জয়প্রকাশ দাস
২০১৯ লোকসভা নির্বাচন নিয়ে মহড়া শুরু হয়েছে সরকার এবং বিরোধী জোটের মধ্য়ে। এনডিএ জোটে সামান্য় ফাটল ধরলেও তা মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অন্য়দিকে বিজেপি বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কে থাকবে? লীড করবে কোন দল? তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। কংগ্রেসের নেতৃত্ব ছাড়া বিরোধী জোট যে হালে পানি পাবে না তা একপ্রকার পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। দেশ ব্য়াপী একের বিরুদ্ধে এক এই ফর্মূলা আদৌ সম্ভব কী না তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের নিয়ে একমাত্র কংগ্রেসের নেতৃত্বেই জোটবদ্ধ লড়াই সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রবীণ রাজনীতিক সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়। এক সাক্ষাৎকারে লোকসভার প্রাক্তন অধ্য়ক্ষ বলেন, "আগামী লোকসভা নির্বাচনে বেগ পাবে বিজেপি। বৃহত্তম দল কংগ্রেস জোটের নেতৃত্বে থাকলে জোট সফল হবে। বিজেপি চেষ্টা চালাবে বিরোধী জোট ভাঙার।"
বিজেপি এবারেও নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখেই লোকসভার ভোট প্রচারে নামবে। কিন্তু বিরোধীদের ক্ষেত্রে সেই সমস্য়া রয়েছে। একমাত্র কংগ্রেস নেতৃত্ব দিলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাহুল গান্ধির নাম উঠে আসবে। সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায় মনে করেন, "কংগ্রেস যেহেতু বৃহত্তম দল, ওরাই প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবে। এখানে কোনও হস্তক্ষেপ চলবে না।"এর কোন বিকল্প নেই বলে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য়।
এ দেশে কোয়ালিশন সরকারের ভগিরথ জ্য়োতি বসু। তিনি পার্টিকে মোল্ড করেছিলেন। টানা ২৩ বছর ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রী। ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয়েছিল বাংলা কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রী হয়েছিলেন অজয় মুখোপাধ্য়ায়। জ্য়োতি বসু হয়েছিলেন উপমুখ্য়মন্ত্রী। কিন্তু তখন বামেদের আসন বেশি ছিল বাংলা কংগ্রেসের চেয়ে। সেই সরকার বেশি দিন টেকেনি। এমন বহু উদাহরণ আছে, যেখানে জোট সরকারে বৃহত্তম দল নেতৃত্ব না দিলে সেই সরকার বেশি দিন টেকে না।
আরও পড়ুন: মমতাসহ চার মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকের সাক্ষী রইল দিল্লি
কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় মোর্চা সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনতা দলের ভিপি সিং। কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম ছিল ওই সরকারের ভিত্তি। ভিপি সরকারেক সমর্থন দিয়েছিল একদিকে বিজেপি, অন্য়দিকে সিপিএম। আদর্শহীন ওই সরকারও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এইচ ডি দেবেগৌড়া, আই কে গুজরাল, চন্দ্রশেখররা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এঁদের দল অনেক কম সংখ্য়ক আসন পেয়ে ক্ষমতা পেয়েছিল। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল। পাঁচ বছর দূরের কথা, এক বছরের মধ্য়েই কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল এঁদের সরকার।
বাস্তবে দেখা গিয়েছে বড় দলের সরকার জোটের নেতৃত্বে থাকলে সেই সরকার স্থায়ী হয়। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস মিলিজুলি সরকার গড়েছিল নরসিমহা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে। সেই সরকার পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। তারপর ২০০৪ সালেও কংগ্রেস একক সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু মনমোহন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জোট সরকারের। সেই সরকারও পূর্ণ করেছিল মেয়াদ। ২০০৯ সালে ফের একক বৃহত্তম দল হয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু সরকার গড়তে সেই জোটের ওপরই ভরসা করতে হয়েছিল। বামেরা সমর্থন করেছিল এই সরকারকে, পরে পরমানু চুক্তির বিরোধিতা করে সমর্থন তুলেও নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও আস্থা ভোটে জয় পেয়েছিল সরকার।