উনিশের সাফল্যের পর প্রথমবার বাংলায় পা রেখে এনআরসি বিতর্কে মুখ খুললেন অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে শাহ বললেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে মমতাদি মিথ্যাচার করছেন। উনি বলেছেন, লাখো লাখো হিন্দু শরণার্থীকে তাড়ানো হবে। আমি বলছি, কোনও হিন্দু শরণার্থীকে ভারত ছাড়া করা হবে না। বাংলায় একজনও হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান শরণার্থীদের এনআরসি করে বিতাড়িত করা হবে না। এজন্য দেশে আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হবে। তৃণমূল বিরোধিতা করলেও বিন আনা হবেই’’।
এ প্রসঙ্গে অমিত শাহ আরও বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে বাংলায় মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বিজেপি কর্মীদের বলছি, আপনারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝান মানুষকে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এজন্য নাগরিকত্ব বিল আনা হবে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানো হবেই’’।
নেতাজী ইন্ডোরে অমিত শাহের সভায় ভিড়। ছবি- জয়প্রকাশ দাস
অমিত শাহের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্ককে আরও উস্কে দিলেন অমিত শাহ। আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন অমিত শাহ। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর থেকে এই বক্তব্য আশা করা যায় না। ধর্মের নাম করে বলছেন, এঁদের কিছু হবে না, হিন্দুদের কিছু হবে না, শিখ, জৈন, বৌদ্ধদের কিছু হবে না। এই মন্তব্য কি সংবিধান অনুমোদন করে? বাংলার মানুষ অমিত শাহকে ক্ষমা করবেন না’’।
আরও পড়ুন: বাংলায় হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে তাড়াব: শাহ
এদিকে, মমতাকে নিশানা করে শাহ এদিন বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশ নিয়ে সংসদে সরব হয়েছিলেন মমতাই। যদি ভুলে যান, তাহলে পুরনো ফুটেজ দেখুন। অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক’’। অন্যদিকে, বাংলাবাসীর উদ্দেশে শাহ বলেন, ‘‘বাংলা সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছেন আপনারা। বিজেপিকে একবার সুযোগ দিন। ফের সোনার বাংলা গড়ব’’। একইসঙ্গে মোদী সেনাপতি বলেন, ‘‘মোদীর নেতৃত্বে বাংলায় বিজেপি সরকার গড়বে। লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসনে জিতিয়ে বঙ্গবাসী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা পরিবর্তন চান’’। এদিন নেতাজি ইন্ডোরে ভাষণের শুরুতে শাহ বলেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নপূরণ করেছেন মোদী। ৩৭০ ধারা রদ করা হয়েছে’’।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিয়েই শাহ-স্পর্শ সব্যসাচী দত্তের
এদিকে, দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজই শাহর হাত থেকে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিলেন তৃণমূলের সব্যসাচী দত্ত। এদিন, অমিত শাহকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি উপহার দেন দিলীপ ঘোষ। একদিকে, শাহর উপস্থিতিতে সব্যসাচীর দলবদল, অন্যদিকে, এনআরসি তরজার মধ্যে এদিনের সভা থেকে শাহর ভাষণ, সবমিলিয়ে পুজোর মুখে শাহের কলকাতা সফর ঘিরে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি।
আরও পড়ুন: বিধান ভবনে ‘আলিমুদ্দিন’, ইতিহাসে ‘প্রথমবার’!
নেতাজি ইন্ডোরে সভার পরে এদিন দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করার কথা মোদী সেনাপতির। দলীয় কাজ সেরেই এই প্রথমবার কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে সল্টলেক যাবেন শাহ। সন্ধ্যায় সল্টলেক বি জে ব্লক পুজোর উদ্বোধন করবেন অমিত শাহ। উনিশের সাফল্যের পর একুশের লড়াইয়ের আগে পুজো উদ্বোধনে শাহর উপস্থিতি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: কর্তারপুর উদ্বোধন: মনমোহন সিংকে আমন্ত্রণ পাকিস্তানের
তবে, শাহর পুজো উদ্বোধন ঘিরে উদ্যোক্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। সল্টলেক বি জে ব্লক পুজো কমিটির সম্পাদকের দাবি, অমিত শাহ পুজো উদ্বোধনে করবেন তা তিনি জানেন না। অন্যদিকে, পুজো কমিটির সভাপতি জানান, সবাইকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুজোর উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহই। পুজোয় রাজনীতির প্রবেশ ঘিরেই দ্বন্দ্ব চরমে। কর্তাদের একাংশ চান না পুজো ঘিরে রাজনীতি হোক।