কংগ্রেসের হাত ধরা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বাম শরিকরা। সঙ্গে বাড়তি উদ্বেগ, জোট নিয়ে কথা এগোনোর পর যদি শেষমুহূর্তে তৃণমূলকে সঙ্গী করে কংগ্রেস? তখন মান-সম্মান সবই বিসর্জন যাবে। এখন এই আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বামেদের। বাম শরিক সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের শিবিরে যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে মত নেই, তা একপ্রকার স্পষ্ট।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে এরাজ্য়ে জোটের রাজনীতি জট পাকিয়ে গিয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোটবদ্ধ হবে, নাকি কংগ্রেসের হাত ধরবে বামেরা? নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তত জোটের এই অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকবে। তবে রাজ্য়ে বিজেপিকে একাই লড়তে হবে, এটা স্থির।
আরও পড়ুন: মতপার্থক্যের জেরে দলত্যাগ সিপিএমের মইনুলের
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রণ্ট কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়েছিল। আসন জয়ের দিক থেকে লাভবান হয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের একটা বড় অংশের ভোট যে বামেদের ঝুলিতে পড়েনি সে বিষয়ে নিশ্চিত বামফ্রণ্ট। জোটের লাভের প্রায় সবটাই ঢোকে কংগ্রেসের ঘরে। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য় সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, "আমরা সিপিএমকে জানিয়েছি, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কোনও লাভ হবে না। কারণ কংগ্রেসের ভোট শিফট হবে না। এখন যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা বলি শেষমুহূর্তে তৃণমূলের সঙ্গে চলে গেলে বিষয়টা হাস্যকর হবে। তার পরিবর্তে আমরা ১৬টা বামদলকে একজোট করে আন্দোলনের মধ্য় দিয়ে ইউনাইটেড ফোরাম তৈরি করতে বেশি আগ্রহী।"
বামফ্রণ্টের বড় শরিক সিপিএম। বামফ্রণ্টের বাইরে গিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেও বহু জায়গায় খালি হাতই থেকে গিয়েছে সিপিএমের। একথা তুলে নরেনবাবুর মন্তব্য়, "সিপিএমের যদি বোধোদয় না হয়, তাহলে এগোতে পারবে না। আরও ডুবতে হবে। সিপিএম শক্তিশালী। ওদের বেশি করে ভাবতে হবে।"
বামেদের সঙ্গে জোট হলেও কংগ্রেসের ভোট যাচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপির ঘরে। তাই বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য় সিপিআই। তবে এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও দিল্লিতে একটা বোঝাপড়া চলছে। দলের রাজ্য় সম্পাদক স্বপন বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আমাদের মধ্য়েও দ্বিমত আছে। জোট করে কোনও লাভ হয়নি। বামেদের ভোট পাচ্ছে কংগ্রেস, কিন্তু কংগ্রেসের ভোট বামেরা পাচ্ছে না। তাহলে জোট কেন?" তাঁর কথায়, "জোট হয় উভয়ের স্বার্থে। উভয়কে রাজি হতে হবে। সিপিআই, সিপিএম, লিবারেশনের পার্টি কংগ্রেসে একই রেজোলিউশন নিয়েছে। রাজ্য়ে রাজ্য়ে ভোটের প্রশ্নে বিজেপিকে পরাজিত করার পন্থা রাজ্য় নেতৃত্ব ঠিক করবেন, সেই রাজ্য়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।"
এখন পর্যন্ত জোটের বিষয়টি জটিল বলেই ভাবছে আরএসপি। আরএসপির রাজ্য় সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর কথায়, "পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। বামপন্থীরা এখনও দৃঢ় কোনও অবস্থানে পৌঁছতে পারেনি। আমাদের অনেক ভাবতে হবে। জোট নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে।"
২০১৯ লোকসভার ভোট এগিয়ে এলেও আসতে পারে, যদিও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বিজেপি ও কংগ্রেস সামনের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য় করে দেশব্য়াপী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সিপিএম বলছে আলোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, "এখন পর্যন্ত জোট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। পুরো বিষয় নিয়ে আগে আলোচনা হোক। তারপর মন্তব্য় করব।"