দেখতে দেখতে ভারতে COVID-19 পৌঁছে গেল তৃতীয় পর্যায়ে। চেন্নাই, পুণে, দমদম জানান দিচ্ছে যে অল্প পরিমাণে হলেও কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন (অর্থাৎ দেশের মধ্যেই একজনের থেকে আরেকজনের দেহে ভাইরাস ছড়ানো) শুরু হয়ে গেছে এদেশে। দেশ জুড়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবার বাড়তে শুরু করেছে আগের চেয়ে দ্রুত। দেশের মানুষের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মনে ভয় ঢুকলেও ভয়টা প্রাণে ঢোকেনি। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনেকেই বোঝেননি এখনও। বস্তুত এই পর্যায়ের অধিমারী (বিশ্বব্যাপী মহামারী) আমরা অনেকেই দেখিনি জীবনে। প্রথম দর্শনে গুরুত্ব বুঝতে গেলে যে মানসিক প্রস্তুতি লাগে, তা আমাদের অনেকেরই নেই। বয়স্ক যাঁরা দেশভাগ, খরা-বন্যা-দুর্ভিক্ষ, কিছু আঞ্চলিক মহামারী ইত্যাদি দেখেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই বিজ্ঞানের বদলে ভাগ্যের ওপর আস্থা রাখতে অভ্যস্ত। যাঁদের প্রাণে ভয় ঢুকেছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার অতিরিক্ত ভয় পেয়ে অদ্ভুত এবং ক্ষতিকর আচরণ করে ফেলছেন।
এভাবে যুদ্ধ জেতা যায় না। যুদ্ধের নিয়ম হল, শত্রুকে অবজ্ঞা করা চলবে না, সমীহ করতে হবে, ভয়ও পেতে হবে কিছুটা, কিন্তু আতঙ্কে দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ভুল পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। শত্রুকে চিনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে ঠাণ্ডা মাথায় লড়ে যেতে হবে। শুনতে হবে দায়িত্বে থাকা দক্ষ সেনাপতি বা যুদ্ধ-পরিচালকদের কথা। দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতের সমাজ এতই অগোছালো যে সুসংগঠিতভাবে যুদ্ধটা করা সহজ নয়।
এমতাবস্থায় রবিবার জনতা কার্ফু, সোমবার থেকে লক ডাউন। দেশের COVID-19 আক্রান্ত জেলাগুলি সম্বন্ধে কেন্দ্রের সুপারিশ অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছেন ২৩ মার্চ বিকেল পাঁচটা থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত কোলকাতা সহ রাজ্যের পুর-শহরগুলিতে এবং কিছু জেলার সর্বত্র "লক ডাউন" বলবৎ হবে। এই সময়কালে নির্দিষ্ট কিছু জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য সব কাজ, অফিস, ব্যবসা, যানবাহন ইত্যাদি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। ২৭ তারিখ পুনরায় পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে এই লক-ডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। রবিবার মাঝরাত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশ জুড়ে বন্ধ থাকবে সবরকম যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। চলবে শুধু মালগাড়ি। এরকম পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল। এমন দিকে যেতেই হত যেখানে মানুষের যথেচ্ছ ঘোরাফেরার গতিরোধ হবে। মহামারীর প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে 'স্বাধীন' মানুষের আচরণ এবং আসন্ন রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই গত সপ্তাহে জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষিতে ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছিল। সপ্তাহ না ঘুরতেই সেই অনুমান বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
আতঙ্কিত দুনিয়ায় ব্রাত্য হোক ক্ষুদ্র রাজনীতি
লক ডাউন করা উচিত কিনা, তা নিয়ে কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন আছে দেখলাম ঘোষণার পর। অনেক পরিষেবা বন্ধ থাকায় কিছু অসুবিধে হবে সত্যিই। তবু বলব, এই মুহূর্তে এই পদক্ষেপ ছাড়া গতি ছিল না। করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) প্রথমে মানুষের মধ্যে এসেছে সম্ভবত কোনো প্রাণী থেকে, কিন্তু এখন সে এক মানুষ থেকে নিকটবর্তী অন্য মানুষে ছড়ায় 'ড্রপলেট' অর্থাৎ ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে। সংক্রামিত মানুষের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়েও ভাইরাসে ভরপুর এইসব অতি ক্ষুদ্র জলীয় ফোঁটা নির্গত হয় এবং নিকটবর্তী বস্তুর উপর পড়ে। মানুষ তাকে নিজের শরীরে করে পৌঁছে দিতে পারে বহু দূরে। লন্ডন থেকে কোলকাতা।
করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়াতে পারে, বলছে গবেষণা
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ফুট তিনেকের মধ্যে যদি আপনি থাকেন, তাহলে আপনার নাকে-মুখে চোখে ঢুকতে পারে সেই ভাইরাস। অথবা পড়তে পারে আপনার হাতে, কাপড়ে। অথবা আপনি সেই ব্যক্তির কাছে সরাসরি গেলেন না হয়ত, অথবা পরলেন এক মোক্ষম মুখোশ। ওদিকে ওই ব্যক্তি বাহুর বদলে হাত দিয়ে নিজের নাক-মুখ ঢেকে হেঁচেছেন। তারপর সেই হাতে ছুঁয়েছেন বাস বা ট্রেনের রড, ওষুধের দোকানের বা চিকিৎসকের চেম্বারের দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং বা কলিং বেল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনিও সেটা ছুঁলেন এবং আপনার হাতে চলে এল ভাইরাস। এবার ভালো করে সাবান দিয়ে অন্তত কুড়ি সেকেন্ড হাত না ধুয়ে বা ৬০%-এর বেশি অ্যালকোহলযুক্ত দ্রবণে হাত পরিষ্কার না করে সেই হাতে আপনি নিজের চোখ-নাক ছুঁলেও সংক্রামিত হতে পারেন। আপনার কাপড়ের উপরেও কয়েক ঘণ্টা থেকে দেড় দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে ভাইরাস। আপনার নিঃশ্বাসে নির্গত ড্রপলেট অথবা আপনার ব্যবহৃত কাপড়-চোপর, পলিথিনের প্যাকেট জাতীয় অজস্র বস্ত বা আপনার ছোঁয়া ধাতব বস্তু থেকে সংক্রামিত হতে পারেন আপনার বাড়ির লোকও।
এই কারণেই বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার (social distancing) কথা বলা হচ্ছিল। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা এবং সানাজিক মেলামেশা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার অনুরোধ ছিল। বলা হচ্ছিল হাঁচি-কাশি হলে হাতের বদলে বাহু বা টিস্যু পেপার জাতীয় কিছু দিয়ে নাক-মুখ আড়াল করা, অসুস্থ মনে হলে নিজেকে অন্যদের থেকে সরিয়ে রাখা ও তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, বারবার হাত পরিষ্কার করা, চট করে নিজের নাক-চোখে হাত না দেওয়া, অপ্রয়োজনে সিঁড়ির হাতল থেকে দোকানের কাচ অব্দি না ছোঁয়া ইত্যাদি ব্যক্তিগত সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কথা। বিদেশ (করোনা আক্রান্ত কোনো দেশ) থেকে ফিরলে বা বিদেশ-ফেরত কারো সংস্পর্শে এলে চোদ্দ দিন "হোম কোয়ারান্টাইন" বা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার নিদান ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্ত রাজ্য বা শহর থেকে ফিরলেও এরকম কোয়ারান্টাইন জরুরি। এই সময়ে সকলের সঙ্গে (এমনকি পরিবারের সঙ্গেও) সংস্রব এড়িয়ে বাড়ির একটি ঘরে নিজেকে আটকে রাখার কথা। ঘরের সঙ্গে সংযুক্ত বাথরুম থাকলে ভালো হয়, যা অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। যেসব দরিদ্র পরিবার একটিমাত্র ঘরে সকলে মিলে বাস করেন, তাঁদের পক্ষে এটা বেশ কঠিন, কিন্তু মধ্যবিত্ত বা ধনীদের পক্ষে দিব্বি সহজ। বিদেশ থেকে বিমানপথে ভাইরাস নিয়ে ফিরেছেন মূলত উচ্চবিত্তরাই। তাঁরা এই দায়িত্বটুকু ঠিকমতো পালন করলে আগামী দিনে গরিবদের এই কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হত না৷
জলের ব্যবস্থাই নেই, হাত ধোবেন কী করে ওঁরা?
যতদিন পরামর্শ, উপদেশ, অনুরোধ, প্রত্যাশা ইত্যাদির মধ্যে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ ছিল, ততদিন শিক্ষিত মানুষেরাও কথা শুনলেন না। এই দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল বেতের উপর নির্ভরশীল আর কর্মক্ষেত্র "হ্যাঁ হুজুর" ভিত্তিক। এদেশের মানুষ দুর্ভাগ্যক্রমে শুধুমাত্র আদেশের সঙ্গে পরিচিত। অন্য ধরনের কথা কানে যায় না। তাঁরা বিদেশ থেকে ফেরার পথে বেশি করে প্যারাসিটামল খেলেন বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারকে ধোঁকা দিতে, যদিও থার্মাল স্ক্যানার এমনিতে বোকা যন্ত্র, জ্বর না হলেই ভাবে "আল ইজ ওয়েল"। তারপর দেশের রেলে বা বিমানে তাঁরা সফর করেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে হয়ত বাড়ি পৌঁছনোর জন্য বাধ্য হয়েই। বাড়ি পৌঁছেই কিন্তু চোদ্দ দিন গৃহবন্দি থাকার কথা ছিল। সেই ভদ্রলোকের চুক্তি না মেনে মলে, সিনেমায়, পাড়ার সর্বত্র ঘুরে বেড়ানোর পিছনে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া কিছু ছিল না। দু'তিনজন চিকিৎসকও এই দোষে দোষী, যদিও সৌভাগ্যক্রমে তাঁরা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট নিয়েও নাকি এক গায়িকা অনুষ্ঠান করেছেন এবং বহু লোক তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন। কী করে এটা সম্ভব হল জানি না। তাঁর নিজের দায়িত্ববোধ ছাড়াও প্রশ্নে মুখে সেই অঞ্চলের প্রশাসনের দায়িত্ববোধও। তাঁকে তখনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি কেন? হোম কোয়ারান্টাইনের নির্দেশ পাবার পরেও অনেকে ট্রেনে চড়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে যাবার চেষ্টা করেছেন। মেরি কমের মতো শ্রদ্ধেয় ক্রীড়াবিদ কোয়ারান্টাইন প্রোটোকল ভেঙে পার্টিতে যোগ দিয়েছেন যেমন তেমন জায়গায় নয়, খোদ রাষ্ট্রপতি ভবনে। দেশের শিক্ষিত উচ্চশ্রেণীর মানুষ তথা সর্বোচ্চ প্রশাসন যে কোয়ারান্টাইন ব্যাপারটাই বোঝেন না এবং ঘাড় ধরে না মানালে নিয়ম মানতে রাজি নন, তা এ থেকেই স্পষ্ট।
উপদেশে কাজ না হলে অগত্যা আসে আদেশ। নানাবিধ দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় দেশের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে। বাড়ি ফেরার তাড়ায় সংক্রামিত শহরগুলো থেকে এমনভাবে সাধারণ মানুষ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ফিরে যেতে শুরু করেছেন যে তাঁদের হাত ধরে দেশের সর্বত্র ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া স্রেফ দুদিনের ব্যাপার এবং তারপর রোগী ও সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বের করাও দুঃসাধ্য হবে। ভাইরাস সংক্রমণের স্টেজ থ্রি যদি ভারতে জাঁকিয়ে বসে, তবে মহামারী ভয়াবহ আকার নেবে। তখন এর মৃত্যুর হার সাড়ে তিন শতাংশে আটকে থাকবে না। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে আরও বেশি মানুষ মারা যাবেন। শুধু COVID-19 এর মৃত্যুহার নিয়ে ভাবলে হবে না। চিকিৎসা-পরিকাঠামোর ক্ষমতার তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি হয়ে গেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বা লিভারের অসুখ, ক্যান্সার, অন্যান্য জীবাণুঘটিত রোগ… সবকিছুরই চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে এবং সেখানেও মৃত্যুর হার বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে ভয়ানক অর্থনৈতিক মন্দা চললে, তার ফলেও মারা যাবেন অনেকে।
সারাক্ষণ করোনার খবর দেখবেন না
এমতাবস্থায় অকল্পনীয় 'এক্সপোনেনশিয়াল' হারে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে চাইলে একত্রে বহু শহর, মফস্বলে ও আক্রান্ত জেলায় লক ডাউন ঘোষণা করা এবং দূরপাল্লার পরিবহণ বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না। খুব তাড়াহুড়ো করে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়নি, বরং একটু দেরিই হয়েছে। ইতোমধ্যে মুম্বাই ইত্যাদি শহর থেকে বিহার-বাঙলার গ্রামে চলে গেছেন যাঁরা, তাঁদের কজনের শরীরে ভাইরাস আছে, কেউ জানে না। তাঁদের থেকে গ্রামাঞ্চলে মহামারী শুরু হলে এক নতুন সংকট চালু হবে। তবু নানা কারণে আগে চালু করা যায়নি এই ব্যবস্থা, কিন্তু আর দেরি করার উপায় ছিল না। জোর করে ঘরে আটকে না রাখলে যে কাজ হবে না, তা রবিবারেও বোঝা গেল। শনিবার রাতে মাংসের দোকানগুলোর সামনে ছিল কলকাতার বাবুদের লম্বা লাইন, যেখানে পরস্পর তিন ইঞ্চিও ব্যবধান রাখেননি। রবিবার "জনতা কার্ফু"র মধ্যে ছুটির মেজাজে ক্রিকেট খেলেছেন, যেন উৎসব হচ্ছে। বিকেল পাঁচটায় অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানানোর একটি পাঁচ মিনিটের প্রতীকী অনুষ্ঠানের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে তাঁর ভক্তদের সম্যক চেনেননি এখনও, তা প্রমাণিত হল যখন দলে দলে মানুষ গায়ে-গায়ে ঘেঁষে খোল করতাল বাজিয়ে মিছিল করে রাস্তায় নেমে পড়লেন সারাদিনের সমস্ত সামাজিক দূরত্বের অনুষ্ঠানকে প্রহসনে পরিণত করে। এসব অন্ধ মানুষকে ঘরে রাখতে পারে একমাত্র প্রকৃত কার্ফু। রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা অপছন্দের ব্যাপার হলেও এই মুহূর্তে তাছাড়া গত্যন্তর ছিল না। তাড়াতাড়ি কঠোর না হবার মাসুল দিচ্ছে ইতালি। সেদেশের রাষ্ট্রনায়ক আজ বলছেন যে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন এবং ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা। অথৈ জলে পড়েছে আমেরিকার মতো রাষ্ট্রও।
তবে অসুবিধা মানুষের হবেই। যে যত গরিব, তার সমস্যা তত বেশি। এই পরিস্থতিতে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু রাখা এবং সংশ্লিষ্ট যান-বাহনেএ ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক পণ্যের যোগান বজায় রাখার বন্দোবস্তও চাই৷ মুদিখানা-সবজি-ফল-মাছ-মাংস-দুধ-
করোনার ভালোমন্দ, কার কার পৌষমাস?
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অবশ্য বলছে যে শুধুমাত্র লক ডাউন করোনাভাইরাস আটকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। রোগী এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বের করা এবং অন্যদের থেকে তাঁদের সরিয়ে রাখার প্রক্রিয়া প্রবলভাবে জারি রাখতে হবে। নইলে লক ডাউন উঠতেই রোগটি হুহু করে ছড়াবে আবার। এই জন্য শুধু বিদেশ-ফেরত বা দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভ্রমণের ইতিহাসের উপর নির্ভর না করে সমাজের বিভিন্ন অংশে সন্দেহের ভিত্তিতে অথবা র্যান্ডম পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা চালাতে বলছেন তাঁরা। এটা না করলে প্রকৃত অবস্থা আন্দাজই করা যাবে না৷ যতক্ষণে ৩০০ জন পজিটিভ রোগী আমরা পেয়েছি, ততক্ষণে হয়ত বাস্তবে সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ইতালির পরিণতি এড়াতে গেলে এঁদের খুঁজে বের করতে হবে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, করোনাভাইরাস ঘটিত এই অধিমারী আমাদের দেশ তথা গ্রহের পক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে লড়ে আমাদের জিততে হবে। তার জন্য লড়তে হবে জাতি (nation) হিসেবে এবং প্রজাতি (species) হিসেবে। সম্মিলিতভাবে। সোশাল ডিস্ট্যান্সিং-এর মধ্যেও থাকবে একটা দলবদ্ধতার ভাব। আমরা সেটা পারব এবং কয়েক কোটি মানুষকে মরতে না দিয়েই এবারের প্যানডেমিকটা আমরা সামলে দেব।
(কৌশিক দত্ত আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক, মতামত ব্যক্তিগত)
এই কলামের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে