Advertisment

পুরনো ছকেই আস্থা তৃণমূলের, এবার জেলায় জেলায় কো-অর্ডিনেটর

পর্যবেক্ষক প্রথা ফিরিয়ে আনেনি তৃণমূল। বরং সংগঠন ঢেলে সাজানোর সময় ঘোষণা করা হয়েছিল স্থানীয় নেতৃত্বই জেলার দায়িত্বে থাকবে।

author-image
Joyprakash Das
New Update
announcement of the post of coordinator in tmc

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক ব্যানার্জী।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০-তে জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক প্রথা তুলে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও পর্যবেক্ষক প্রথা ফিরিয়ে আনেনি তৃণমূল। বরং সংগঠন ঢেলে সাজানোর সময় ঘোষণা করা হয়েছিল স্থানীয় নেতৃত্বই জেলার দায়িত্বে থাকবে। জেলার সংগঠনে বাইরে থেকে কেউ নাক গলাবে না। পরবর্তীতে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নিয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও সেই নীতির শিথিলতাও দেখা গিয়েছে বিগত কলকাতা পুরনির্বাচনে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ফের জেলায় জেলায় কো-অর্ডিনেটরদের নাম ঘোষণা করায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে পুরনো পর্যবেক্ষক প্রথার কথা।

Advertisment

২০২০-জুলাইতে তৃণমূলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই রাজ্য স্তরে তৃণমূল ও যুব কমিটি ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে জেলাস্তরেও পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ঘাসফুল শিবির। জেলায় জেলায় অবলুপ্তি ঘটেছিল পর্যবেক্ষক প্রথার। কলকাতা থেকে নয়, জেলার নেতারাই স্থানীয় স্তরে দলের দায়িত্ব সামলাবেন। তখন বেশ কয়েকটি জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, দলের ওই সিদ্ধান্তে শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর গোঁসা হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা ছিল শুভেন্দুর ক্ষমতা খর্ব করতে পর্যবেক্ষক প্রথাই তুলে দিল ঘাসফুল শিবির। পরবর্তী বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তি ও দলের প্রকাশ্য় কোন্দলের মধ্যেই এবার পুরনির্বাচনে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কী সংগঠনের পুরাতন পর্যবেক্ষকপ্রথা ফিরিয়ে আনতেই নতুন করে এই কোঅর্ডিনেটর প্রথা চালু করল দল?

রাজনৈতিক মহলের মতে, কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করার ক্ষেত্রেও নানা ইক্যুয়েশন মাথায় রেখেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কোনও ক্ষেত্রে দলের স্থানীয় নেতৃত্বকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলক রায়কে হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুরসভা নির্বাচনে দুজন কো-অর্ডিনেটর রয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পার্থ ভৌমিক। পশ্চিম মেদিনীপুরে স্থানীয় দুই শীর্ষ নেতৃত্বকে দল দায়িত্ব দিয়েছে, অজিত মাইতি ও মানস ভুঁইয়াকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অরুপ বিশ্বাস ও শুভাশিস চক্রবর্তী দায়িত্ব পেয়েছেন। একসময় ঝাড়গ্রামের পর্যবেক্ষক ছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবারও ঝাড়গ্রামে অ-অর্ডিনেটর মহাসচিব।

আবার উল্লেখযোগ্যভাবে মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর, তিন জেলায় দায়িত্ব পেয়েছেন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নদিয়ায় রাণাঘাটের সাংসদ রয়েছেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। এছাড়া এই জেলায় বেশ কয়েকজন গেরুয়া শিবিরের বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তিনজন কো-অর্ডিনেটরকে দায়িত্ব দিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার মধ্যে রয়েছে দুই মন্ত্রী ও এক সাংসদ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুখেন্দু শেখর রায় ও বাত্য বসুকে করা হয়েছে নদিয়ার কো-অর্ডিনেটর। বর্ধমান পশ্চিমের পোড়খাওয়া তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী মলয় ঘটককে দেওয়া হয়েছে পাশের জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতে। তবে উত্তরবঙ্গের পর্যবেক্ষেক হিসাবে সেখানকার মাত্র দুই নেতার ওপর ভরসা রেখেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দার্জিলিংয়ের কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে গৌতম দেব ও জলপাইগুড়িতে দায়িত্ব পেয়েছেন সৌরভ চক্রবর্তী। বীরভূমের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও কো-অর্ডিনেটর এদিন নিয়োগ করেনি দল। অনুব্রতেই ভরসা দলের।বাকি জেলাগুলিতে কলকাতা কেন্দ্রীক নেতাকে কো-অর্ডিনেটর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, তুলনামূলক ভাবে উত্তরবঙ্গে লোকসভার ফলাফলের পর বিধানসভা নির্বাচনে কিছুটা সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছিল বিজেপি।

রাজনৈতিক মহলের মতে, পর্যবেক্ষকের কথা না বলে কো-অর্ডিনেটর ঘোষণা করলেও কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই কলকাতা বা অন্য জেলার নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বর্তেছে। এখন দেখার বিষয় 'এক পদ এক নীতি' প্রথা ভাঙার পর পর্যবেক্ষক প্রথাও দল ফিরিয়ে আনে কীনা।

tmc Mamata Banerjee abhishek banerjee West Bengal Municipal Election
Advertisment