ভারতের সঙ্গে টি-২০ এবং টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে শেষদিনের প্র্যাকটিসে ঘাম ঝরাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অনেক টানাপোড়েনের পর তাঁদের দেশের বোর্ডের কাছ থেকে এগারো দফার দাবি/চাহিদা মিটিয়ে আবার প্র্য়াকটিসে মনোযোগ দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু শেষ দিনের প্র্যাকটিসে অনুপস্থিত অধিনায়ক তথা বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার শাকিব আল হাসান। সংবাদ মাধ্য়ম, এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে নি। কারণ? তিনি তখন ইন্টারন্য়াশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের (এসিইউ) জেরার মুখে।
জেরার মুখে শাকিব স্বীকার করেন যে, তিন-তিনজন বুকি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে টিম ও মাঠের ভিতরের খবরের জন্য়। বিট কয়েন এবং ডলার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কেও কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এবং এত বড় কথা তিনি বেমালুম চেপে যান। এসিইউ-কে তো নয়ই, কাউকেই জানান নি। ফলস্বরূপ, আইসিসি-র অ্যান্টি-করাপশন কোডের ২.৪.৪ ধারা অনুযায়ী দু'বছরের জন্য় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত শাকিব। অবশ্য দোষ স্বীকারের জন্য় এক বছরের সাজা মাফ করেছে আইসিসি, কিন্তু আগামী বছরের টি-২০ বিশ্বকাপ এবং আইপিএল-এ বিশ্ববন্দিত এই অলরাউন্ডারকে দেখতে পাব না আমরা।
আরও পড়ুন: ক্রীড়ানক্ষত্ররা এবার এক ছাদের তলায়, দিন-রাতের টেস্টে ইডেনে বসছে চাঁদের হাট
ভারত-বাংলাদেশ সিরিজের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে কি?
বাংলাদেশের অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেছেন, এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সিরিজের ওপর প্রভাব ফেলবে না। এদিকে আমরা দেখছি, টিমের সিনিয়র ওপেনার তামিম ইকবালও আসছেন না তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের জন্য়। আরও অনেক সিনিয়র প্লেয়ার সরে দাঁড়ানোতে প্রায় নতুন করেই দল সাজাতে হয়েছে নির্বাচকদের। আপাতদৃষ্টিতে এতে সমস্যাই হওয়ার কথা।
কিন্তু এর একটা ইতিবাচক দিকও আছে। একদিকে যেমন টিম দুর্বল হয়ে পড়বে, তেমনই আবার একঝাঁক জুনিয়র প্লেয়ারকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পরখ করার সুযোগ থাকছে।
ভারত যেমন নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে টি-২০ সিরিজ থেকে বিশ্রাম দিয়েছে। তাঁর জায়গায় অধিনায়কত্ব করবেন টিম ইন্ডিয়ার হিটম্য়ান রোহিত শর্মা। তিনি যে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তা বলাই বাহুল্য়। দলে প্রত্য়াবর্তন করেছেন সনজু স্য়ামসন। সদ্যই বিজয় হাজারে ট্রফিতে দ্বি-শতরান করেছেন তিনি। ব্য়াটিংয়ে ঋষভ পন্থ থাকা সত্ত্বেও সনজুর উইকেট কিপিংয়ের হাত মন্দ নয়। দেখা যাবে নতুন মুখ শিবম দুবেকেও।
আরও পড়ুন: শাকিবকে ঘুরিয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বললেন ভন, টুইটারে যুদ্ধ চালাচ্ছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ অধিনায়ক
প্রসঙ্গ অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান লড়াই
বেশ একটা হাড্ডাহাড্ডি সিরিজ আশা করছি অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মধ্য়ে। পাকিস্তান তাদের দলকে ঢেলে সাজিয়েছে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে ছেঁটে ফেলার পর। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক মিসবা উল হক এখন পাকিস্তানের হেড কোচ। এবং সেদেশের ক্রিকেট বোর্ড এই প্রথম এশীয় দেশ হিসাবে তাঁকে নির্বাচকের বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ।
মিসবা বেশিদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন নি। সমসাময়িক ক্রিকেট সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। খেলোয়াড়রা সম্মানও করেন তাঁকে। সর্বোপরি এই মুহূর্তে পাকিস্তান দলে যাঁরা খেলছেন, তাঁদের উপকারিতা সম্বন্ধে তিনি পরিচিত। টিম যখন ভাল খেলে না, তার দায় সবচেয়ে বেশি বর্তায় ক্য়াপ্টেন এবং কোচের ওপর। যদি দায়িত্ব নিতে হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ এবং আবহাওয়া, এবং কোন খেলোয়াড় তার পক্ষে উপযোগী, তা দেখেই টিম বাছা উচিত। সেক্ষেত্রে ভালোটা যেমন বাহবা কুড়াবে, তেমনি খারাপ করলে ঘাড়ে খড়্গ নেমে আসবে। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্য়াঙ্গারও কিন্তু একজন নির্বাচক। সুতরাং খারাপ ফলের পর মিসবাকে ছেঁটে ফেললে কিছু বলার থাকবে না।
খেলার দুনিয়ায় আর যা কিছু
টাইগার উডসের তখন ছয় বছর বয়স। খুদে সেই ছেলেকে দেখে কিংবদন্তি গল্ফার স্যাম স্নিড বলেছিলেন, এই ছেলেটার যদি 'বার্ন আউট' না হয়, তাহলে ও একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্ফার হবে। এবছর টাইগার পিজিএ ট্যুরে ৮২ তম খেতাব জিতে সেই স্যাম স্নিডকেই ছুঁয়ে ফেললেন।
অপরদিকে, লুইস হ্য়ামিলটন মার্সিডিজের হয়ে অপ্রতিরোধ্য় গতিতে এগিয়ে চলেছেন তাঁর ষষ্ঠ ফর্মুলা ওয়ান বিশ্ব চ্য়াম্পিয়নশিপের দিকে। আর নিজের বয়সকে ছাপিয়ে গিয়ে রজার ফেডেরার এটিপি ট্যুরে খেলে ফেলেছেন তাঁর ১৫০০ তম ম্য়াচ। সুইজারল্যান্ডের বাজেলে অনুষ্ঠিত তাঁর দশম খেতাব জিতেছেন সম্প্রতি। এই অতিমানবদের পারফরম্য়ান্স আমরা চাক্ষুষ করতে পারছি, আমাদের সৌভাগ্য়।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে