কলকাতা কর্পোরেশন, তারপর চার পুরনিগম, এবার ১০৮ পুরসভা। রাজনৈতিক মহলের মতে, সকালের শুরুই বুঝিয়ে দেয় দিন কেমন যাবে। মহানগরের ভোটে সূত্রপাত হয়েছিল, আজ, রবিবার রাজ্যের শতাধিক পুরসভার ভোটে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। যদিও আগামি ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও বাকি রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অশান্তি, রক্তপাত ছাড়া বাংলার ভোট সম্পূর্ণ হওয়ার কোনও লক্ষণ আপাতত নেই। সোমবার এমনই নানান চিত্র ধরা পড়ল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে।
সকাল থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করে এসেছে মারধর, বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোটের। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তো অভিযোগ রয়েইছে। টিটাগড়, ব্যারাকপুর, ভাটপাড়াসহ রাজ্যের নানা এলাকার বুথের সামনে দিনভর ছোটখাট জমায়েত লেগেই ছিল। কোভিড বিধি তো লাঠে উঠেছে। এদিন দেখা গেল ভাটপাড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি এজেন্টরা একে একে সবাই বুথের বাইরে বেরিয়ে এলেন। বেরিয়ে সামনের কনফেকশনারি দোকানে দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন কেন আর বুথে থাকা গেল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রৌঢ় নির্বাচনী এজেন্টের বক্তব্য, 'যেভাবে ছাপ্পা, রিগিং চলছে তাতে আর বুথে ভিতর থেকে কী লাভ? পুলিশ, প্রশাসন, কমিশন, মিডিয়া কোথাও অভিযোগ করলে কোনও কাজ হবে কী? এভাবে ভোট করার কোনও মানে হয় না।' এরপরই দেখা গেল দশাশই চেহারার এক যুবক এসে ওই প্রৌঢ় বিজেপি এজেন্টকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলছে তৃণমূলে যোগ দিয়ে দাও। এটা গন্ডগোলের পুরনির্বাচনে চুপচাপ 'গণতান্ত্রিক পুরভোট'। তার আগেই ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর, ডাব বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে ভাটপাড়ার সার্কাস মোড়ে।
ব্যারাকপুরের ২০, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে শয়ে শয়ে লোক। এখানেও বিরোধী এজেন্টদের সাতসকালেই বুথের বাইরে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যজুড়ে। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে শহরের অলিতে-গলিতে হাজার লোক খেপে খেপে জমায়েত করেছিল। তারপর চার পুরনিগমে বিস্তর অশান্তির অভিযোগ উঠেছিল। এবার ১০৮ পুরসভা ভোটে তা পূর্ণ মাত্রা পেল। সঙ্গে তো বাইক বাহিনীর আনাগোনাও ছিল প্রায় সর্বত্রই।
এজেন্ট তাড়ানো থেকে প্রার্থী পেটানো সমস্ত অভিযোগই উঠেছে এদিনের ভোটে। যেখানে বিরোধীদের সংগঠন মজবুত সেখানে অশান্তির মাত্রাও ছিল বেশি। বয়স্ক ব্যক্তিরা ভোট দিতে গেলেই যেন ইভিএমে প্রতীক চিহ্ন দেখতে পান না। তাঁর ভোট দিতে সহায়ক লেগেই থাকে। এদিনের নির্বাচনে সেই চিত্র ফের ধরা পড়ল। গন্ডগোল, ছাপ্পা, ভোট লুট, রিগিংয়ের অভিযোগ এনেছে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলই। এসব খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও।
পুরভোটের এমন 'গণতান্ত্রিক নির্বাচন' দেখে স্তম্ভিত রাজনৈতিক মহল। বিরোধীদের দাবি, সারা ভারতে যেখানে হিংসা ছাড়া নির্বাচন চলতে পারে তাহলে এখানে কেন তা হবে না। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।