আগরতলার সমাবেশে বিপ্লব দেবের সরকারকে আলআউট আক্রমণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 'আজ খুঁটিপুজো হল, ২০২৩-এ হবে বিসর্জন।' সভামঞ্চ থেকে এভাবেই বিপ্লব দেবের সরকারকে হুঁশিয়ারি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। বিজেপির আমলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে দাবি অভিষেকের। রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে অভিষেকের তোপ, 'বিজেপিকে আনা মানে খাল কেটে কুমির আনা। বিজেপি এলে ত্রিপুরা হবে আফগানিস্তান।'
বহু 'কাঠখড়' পুড়িয়ে শেষমেশ রবিবার নির্ধারিত সময়েই আগরতলার সভামঞ্চে পৌঁছোন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে গতকালই শেষ মুহূর্তে আগরতলার রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে সভা সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। যদিও পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টের নির্দেশে সভার অনুমতি পায় তৃণমূল। তারও আগে শনিবার সকালে রাজ্যের কোভিড টেস্ট নিয়েও নয়া নির্দেশিকা জারি করে ত্রিপুরা সরকার। তৃণমূলের অভিযোগ, অভিষেককে আটকাতেই একের পর এক 'ছক' সাজিয়েছিল ত্রিপুরার বিপ্লব দেবের সরকার।
এদিন সভামঞ্চ থেকে একাধিক ইস্যুতে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে তুলোধনা করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, 'আমাকে কেন এত ভয় বিজেপির? সব এজেন্সিকে নিয়েও এত ভয় কেন? আমাকে আটকানোর জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হল। আমি আসব বলে কোভিড টেস্টের নিয়ম বদলেছেন। আমার উপর রাগ থাকতে পারে বিপ্লব দেবের। কিন্তু ত্রিপুরার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? খোয়াইয়ে গিয়েছিলাম কর্মীদের ছাড়াতে। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হল।'
একুশের ভোটে বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য বিপুল সাফল্য নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরেই তৃণমূলের নজরে ত্রিপুরা। বাংলার পড়শি এই রাজ্যে ইতিমধ্যেই সংগঠন পোক্ত করার কাজে গতি এনেছে জোড়াফুল। রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকেই ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেমিফাইনাল ধরে এগোচ্ছে তৃণমূল। অভিষেকের কথাতেই তা স্পষ্ট। এপ্রসঙ্গে বিপ্লব দেবের সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, '২০১৯-এ ভোট করতে দেননি। পঞ্চায়েতেও দেননি। এবার পুরসভার ভোট। পুরভোটে সব আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল। ২০২৩-এর আগে তো ঘরবাড়ি নিয়ে এখানে বসে থাকব। ২০২৩ পর্যন্ত ত্রিপুরার মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকব।'
ত্রিপুরায় বিজেপির আমলে জঙ্গলরাজ চলছে বলে এদিন তোপ দেগেছেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়, 'ত্রিপুরায় জঙ্গলরাজ চলছে। বিপ্লব দেবের সংকল্প দুয়ারে গুণ্ডা। দিল্লির রিমোট কন্ট্রোলের ব্যাটারি হিসেবে এখানে বসে রয়েছেন বিপ্লব দেব। তবে ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের ছুটি হয়ে গিয়েছে। এক ছটাক জমিও বিজেপিকে ছাড়বে না তৃণমূল। আজ খুঁটি পুজো করলাম। ২০২৩-এ হবে বিসর্জন।' ত্রিপুরায় বিজেপির ভীত নড়ে গিয়েছে বলে দাবি করে এদিন অভিষেক আরও বলেন, 'সুইচ টিপলেই ১৫ বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে চলে আসবেন। তবে তৃণমূল সরকার ভাঙার রাজনীতি করে না। মানুষের রায় নিয়েই ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল।'
আরও পড়ুন- ‘বিজেপিতে যাওয়া ভুল ছিল’, স্বীকার করে তৃণমূলে ‘ঘরওয়াপসি’ রাজীবের
শনিবার শেষ মুহূর্তে সভা সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল ত্রিপুরা পুলিশ। শেষমেশ ত্রিপুরা হইকোর্টের হস্তক্ষেপে সভার অনুমতি মেলে। শেষ মুহূর্তে রবীন্দ্র ভবনের সামনে সভার অনুমোদন বাতিল প্রসঙ্গেও এদিন বিজপি শাসিত ত্রিপুরা সরকারকে আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, 'ভাবছেন গায়ের জোরে জঙ্গলরাজ কায়েম করে রাখবেন। গালে চড় মেরে সভার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট।'
একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি দিন কয়েকের মধ্যেই ফের ত্রিপুরায় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীপুজো মিটলেই ফের ত্রিপুরায় আসবেন অভিষেক। ডিসেম্বরে ত্রিপুরা সফরে আসবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৩-এ ত্রিপুরা 'দখল'কেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে জোড়াফুল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন