Advertisment

তৃণমূলে পিকের 'কর্পোরেট' দাওয়াই, ভাল-মন্দের দায় নিতে নারাজ নেতারা

তৃণমূলে এখন সবাই অপেক্ষা করে থাকেন, কখন নতুন নির্দেশ আসবে। সেই মতো কাজ করতে হবে। আর এর ফলে দল যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দায় ঝেড়ে ফেলা এবার সহজ হবে বলেই মনে করছে একটা বড় অংশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
prosant kishor, tmc

প্রশান্ত কিশোরই যেন ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসের।

নির্বাচনের পর এলাকায় টিকিটি পর্যন্ত দেখা যেত না অনেক তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়কদের। আর এখন তাঁরাই সাধারণের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজন সারছেন হাসিমুখে। এমনকী তৃণমূল জনপ্রতিনিধি বা নেতা হয়েও রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে জনসংযোগের দাওয়াই বাস্তবায়িত করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন জেলা স্তরের নেতারা। সৌজন্যে, 'দিদিকে বলো'। এসব কিছুই আদপে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের খেল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

Advertisment

লোকসভার ফল প্রকাশের পর আর দেরি করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে তড়িঘড়ি নিয়োগ করেছেন গড় রক্ষার তাগিদে। আর তৃণমূলকে 'বাঁচাতে' একা প্রশান্ত নন, কোমর বেঁধে নেমেছে তাঁর সংস্থা আইপ্যাকও। আর এরপরই তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক শুরু হয়েছে ঘন-ঘন। সব শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে 'দিদিকে বলো' ফোন নম্বর ও ওয়েবসাইট প্রচার শুরু হয়েছে। এই প্রচারের অঙ্গ হিসাবেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে রাত কাটানো, খাওয়া-দাওয়া ও মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প শুনে জনসংযোগ প্রক্রিয়ায় জোর দিয়েছে ঘাসফুল নেতা-কর্মীরা। এসব কিছুর লক্ষ্য একটাই, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মমতা ম্যাজিক অক্ষুণ্ণ রাখা।

আরও পড়ুন- প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ

এখন সব থেকে মজার বিষয়, তৃণমূল কংগ্রেস বা রাজ্য সরকার কোনও ঘোষণা করলে বা সিদ্ধান্ত নিলেও শুধু তৃণমূল নয়, অন্য দলের লোকেরাও প্রশান্ত কিশোরের ভুত দেখতে শুরু করেছেন। কোনও নেতার ব্যবহারে পরিবর্তন দেখলেই সকলে বলছেন, প্রশান্ত-দাওয়াই। আবার ২১ জুলাই শহিদ দিবসে দলনেত্রীর ভাষণ নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করেছেন। সমালোচকদের অনুমান, প্রশান্ত নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্থির করেছিলেন ওই বক্তব্য। তাহলে কি প্রশান্ত কিশোর লোকসভার ধাক্কা সামলে তৃণমূল কংগ্রেসের মুশকিল আসান করতে সক্ষম হবেন, রাজ্য রাজনীতিতে এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।

আরও পড়ুন- ‘দিদিকে বলো’-র পর এবার তৃণমূল নেতাদের গতিবিধিতে নজর প্রশান্ত কিশোরের

তৃণমূলে এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও নির্দেশ দিলেই রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতারা মনে করছেন, এর পিছনে প্রশান্ত কিশোরই রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এখন কেউই আর দায়-দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে রাখতে চাইছেন না। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দিচ্ছেন, তেমনটাই করছেন। তৃণমূলে এখন পুরোদমে 'কর্পোরেট কালচার' চলছে। বহু ক্ষেত্রেই কর্পোরেটে 'বস' যেমন নির্দেশ দেন, তেমনই কাজ করেন নিচুতলার কর্মীরা। সেখানে আলাদা করে তাঁদের দক্ষতা প্রকাশের তেমন বিশেষ জায়গা থাকে না। ফলে কাজের দায় নেওয়ার ক্ষেত্রেও 'এক্সিকিউটিভ'কর্মীদের দেখা যায় না। তাঁরা কেবল সঠিকভাবে নির্দেশটি পালন করে থাকেন। তৃণমূল কংগ্রেস এখন সেই সংস্কৃতিই রপ্ত করছে। সবাই অপেক্ষা করে থাকেন, কখন নতুন নির্দেশ আসবে। সেই মতো কাজ করতে হবে। আর এর ফলে দল যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দায় ঝেড়ে ফেলা এবার সহজ হবে বলেই মনে করছে একটা বড় অংশ।

জেলাস্তরের নেতারা ভাবছেন, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের ফলাফলে যথেষ্ট চাপে রয়েছে তৃণমূল। তাঁরা অনেকে কানাঘুষো করছেন, যখন পুরানো কর্মীদের দলে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হতো, তখন কেউ পাত্তা দিত না। শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবটা এমন ছিল যে তখনকার মতো ভাল ফল যেন এমনি এমনিই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর এখন সেই পুরানো কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়ার দাওয়াই দিচ্ছেন বলেই তাঁদের মত। তাই শেষমেষ বিধাননগর পুরনিগমে কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে মেয়র করল তৃণমূল। ফলে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীর মনের ভাবই এখন 'গেঁয়ো যোগী'র মতো। বিদেশি কোচের হাতে পড়ে এইসব 'গেঁয়ো যোগী'রা আপাতত মাঠে অনুশীলনে নেমেছেন। সামনেই বড় ম্যাচ। ফলের দিকেই তাকিয়ে সবাই।

Mamata Banerjee All India Trinamool Congress
Advertisment