বিরোধী দুর্গের ভিত নড়িয়ে উনিশের নির্বাচনী লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে বিজেপির অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী ছিলেন অমিত শাহ। দ্বিতীয় মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মোদী সেনাপতি, সৌজন্যে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া। এ যেন আগাগোড়া অমিত শাহ’র মিশন ছিল। অন্তত এমনটাই ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের মতো এত বড় সিদ্ধান্তকে বাস্তবে করে দেখানোর জন্য যে সুকৌশলে এগিয়েছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি, তাতে বিজেপি নেতা তো দূরঅস্ত এমনকি মোদী মন্ত্রিসভার অনেক শীর্ষ মন্ত্রীও ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কী হতে চলেছে। মন্ত্রীত্বের পরও দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে হাত তুলে নেননি শাহ। বরং দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই দু’পা বাড়িয়ে থাকেন। সেই শাহই সম্প্রতি বিজেপি সাংসদদের নিয়ে ২ দিনের বিশেষ কর্মসূচিতে কোনও বক্তব্যই পেশ করেননি। শুধুমাত্র ওই কর্মসূচির প্রথম দিন যা ভাষণ দিয়েছিলেন। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির এহেন আচরণেই বিজেপি সাংসদদের একাংশের মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়েছিল। এমনকী, ৩৭০ ধারা রদের প্রস্তাব পেশের ২ দিন আগে সংসদে নিজের দফতর থেকেই সব কাজ সারছিলেন মোদী সেনাপতি।
আরও পড়ুন: বাতিল ৩৭০ ধারা, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
দলের এক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ, এই দু’জনই জানতেন। অন্যান্য শীর্ষমন্ত্রীরা পর্যন্ত টের পাননি কী হতে চলেছে। তাঁদের সুকৌশলে একটু একটু করে তথ্য জানানো হত। রবিবার গভীর রাতে বিলের খসড়া চূড়ান্ত করেছিলেন আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ। সূত্র মারফৎ এমনটাই জানা গিয়েছে। আর অন্য মন্ত্রীরা এই বড় পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। তার আগে পর্যন্ত দলের মন্ত্রীদেরও কিছু জানাননি শাহ। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য শীর্ষ মন্ত্রী ও দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন শাহ। সে সময় শাহ বলেছিলেন, সংসদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করা হবে তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: জম্মু কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার; কী রয়েছে নির্দেশে?
অন্যদিকে, প্রথম মোদী সরকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন রাজনাথ সিং। সে সময় পারষ্পরিক আলোচনার বাতাবরণের মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যু সমাধানের পথে হেঁটেছিলেন রাজনাথ। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করে সময় নষ্ট করতে চাননি শাহ। বরং দৃঢ় হাতে কাশ্মীর সমস্যা মোকাবিলা করার দিকে এগোলেন। শাহ বরাবরই মনে করেছিলেন যে, কাশ্মীর সমস্যা মোকাবিলায় একমাত্র হাতিয়ার ৩৭০ ধারা রদ। আর তা বুঝেই সেই চরম সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি মোদী সেনাপতি। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘উপত্যকায় যা পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাতে শাহর ভূমিকা রয়েছে। এটা ছিল ওঁর মিশন। উনি সফল হয়েছেন’’।
তবে এই মিশন সফল করার জন্য শাহকে পুরোদমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ৩৭০ ধারা রদের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে কাশ্মীরকে কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লার মতো হেভিওয়েট নেতাদের গৃহবন্দি করার মতো কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।
Read the full story in English