি মান-অভিমান। তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়েছে। কলকাতা পুরভোট আসতেই ফের রাজনৈতিক চর্চায় ঢুকে পড়েন শোভন। সঙ্গে বৈশাখী ও রত্না। আবার এরই মধ্য়ে শোভনকে কলকাতার ভাবী মেয়র পদে দাবি করে কলকাতায় পোস্টারিং হয়েছে। অবশ্য় বিজেপি সেই দায়িত্ব নেয়নি। তাহলে কারা করেছিল সেই পোস্টারিং? এর পিছনে কী উদ্দেশ্য ছিল? তৃণমূল নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই কি এর উদ্দেশ্য ছিল? এই প্রশ্নও উঠেছে রাজনীতির কারবারিদের মনে।

বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্য়েই পুরোদমে কলকাতায় বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করে দিয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আর ভাবতে নারাজ বঙ্গ বিজেপি। রত্নাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় শোভনের নির্বাচনী কেন্দ্র বেহালা পূর্বে। এতেই নাকি 'ইগো'তে ধাক্কা লাগে। শোভন দৌড়ৃঝাপ শুরু না করলেও বৈশাখী বৈঠক করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তারপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যদি সেই আলোচনা খোলসা করেনি কেউই। তবে ওই বৈঠকের পর রত্নার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।

আরও পড়ুন: উন্নয়ন আটকাচ্ছেন জেলাশাসক, অভিযোগ বাংলার বিজেপি সাংসদের

'বাংলার গর্ব মমতা' কর্মসূচিতে পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দলে ফিরিয়ে আনার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও দুর্দিনে মমতার সঙ্গী। একইসঙ্গে শোভনের প্রতি বিজেপি আগ্রহ হারাচ্ছে। রাজ্য়ের বসে যাওয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দলে ফেরানোর তোরজোর চলছে। সেক্ষেত্রে শোভন-যোগে পাল্লা অনেকটাই ভারি তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। তবে এটাও ঠিক বাংলার রাজনীতিতে নানা ধরনের 'কেন্দ্রীয় চাপ' রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা উপেক্ষা করা সম্ভব কী না তাও দেখার বিষয়। রাজনৈতিক মহল মনে করে, আপাতত দেবশ্রী রায় পিছলে গেলেও বাংলার 'রঙ্গ' রাজনীতিতে শোভন, বৈশাখী ও রত্নার ভূমিকা দেখা আরও অনেক বাকি রয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mamata Banerjee west bengal politics bjp tmc
Advertisment