লোকসভায় ব্যাপক গেরুয়া উত্থানের সাক্ষী থেকেছে বাংলা। মোট ১৮ সাংসদ নিয়ে এখন শাসক তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। তবু এ রাজ্যে এমন বেনজির ভাল ফলাফল করলেও দ্বিতীয় মোদী সরকারে ঠাঁই পেয়েছেন (তাও আবার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে) মাত্র দুই সাংসদ। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই চাপা অসন্তোষও দানা বাঁধে বলে খবর। তবে মন্ত্রীত্বের সাধ পূরণ না হলেও, সপ্তদশ লোকসভার সংসদীয় কমিটির পুনর্গঠনের মাধ্যমে সেই ক্ষোভে মলম দেওয়ার চেষ্টা করলেন মোদী-শাহ। সংসদীয় কমিটিগুলিতে ব্যাপক রদবদলের ফলে অধিকাংশ কমিটিতেই পদ্ম শিবিরের প্রাধান্য চোখে পড়ছে। আর এর ফলে, দুই মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে বাকি প্রায় সব সাংসদকেই নানা কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। বাংলা থেকে সংসদীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মোট ১৬ জন বিজেপি সাংসদ। এই পদক্ষেপকে বাংলার বিজেপি সাংসদদের মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার ক্ষতে প্রলেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দ্বিতীয় মোদী সরকারে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী। বাকি ১৬ জন সাংসদকেও এবার বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে সদস্য হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন, দলের রাজ্যসভার দুই সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও।
সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ও মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। অর্থ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে এসএস আলুহওয়ালিয়াকে। রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত হয়েছেন বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য।
আরও পড়ুন: LIVE: স্ত্রী অসুস্থ, সময় চাইলেন রাজীব কুমার
১৯শে লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। এখন তাই ২১শে বাংলা জয়কেই পাখির চোখ করেছে মোদী-শাহ জুটি। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াচ্ছে বিজেপি। নানা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় দলের মুখ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মমতা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বারে বারে সরব হচ্ছেন তিনি। তাই ডাকাবুকো এই সাংসদকে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য করা রীতমিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এরফলে জোড়াফুল শিবিরকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় জিতেছেন হুগলির মতো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে। দলের অন্দরে এখন লড়াকু নেত্রী বলেই পরিচিত একদা মমতা ঘনিষ্ঠ এই অভিনেত্রী। তাই, একুশের আগে তাঁকে সংসদীয় কমিটিতে এনে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাড়তি উদ্যম যোগাতে মরিয়া দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবন।
এদিকে, ধুঁকছে রাজ্যের চা শিল্প। চা শ্রমিকদের আন্দোলন থেকেই উঠে এসে বিজেপি সাংসদ হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা। তাঁর লড়াইকে সম্মান জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। শ্রম মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে তাঁর। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আদতে আদিবাসী চা শ্রমিকদের কাছে টানার বার্তা দিতে চেয়েছে পদ্ম নেতৃত্ব, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।
এক নজরে দেখেনিন বাংলার কোন বিজেপি সাংসদ কোন সংসদীয় কমিটির সদস্য হলেন....
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংসদীয় কমিটিতে বাংলার ১৬ জন সাংসদকে জায়গা দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। এর ফলে একদিকে যেমন, শাসক তৃণমূলকে জোরদার বার্তা দেওয়া গেল, তেমনই দলের রাজ্য শাখার অন্দরের ক্ষোভও প্রশমিত হল। সব মিলিয়ে এই সদস্যপদ আগামী বিধানসভায় বিজেপি সাংসদদের লড়াইয়ে বাড়তি অক্সিজেন দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।