দলবদলের গুঞ্জন ঠেকাতে সাংবাদিক বৈঠক করতে হয়েছিল মুকুল রায়কে। পরে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পর তিনি টানা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তার আগে সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্নে অবশ্য মুকুলবাবু কোভিড পরিস্থিতির কথা বলতেন। তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে নিয়ে দলবদলের চর্চা আপাতত বন্ধ। তবে তৃণমূলে কংগ্রেসে "দাদার অনুগামীরা" রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের কর্মসূচি জারি রেখেছে। বুধবারও সবংয়ে মাস্ক, স্য়ানিটাইজার, সাবান বিলি করেছেন "আমরা দাদার অনুগামীরা"। একইসঙ্গে বাইক মিছিলও হয়েছে। দাদার অনুগামীদের নিয়ে এখন জোর জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
দাদার অনুগামীরা এখন শুধু পূর্ব মেদিনীপুর বা জঙ্গলমহলে তাঁদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখেনি। রাজ্যের অন্যত্র তাঁরা যথেষ্ট সক্রিয়। এঁরা নিজেদের দাদার অনুগামী বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। গলায় শুভেন্দুর ছবি ঝোলানো। সেখানে লেখা "আমরা দাদার অনুগামী"। আবার ব্যানারেও শুভেন্দুর বড় ছবি, লেখা দাদার অনুগামী। সেখানে কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের নাম-নিশানা নেই। কেন এমন প্রচার? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নেতা মেনেই সামাজিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এই অনুগামীরা।
আরও পড়়ুুন- অভিমন্যুর মতো কি চক্রব্যূহে অর্জুন?
করোনা আবহে লকডাউন শুরু হতেই সামাজিক কার্যকলাপকেই হাতিয়ার করেছে এই অনুগামীর দল। জানা গিয়েছে, সরকারি বা দলীয় সাহায্যের বাইরে জঙ্গলমহল-সহ নানা জায়গায় শুভেন্দু অধিকারী নিজে উদ্যোগ নিয়ে ত্রাণ পাঠিয়েছেন। ত্রাণের বিলিবন্টণ নিয়ে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দায়িত্বভার পরিবর্তন করেছেন। সেই থেকেই শুভেন্দুর ছবি গলায় ঝুলিয়ে সামাজিক কর্মসূচি চলছে। ঝাড়গ্রামে সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির না থেকে হুল দিবসে বেসরকারি আনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শুভেন্দু। সেই সরকারি অনুষ্ঠানে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই ঘটনায় বিতর্ক দেখা দিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। এমনকী কোনও অনুষ্ঠানে নন্দীগ্রামের নায়ক গিয়েছেন সেখানকার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতিও টের পাননি। পরে শুনেছেন অন্যদের মুখে। এভাবেই নিজের সিদ্ধান্তে অনড় শুভেন্দু।
আরও পড়়ুুন- জলকামানে রাসায়নিকের ব্যবহার, রাজ্যের থেকে রিপোর্ট তলবের দাবিতে শাহকে চিঠি লকেটের
দলের মধ্যে থেকেও এই দাদার অনুগামীদের কর্মসূচি নিয়ে টু শব্দটি করছেন না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাধাও এসেছে এই অনুগামীদের কর্মসূচিতে। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন শুভেন্দু। তবে সেভাবে দলীয় ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজির থাকছেন না বলেই সূত্রের খবর। কিছু দিন আগেই দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শুভেন্দু, এই নিয়েও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। অথচ তিনি তখন নিজের বাড়িতেই ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু কেন দলে থাকা সত্বেও দাদার অনুগামীদের কর্মসূচি ক্রমশ বেড়ে চলেছে? এই নিয়ে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়়ুুন- মাথা পিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়াবে বাংলাদেশ, মোদীকে কটাক্ষ রাহুল-অভিষেকের
তৃণমূলের নতুন রাজ্য কমিটিতে এককভাবে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি শুভেন্দু অধিকারীকে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, চাপ বাড়ানোর রাজনীতি বলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে নিজের জোর কতটা তা বোঝানোর বিষয়টাও থেকে যায়। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তবুও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নামলে মানুষের ঢল নামে। দলের অন্দরমহলের চর্চায় এটাও স্পষ্ট জনপ্রিয়তার বিচারে দ্বিতীয় নামটা শুভেন্দু অধিকারী। সেক্ষেত্রে দাদার অনুগামীদের রাজ্যের সর্বত্র বিস্তার লাভের চেষ্টা বাংলার রাজনীতিতে নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই রাজনীতির কারবারিদের বদ্ধমূল ধারণা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন