বক্তব্য রাখলেন এক ঘণ্টা দশ মিনিট। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিই যে মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল সুপ্রিমোর শহিদ দিবসের ভাষণ তা একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছে। সিপিএম বা কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ করলেও, তাঁদের যে তিনি ধর্তব্যে রাখছেন না তা স্পষ্ট। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দলীয় কর্মীদের দিশা দেওয়ার এমন মঞ্চে এদিন তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্যে তেমন একটা ঝাঁঝ ছিল না বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বরং কিছু ক্ষেত্রে আক্রমনাত্মক কথা থাকলেও সেই তেজ অধরাই ছিল। উন্নয়নের পরিসংখ্যানের হিসেব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিন একনাগারে বিজেপিকে আক্রমণ করে গিয়েছেন মমতা। কারণ, তিনি বিলক্ষণ অবগত আছেন এখন তৃণমূলের পয়লা নম্বর প্রতিপক্ষ বিজেপি। কিন্তু এদিনের আক্রমণের ভাষা শুনে মনে হতে পারে বিজেপি কি এই রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে? সংখ্যা বলছে, এ রাজ্যে গুটি কয়েক বিধায়ক রয়েছে পদ্ম শিবিরের। তাঁদের কেউ কেউ আবার জার্সি বদল করে বিজেপিতে এসেছেন। তাহলে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের মুখে কেন এমন ভাষা!
এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বারে বারে বোঝাতে চেয়েছেন এ রাজ্যে যেনতেন প্রকারে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চাইছে। তাই কখনও তিনি বলেন, বাংলার সরকার ভাঙার খেলায় মেতেছে বিজেপি। আবার তিনি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে বিদায় দেওয়ার ডাকও দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, "২১ মে বদলা নিয়ে বিজেপির জামানাত বাজেয়াপ্ত করে বাংলাকে বহিরাগতরা চালায় না বাংলা বাংলাই চালাবে তা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে।"
আরও পড়ুন- ২১শে অন্য মুডে ধর্মতলা চত্বর, কী দিশা দেখাবেন দলনেত্রী?
প্রকাশ্য সভায় যে ভঙ্গিতে তৃণমূল নেত্রী বিরোধীদের আক্রমণ করেন এদিন তাঁর ভাষণে তা লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি প্রশাসনিক কার্যকলাপে ভিডিও কনফারেন্স করেন নিয়মিত। দলের সাংগঠনিক বৈঠকও করেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এদিনের মমতার মধ্যে যেন ছিল কতকটা তেমন মেজাজ। ওয়াকিবহালমহল মনে করছে, সামনে জনতার ভিড়ে ভাষণ দিতে অভ্যস্ত নেত্রী। কিন্তু এই প্রথম ভার্চুয়াল জনসভায় ভাষণ দেওয়ায় তেমন স্বকীয় মেজাজে দেখা গেল না তাঁকে। তাহলে কী তিনি ভার্চুয়াল সভায় মুড ম্যাচ করতে পারেননি? নাকি ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেকটাই রক্ষনাত্মক কৌশল? প্রশ্ন অনেক উত্তর নেই।
২১ জুলাই শুধু নয় যে কোনও বড় জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উদ্বেলিত করে তোলে। নেত্রীর বক্তব্য থেকে লড়াইয়ের রসদ জোগার করে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এবার তো সম্মুখ সমরে গেরুয়া শিবির। বিজেপি ইতিমধ্যে ২০২১-কে লক্ষ্য করে মোট ৬টি ভার্চুয়াল জনসভা করে ফেলেছে। ফলে লড়াই জমে উঠেছে। তাই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে মমতার এদিনের বক্তব্য যেন কিছুটা নিস্তেজ। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা বলবে জনতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন