প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে জলপাইগুড়িতে এফআইআর হওয়ার সাড়ে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনায় নতুন মোড়। মূল অভিযোগকারী তথা আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর বাড়িতে গভীর রাতে গাড়ি পাঠাল 'হাইওয়ে অথরিটি'। শুক্রবার দুপুর দুটো নাগাদ মোদীর বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ি সদর থানায় প্রথম এফআইআর করেন সৌরভ। সন্ধ্যা ছ'টাতে এফআইআর জমা পড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আর এরপর রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে বলে দাবি তৃণমূল বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ)-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর। কী ঘটেছে গতকাল?
সৌরভ চক্রবর্তী এদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "কাল দুপুর দু'টোয় এবং সন্ধ্যা ছ'টায় এফআইআর করেছি। এরপর রাত্রি সাড়ে এগারোটার সময় একটা অদ্ভুত গাড়ি আসে। আমি তখন বাড়ির দোতলায়। নীচে আমার নিরাপত্তারক্ষীরা ছিলেন। তাঁদের বলা হয়, 'গাড়িটি হাইওয়ে অথরিটি থেকে আসছে। দরজা খুলুন, আমরা এমএলএ সাহেবকে চিঠি দেব'। আমার নিরাপত্তারক্ষীরা দরজা খোলেন নি।" শুক্রবার রাতের এই ঘটনাকে মোটেই সহজভাবে নিচ্ছেন না সৌরভবাবু। তিনি মনে করছেন, এফআইআর করায় নিশ্চয় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো "চক্রান্ত" করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: রাজীব কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ঘুরছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ! কী লেখা তাতে?
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ময়নাগুড়ির চূড়াভান্ডার এলাকায় মোদীর রাজনৈতিক সভা ছিল। এই সভায় যোগ দেওয়ার আগে ফালাকাটা-সলসলাবাড়ি অংশে চার লেনের হাইওয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রকাশিত হাইওয়ে অথরিটির বিজ্ঞাপন ঘিরেই যত বিপত্তি। ওই বিজ্ঞাপনে সম্মতি না নিয়েই তৃণমূল সাংসদ-বিধায়কদের নাম ছাপা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই কারণেই গতকাল প্রধানমন্ত্রী মোদী, হাইওয়ে অথরিটি এবং অনুষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তার নামে মোট চারটি এফআইআর দায়ের করেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণ, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ দশরথ তিরকে এবং ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারি।
ওই এলাকায় বিজেপি-র এক বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও তাঁর নাম বিজ্ঞাপনে না ছেপে কেন তৃণমূল বিধায়ক-সাংসদদের নাম ছাপা হল, প্রশ্ন তুলেছেন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান। মোদীর নামে কাল চারটি এফআইআর দায়েরের সিদ্ধান্ত যে দলীয়ভাবে গৃহীত হয়েছে, সে কথাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ দায়ের করার পর গভীর রাতে বাড়িতে এমন গাড়ি আসার ঘটনায় কি শঙ্কিত সৌরভ চক্রবর্তী? তৃণমূলের এই নেতা জানাচ্ছেন, "নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বাংলায় কেউ এফআইআর করার সাহস পায়নি, আমি করে দেখালাম। উনি নিজেকে বাঘ মনে করেন। কিন্তু আমাদের জেলায় অনেক বাঘ আছে। আমরা মাঝে মধ্যে বাঘ ধরি। আমি বাঘের বাবা।" ভবিষ্যতে আবারও এমন ঘটলে কী করবেন? প্রত্যয়ী সৌরভের জবাব, "এর পর আর সাহস পাবে না।"