রাশিয়ান জ্বর থেকে কারোরই রেহাই নেই এ মরশুমে। তা সে যেই হোন না কেন! নিজেদের কর্মক্ষেত্র থেকে এক ছুটে বাড়ি চলে যেতেও পিছ পা নন তাঁরা, ম্যাচ দেখানো শুরু হলে। আগামী এক মাস রুটিন এরকমই থাকবে সুব্রত-অধীর-সেলিম-দিলীপদের।
নামগুলো খুব সাধারণ ঠেকল? আমরা পঞ্চায়েতমন্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, সিপিএম সাংসদ, বিজেপি রাজ্য সভাপতিদের কথা বলছিলাম। রাজনীতির পর ফুটবলই যে এঁদের মূল আকর্ষণ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার জন্য় হা-পিত্য়েশ করে বসে আছেন রাজ্য়ের ডান-বাম শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘরে থাকুন বা বাইরে কাজের মধ্য়ে থাকুন, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের একটাই লক্ষ্য়, বিশ্বকাপ ফুটবল ম্য়াচ দেখা। প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্য়ায় ও রাজ্য় কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বাজি জার্মানি। কংগ্রেস ও তৃণমূল এক্ষেত্রে এক ফ্রেমে। অন্য়দিকে সিপিএমের পলিটব্য়ুরো সদস্য় মহম্মদ সেলিম লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি সমর্থন থাকবেন। লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপিয়ান দলগুলোর ভাল খেলা দেখার জন্য় মুখিয়ে আছেন বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এখানেও একটু মিল রয়েছে সিপিএম ও বিজেপির। এ যেন রাজ্য় রাজনীতির ছোঁয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের লড়াইতেও।
রাজ্য়ের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্য়ায় বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। সুব্রতবাবু বললেন, ’’১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে একেবারে মাঠে গিয়েছি। ইতালি, জার্মানি, জাপান, কোরিয়াসহ নানা দেশে গিয়ে বিশ্বকাপের খেলা দেখেছি। তবে এবার আর যাওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার থেকেই বিশ্ব ফুটবল নিয়ে মজে উঠেছেন রাজ্য়ের এই প্রবীণ রাজনীতিক। আপনার বাজি কোন দেশ। সুব্রতবাবুর জবাব, ’’এবারের বিশ্বকাপে আমার বাজি জার্মানি। তবে যে কোনও ইউরোপিয়ান দেশের ফুটবলই আমার কাছে আকর্ষণীয়। ইউরোপিয়ান ফুটবল ঘরানা আমার খুব পছন্দ। প্রথম দিকের খেলা হয়ত দেখা হবে না। কয়েকটা খেলা হয়ে যাওয়ার পর দেখব।’’
আরও পড়ুন, FIFA World Cup 2018: জন আব্রাহাম জানালেন কোন দল তাঁর পছন্দের
সাংসদ অধীর চৌধুরীও এর আগে বহুবার গিয়েছেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্য়াচ দেখতে। লড়াকু এই নেতার বাজিও জার্মানী। অধীর চৌধুরীর জানালেন, ’’ওই দলে সবাই স্টার। এবারও ফাইনাল ম্য়াচের টিকিট পেলে খেলা দেখতে যাব। নকআউট থেকে প্রতিটি খেলা টিভিতে দেখব। তখন সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।’’ ফুটবল নিয়ে যেন রীতিমত গবেষণা করেছেন বহরমপুরের এই সাংসদ। ’’বিশ্বকাপ খুব মজার। এই মঞ্চে হঠাৎ করে উঠে আসে ডার্ক হর্স। বিখ্য়াতরা থাকলেও অখ্য়াতরাই সেরা হয়ে যায়। যেমন বিশ্ব ফুটবলে রজার মিল্লা এখনও পরিচিত নাম।’’ অধীরের গলায় শোনা গেল অভিযোগের সুর, ’’ভারতে খেলাধূলাকে কোনও মর্যাদা দেওয়া হয় না। রাজনৈতিক নেতারা মাঠের ছড়ি ঘোরালে সেই দেশের খেলায় উন্নতি করা অসম্ভব।’’
সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বিশ্ব ফুটবল নিয়ে মাতোয়ারা হলেও মাঠেও তিনি আদর্শগত ভাবে দেশকে সমর্থন করেন। ফুটবল মাঠে বৈভবশালী ইউরোপের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর লড়াই উপভোগ করেন এই সিপিএম নেতা। জেরুজালেমে খেলতে অস্বীকার করায় মেসিকে নিয়ে গর্ব অনুভব করেন সেলিম। বিশ্বকাপ নিয়ে কী ভাবছেন? সিপিএম সাংসদ খোলসা করলেন, ’’খেলা দেখার ক্য়ালেন্ডার তৈরি করেছি। ভারতের সেই সৌভাগ্য় তো নেই। আমি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে সমর্থন করি। উন্নয়নশীল দেশগুলো ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সমানতালে লড়াই করে আসছে। লাতিন আমেরিকা ছাড়া আফ্রিকান ও এশিয়ার দেশগুলোর খেলাও দেখব। পুরো পরিবার অপেক্ষা করে আছে ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য়।’’
আরও পড়ুন, FIFA World Cup 2018: বিশ্বকাপ ট্রিভিয়া-ইতিহাস থেকে
গোটা বিশ্বকাপ ম্যাচের সূচি হাতের কাছেই রেখেছেন। তবে সব খেলা দেখবেন না বিজেপির রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উচ্চমানের খেলা দেখতেই তিনি আগ্রহী। খড়্গপুরের বিধায়ক বললেন, “বিশ্বকাপ ফুটবলে কিছু সিলেক্টিভ ম্য়াচ দেখব। আগে রাতে ম্য়াচ থাকতো, সব দেখা যেত না। এখন রাতে ম্য়াচ কম আছে। প্রতি বারই বিশ্বকাপ ফুটবল দেখি।’’ কোনও নির্দিষ্ট দেশকে সমর্থন করেন না দিলীপবাবু। “আমি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, হল্য়ান্ড, জার্মানি, স্পেনের খেলা পছন্দ করি। যেখানেই থাকব বিশ্বকাপের খেলা মিস করতে পারব না।’’ তাঁর আক্ষেপ, “আগের সেই উঁচু মানের খেলা আর নেই। মারাদোনা একাই ম্য়াচ জিতিয়ে দিতেন। মেসি, রোনাল্ডোরা দেশকে জেতাতে পারছেন না। ভারত প্রতিযোগিতায় না থাকলেও ফুটবলের উন্মাদনা তো থাকবেই। যারা ভাল খেলবে সে দলকেই সমর্থন করব।’’