Advertisment

 অলীকরা যেটাকে জয় বলে চালাতে চাইছে, সেটার কোনো মানে নেই

চুক্তিপত্রে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও, তা বিশদ করা নেই। বিশেষত যাদের জমির ওপর দিয়ে তার যাচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ। এটা সবচেয়ে অবহেলিত জায়গা আমাদের দেশে। এইটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের কথা বলা, চাপ সৃষ্টি করা উচিত ছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
কত টাকায় আন্দোলন বিক্রি? প্রশ্ন তুলে ভাঙড়ে মার পাওয়ারগ্রিড নিয়ে রফাপন্থী নেতাকে

প্রশাসনের সঙ্গে রফা বৈঠক শেষে অলীক ও আন্দোলনকারীদের বিজয়োচ্ছ্বাস (ফাইল ফোটো)

(ভাঙড় আন্দোলন শুরুর পরেই এ নিয়ে প্রযুক্তিগত দিক সহ অন্যান্য দিক নিয়ে যাঁরা চর্চা শুরু করেছিলেন, গবেষক ও সমাজকর্মী শমীক সরকার তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শনিবার আন্দোলন শেষ ঘোষিত হল যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে, সেই চুক্তিপত্র নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি)

Advertisment

প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ২ টো ৪০০ কেভি এবং ৯ টা ২২০ কেভির লাইন ভাঙড়ে তৈরি হবে। চুক্তিপত্রে দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে না। ১১ টা লাইন মানে একটা বড়সড় ব্যাপার। সেটা নিয়ে এলাকাবাসীরা ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যা খুব স্বাভাবিকও বটে। যদিও ১১টি লাইনের কথা লিখিতভাবে কোথাওই ছিল না মনে হয়, কিন্তু যেহেতু গ্রামের মানুষ প্রায় ২ বছর ধরে ব্যাপারটা নিয়ে আন্দোলন করেছেন, অতএব ধরে নেওয়া যায়, প্রশাসন থেকে ১১ টা লাইনের কথা বলা হয়েছিল। সেদিক থেকে দেখলে চুক্তিতে যে তিনটে লাইনের কথা বলা হয়েছে, তা গ্রামবাসীদের পক্ষে বেশ ইতিবাচক ব্যাপার, কারণ নতুন লাইনের জন্য নতুন করে আর টাওয়ার বসানো হবে না।

২২০ কেভির যে টাওয়ারটা গ্রিডের সবচেয়ে কাছে, সেটা নিচু ছিল বলে বাসিন্দাদের অভিমত। সেটা উঁচু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটাও স্থানীয় বাসিন্দাদের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৪০০ কেভির লাইনে উচ্চতা হওয়ার কথা ৯ মিটার, বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী। লবণাক্ত জলের ভেড়ির ওপর দিয়ে লাইন যাওয়ার জন্য উচ্চতা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু তার উল্লেখ এই চুক্তিপত্রে নেই। থাকা উচিত ছিল।

৪০০/২২০ কেভি লাইনের মধ্যবিন্দু থেকে অন্তত ৫২০ মিটারের মধ্যে ইটভাটা থাকতে পারে না, আইন এমনই। চুক্তিতে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কমিটি মধ্যস্থতা করবে, যেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক, যদিও নির্দিষ্ট করে ইটভাটার কথা বলা হয়নি।

কিন্তু, চুক্তিপত্রে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও, তা বিশদ করা নেই। বিশেষত যাদের জমির ওপর দিয়ে লাইন যাচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ।  এটা সবচেয়ে অবহেলিত জায়গা আমাদের দেশে। এইটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের কথা বলা, চাপ সৃষ্টি করা উচিত ছিল। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যদি নির্দিষ্ট করে স্থির করা যায় বা যেত, তাহলে তা উদাহরণ হয়ে থাকত, যা এ ধরনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নজির হিসেবে দেখানো যেত।

আরও পড়ুন, সব ঠিক চললে পাওয়ার গ্রিড হতে চলেছে ভাঙড়ে

আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম, এটা পাওয়ার গ্রিড নয়, সাবস্টেশন হচ্ছে। আমাদের গবেষণাপত্রে লেখা ছিল (জানুয়ারি ২০১৭), ‘‘টেকনিকাল পরিভাষায় পওয়ার গ্রিড বলতে পাওয়ার (এখানে বৈদ্যুতিক ক্ষমতা), উৎপাদন (জেনারেশন), এবং বিতরণ (ডিস্ট্রিবিউশন)- এই পুরোটাকে একসঙ্গে বোঝায়। অর্থাৎ পুরো ইলেক্ট্রিকাল পাওয়ারের যে নেটওয়ার্ক, সেটা। এখানে ভাঙড়ে যা হচ্ছে, সেটা ইলেক্ট্রিকাল সাব স্টেশন।’’ আজকে প্রশাসনও তাই বলছে, এবং আন্দোলনকারীরা তাতেই সন্তুষ্ট হয়েছেন। পাওয়ারগ্রিড বিষয়টি একেবারেই লোকের মুখের কথা। ওখানে সাবস্টেশনই হওয়ার কথা ছিল, তাই হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত তড়িৎ নিরোধক গ্যাস ব্যবহারের বিষয়। sf6 গ্যাসের ব্যবহার, যা নিয়ে একাংশের তীব্র আপত্তি ছিল, সেই গ্যাসই ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এটা মোটেও ক্ষতিকর গ্যাস নয়।

যদি ৪০০ কেভির লাইনের উচ্চতা ৯ মিটারের বদলে ১০ মিটার করা হয়, যেটা অবশ্য পিজিসি আই এল বলতে পারবে, রাজ্য প্রশাসন পারবে না, তাহলে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
চুক্তিতে কায়দা করে ৪০০ কেভি লাইনগুলো, যে গুলো পিজিসি আই এল এর, সেগুলো বিষয়ে "কাজ সমাপ্ত হবে" গোছের কথা ছাড়া কিছু বলা নেই। জিরাট-সুভাষগ্রাম ৪০০ কেভি লিলো লাইনটিও থাকছে।
আন্দোলনকারীদের ওপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট নমনীয়তা দেখিয়েছে।

জমি কমিটির অংশগ্রহণে তৈরি সাব-কমিটির প্রজেক্ট মনিটরিং ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাও আন্দোলন থেকেই অর্জন এবং নজির হয়ে থাকার মত বিষয়।

তাই আমার মতে টেকনিক্যাল ও পলিটিক্যাল জায়গাতে আন্দোলনটির অর্জন অনেক।

গুজব, অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন ভয় এই চুক্তিতে গুরুত্ব পায়নি।

Bhangar power grid
Advertisment