লালকৃষ্ণ আদবানীর ১৯৯২ সালের ‘রাম রথযাত্রা’ এখনও জাতীয় রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়। এই রথযাত্রাই প্রচারের আলোয় এনেছিল বিজেপি ও আদবানীকে। এরপর দেশের নানা প্রান্তে নানা উদ্দেশ্যে রথ বের করেছে পদ্মশিবির। উত্তরাখন্ডে ‘পরিবর্তন যাত্রা’, ত্রিপুরায় “চলো পাল্টাই” ডাক দিয়ে বের করা হয় ‘বিজয় সংকল্প রথ’। একুশের ভোটের আগে বাংলাতেও রথযাত্রায়
ভর করেই 'পরিবর্তনে'র প্রচার পোক্ত করতে মরিয়া গেরুয়া নেতৃত্ব।
বিজেপির নজরে এখন বাংলা। আসন্ন বিধায়নসভা ভোটে সাফল্যের লক্ষ্যে সাংগঠনিকস্তরের একাধিক আদলবদল করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনকী 'প্রেসটিজ ফাইট' জিততে গত শুক্রবারই রাজধানীতে জরুরি তলব করা হয়েছিল দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের। বাংলা বিজয়ের ব্লু-প্রিন্ট তৈরিতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা প্রায় তিন ঘন্টা মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই বৈঠকে ছিলেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দলের যুগ্ম সম্পাদক শিবপ্রকাশও।
দিল্লির 'কৌশল' বৈঠকেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে দলের নানা কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানের এ রাজ্যের মাটিতে রথযাত্রা বের করার পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়েছে। ২৯৪ কেন্দ্রকেই যাতে রথ স্পর্শ করতে পারে তা নিয়েই এখন চিন্তা-ভাবনা করছেন পদ্ম নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন- গতানুগতিক নয়, ইস্তেহারে সাধারণের মতামত, অভিনব ভাবনা বিজেপি নেতার
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই বাংলায় 'পরিবর্তনে'র ডাক দিয়ে রথযাত্রা করতে চায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের রাজ্য নেতৃত্বকে দ্রুত এবিষয়ে পরিকল্পনা সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন শাহ-নাড্ডারা। বিজেপির এক নেতার কথায়, 'পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে ৫টি রথ বের করা হবে।যাতে বাংলায় ২৯৪টি কেন্দ্রকেই রথ স্পর্শ করতে পারে তেমনভাবেই যাত্রাপথের পরিকল্পনা হচ্ছে। দলের জাতীয়স্তরের নেতারাও রথের সওয়ারি হবেন। একজন হেভিওয়েট যিনি রথের সূচনা করবেন তিনি যাতে ওই রথের যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেন তা নিশ্চিৎ করা হবে। তবে কোন পথে এই রথগুলো যাবে তা দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।' এবার বাংলার ভোটে বিজেপির ভাবনা একমাত্র যে 'পরিবর্তন' তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সবে মাত্রা এ রাজ্যে ভোটের তোরজোর শুরু হয়েছে। এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই বাংলা দখলের লক্ষ্যে কোমর বেঁধে পরিকল্পনা সেরে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। সংগঠনের দেখভালে একাধিক কেন্দ্রীয় নেত্বকে যেমন বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই কাজে লাগানো হচ্ছে বিজেপি শাসিত গো-বলয়ের রাজ্য মধ্যপ্রদেশ-উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীদেরও। তৃণমূলকে নিশানা করে নির্বাচনী সাফল্যের লক্ষ্যে চলছে মেরুকরণের প্রচারও। ঠিক হয়েছে, আসন্ন ৩০-৩১ জানুয়ারি রাজ্য সফরে এসে মতুয়াদের কাছে বিশেষ বার্তা দেবেন অমিত শাহ। সেখানে নাগরিকত্বের বিষয়টি যেমন প্রাধান্য পাবে, তেমনই বিজেপির প্রচারে তুলে ধরা হবে অনুপ্রবেশ ইস্যুও। কৌশলে হিন্দু ভোট একত্রিত করতে মরিয়া বিজেপি। এছাড়াও বাঙালি আবেগ-মননকেও পুঁজি করতে চাইছে দল।
আরও পড়ুন- কথা রাখলেন শতাব্দী, কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার
সংগঠন পোক্ত করে প্রচারে জোর দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। বাংলার বুকে চলছে বিজেপির 'যোগদান মেলা'। ইতিমধ্যেই জোড়া-ফুল থেকে পদ্মে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী। একই পথের পথিক তৃণমূল-বাম-কংগ্রেসের ১০-এর বেশি বিধায়ক। কিন্তু, দলে বেনোজল যাতে না প্রবেশ করতে পারে সেদিকে রাজ্য নেতৃত্বকে সজাগ থাকতে সতর্ক করে দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এক বিজেপি নেতার কথায়, 'দল ধরে রাখতে হিমশিম অবস্থা হয়েছে মমতা দিদির। শুভেন্দু এসেছেন, আরও অনেকেই তালিকায় রয়েছেন। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সব দেখতে পাবেন।'
শাহ-নাড্ডারা ভোটের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রচারে ঝড় তুলছেন। কিন্তু কবে আসবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী? বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ভোট ঘোষণা হলেই বাংলায় গিয়ে ব়্যালি-জনসভা করবেন মোদীজি।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন